ছোট বাচ্চাদের অতিরিক্ত রাগ অনেকসময় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে তারা অন্যের এমনকি নিজেরও ক্ষতি করে বসতে পারে। সে এখন অবুঝ আর তার অতিরিক্ত রাগের বহিঃপ্রকাশ যে কতটা ক্ষতি সাধন করছে, সে সেটা অনুধাবন করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে আপনাকে এই সময়টা বাচ্চার প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। তার সকল প্রয়োজন পূরণে এবং তার রাগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সে যেন আপনার সাপোর্টে থেকে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সাবলীল ভাবে বেড়ে উঠে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুর টেম্পার ট্যান্ট্রাম (Temper Tantrum) বা অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে? জেনে নিন:
১। প্রাত্যহিক রুটিন মেনে চলতে চেষ্টা করুন
শিশুর প্রাত্যহিক রুটিন মেনে চলতে চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখুন বাচ্চার কখন ক্ষুধা লাগছে, সে কখন ক্লান্তিবোধ করছে। তার খাওয়া, ঘুম, বিনোদন ইত্যাদি যেন সময়মতো হয়। সবকিছু নিয়মমতো চললে বাচ্চার মেজাজ ঠিক থাকবে। যার ফলে সে অযথা রাগান্বিতও হবে না।
২। বেছে নিতে সুযোগ দিন
বাচ্চার জন্য কিছু অপশন রাখুন এবং তার মতামতকে প্রাধান্য দিন। তাকে তার পছন্দের জিনিস বেছে নেওয়ার সুযোগ দিন। যেমন: তাকে বলুন যে, তুমি কি খাবে কমলা না আপেল? কিংবা কোন ড্রেস কেনার ক্ষেত্রে, কোন রঙের নিবে লাল না নীল? এভাবে অপশন রাখলে বাচ্চা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে।সে মনে মনে প্রশান্তি-বোধ করবে এবং জেদ করবে না।
৩। মনোযোগ অন্য দিকে সরাতে চেষ্টা করুন
যখন দেখবেন আপনার সন্তান কোন ব্যাপার নিয়ে রেগে যাচ্ছে, তখন চেষ্টা করুন তার মনোযোগ অন্য কোন দিকে সরাতে। তাকে কোন খেলনা বা কার্টুন দেখিয়ে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করুন, যাতে তার মন অন্য দিকে ঘুরে যায়। এছাড়াও যখন বুঝবেন সে রেগে যাচ্ছে, তখন পারলে মজার কিছু করে তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন। যেমন: তার প্রিয় টেডি বিয়ারটা নিয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো কণ্ঠে বলুন- লক্ষ্মীসোনা তোমার বন্ধু এখন তোমার সাথে খেলতে চাচ্ছে, তুমি কি এখন তার সাথে খেলবে?
৪। বাচ্চাকে বেশি করে সময় দিন
অনেকসময় ছোট বাচ্চারা অধিক মনোযোগ, আদর-স্নেহ চায়। আর তাইতো অধিক মনোযোগের আশায় জেদ করে কিংবা কান্নাকাটি করে। সুতরাং বাচ্চার প্রতি মনোযোগী হোন, তাকে বেশি করে সময় দিন। তার প্রয়োজনগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন এবং তার ক্ষেত্রে অধিক যত্নশীল হোন। তাকে নিয়ে মুক্ত পরিবেশে ঘুরতে-বেড়াতে যান। সর্বোপরি তার বেড়ে উঠাকে আনন্দময় করে তুলুন।
৫। সরাসরি স্পষ্টভাবে কথা বলুন
ছোট বাচ্চাকে বিভ্রান্ত করে এমন কোন কথা বলবেন না । যখন আপনি কি বলতে চাচ্ছেন তা বুঝতে পারে না, তখন ক্ষেপে যায় এবং অতিরিক্ত রাগ দেখায়। আবার অনেকসময় নিজের মনের ভাবও ভালভাবে প্রকাশ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে বুঝতে চেষ্টা করুন সে কি বলতে বা বোঝাতে চাচ্ছে। যদি তার কথা বুঝতে না পারেন, তাহলে তখন তার মন অন্য কোন দিকে সরাতে চেষ্টা করুন।
৬। অনেকসময় রাগ ইগনোর করুন
অনেকসময় শিশুরা কোন কিছু নেওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে। ধরুন যে টিভি দেখার সময় সে রিমোট নেওয়ার জন্য জেদ করলো। কিন্তু রিমোট হাতে দিলে সে সেটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে রিমোটটা তার নাগালের বাইরে রাখুন। সেক্ষেত্রে সে কান্নাকাটি শুরু করলে পাত্তা না দিতে চেষ্টা করুন। কারণ এতে সে সফল হলে তা একসময় তার ব্ল্যাকমেলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। যখন যা চায় তাই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। কাঁদলেই সব কিছু পাওয়া যায় না, তা তাকে বুঝতে দিন।
৭। একই কথা বার বার বলে বোঝান
আপনার সন্তান যখন রেগে যাবে তখন তাকে একই কথা বার বার বলে শান্ত করতে চেষ্টা করুন। আর কখনোই তার সাথে সমবয়সী অন্য কোন বাচ্চা দেখিয়ে তুলনা করতে যাবেন না। যেমন- আমরা অনেকসময় বলে থাকি যে ওই বাবুটা কত্ত লক্ষ্মী আর তুমি একটা পচা। এতে সে কষ্ট পাবে এবং মনে ঈর্ষাভাবের জন্ম নিবে। তারচেয়ে বরং তাকে আদর করে প্রশংসামূলক কথা বলে ভাল আচরণ করতে উৎসাহী করে গড়ে তুলুন।
৮। রাগ কমাতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করুন
আপনার সন্তান যখন এই ধরণের আচরণ শুরু করবে তখন তাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে চেষ্টা করুন। আবার ধরুন যে, সে বাসায় আগত কোন অতিথির সামনে এই রকম আচরণ শুরু করে দিল তখন তাকে ঠাণ্ডা করতে অন্য রুমে নিয়ে যান। ভুলে কারো সামনে বাচ্চাকে বকা দিবেন না বা গায়ে হাত তুলবেন না। ছোট বাচ্চারা অনেক সংবেদনশীল আর তাদেরও অপমান বোধ আছে। সুতরাং এই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।
৯। শিশুকে ব্যস্ত রাখুন
আপনার বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করুন। তাকে ছবির বই দেখিয়ে মজার মজার ছড়া, গল্প পড়ে শোনান। তার সাথে খেলা করুন, সর্বোপরি তার সাথে একজন শিশু হয়েই মিশুন। তাকে অন্য বাচ্চাদের সাথে মেশার বা খেলার সুযোগ করে দিন। তার দ্বিধা ভাঙ্গাতে বা অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে সাহায্য করুন।
১০। বাচ্চার মন বুঝতে চেষ্টা করুন
মা-বাবারা এমনিতেই সন্তানের মন বুঝতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চা যখন কোন কথা বা বিষয় একেবারেই বুঝতে পারছে না। তখন সেক্ষেত্রে তাকে সে বিষয়ে নিষেধ করেও কোন লাভ নেই। তাকে এটা নিও না, ওটা ধরোনা, ওখানে যেও না ইত্যাদি যত কম বলা যায় ততই ভাল। বরং তাকে যাতে সবকিছুতে নিষেধ না করেই আওতার মাঝে রাখা যায় সে চেষ্টা করুন।
১১। বিপদজনক বস্তু হাতের নাগালের বাইরে রাখুন
আপনার ঘরকে নিরাপদ ও আরামদায়ক করে তুলুন। আপনার সন্তান এখন অবুঝ। কোনটা তার জন্য বিপদজনক, সে সেটা এখন বুঝে উঠতে পারেনা। সুতরাং তার হাতের নাগাল থেকে বিপদজনক জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলুন। আর তাতে আপনার বারবার সব কিছুতে না বলতে হবে না।
১২। আপনি নিজে শান্ত থাকুন
আপনার সন্তান যখন ক্ষেপে যাবে আপনি তখন মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। ধৈর্য ধরে তাকে সামলাতে চেষ্টা করুন। অনেকসময় হয়তো এই আচরণে বিরক্ত হয়ে রেগে যেতে পারেন। কিন্তু যদি ওর রাগের বিপরীতে আপনিও রেগে গিয়ে বকা বা শারীরিক শাস্তি দেন, তাতে সমাধান কিছুই হবে না। বরং তাতে তার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে জেদ আরও বেড়ে যেতে পারে।
টেম্পার ট্যান্ট্রাম (Temper Tantrum) বা অতিরিক্ত রাগ কমাতে শাসন নয় বরং এই বিষয়গুলো মেনে চলুন। ধৈর্য ধরে স্নেহের পরশ দিয়ে বাচ্চাকে আয়ত্তে রাখতে চেষ্টা করুন। তার শৈশবকে সাবলীল ও আনন্দময় করে তুলুন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
3,209 total views, 2 views today