Show Categories

আপনার সন্তানের অদ্ভুত মানসিক রোগ ক্লেপটোম্যানিয়া নেইতো?

ক্লেপটোম্যানিয়া

ক্লেপটোম্যানিয়া এক ধরণের মানসিক রোগ। যা মানুষকে চুরি করতে তাড়না দেয়। তবে ক্লেপটোম্যানিয়ার প্রভাবে চুরি করা আর স্বাভাবিক চুরি এক নয়। স্বাভাবিক চুরিতে যিনি চুরি করেন উনার একটা উদ্দেশ্য থাকে। কেউ অভাবের তাড়নায় চুরি করেন, কেউ প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে, কেউবা করেন কারো ক্ষতি করার জন্য। কিন্তু ক্লেপটোম্যানিয়ার প্রভাবে যারা চুরি করেন উনাদের এমন কোন উদ্দেশ্যই থাকে না। সোজা বাংলায় ক্লেপটোম্যানিয়া মানে উদ্দেশ্য ছাড়াই চুরি করা। এই রোগে আক্রান্ত মানুষ কোন বস্তু দেখলে সেটা চুরি করার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকেন, বস্তুটি খুবই কম দামি কিংবা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় হলেও। চুরি করতে না পারা পর্যন্ত রোগী খুবই অস্বস্তিতে ভোগেন। চুরি সম্পন্ন করতে পারলে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। কিন্তু স্বাভাবিক চুরির সাথে এই চুরির পার্থক্য হলো, এনারা চুরি করা বস্তু নিজে ব্যবহার করেন না, বিক্রিও করেন না। হয় কাউকে দিয়ে দেন না হয় ফেলে দেন কিংবা চুরি করা বস্তুটি গোপনে সঠিক জায়গায় ফেরত দিয়ে দেন। যদিও ক্লেপটোম্যানিয়া রোগের এখনো কোন স্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, মস্তিষ্কে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কম-বেশি হওয়ার কারণে এই সমস্যা হতে পারে। একজন মানুষের বেড়ে উঠার সময়ে আচরণগত ও ধারণাগত বিবর্তনের কারণে এমনটা হতে পারে। শিশু কিশোররা মাঝে মাঝে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার বা আচরণগত মানসিক সমস্যার কারণে চুরি করে থাকে যা ক্লেপটোম্যানিয়া থেকে আলাদা। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে শিশু কিশোরদের কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার প্রতিরোধ না করলে তার মাঝে ধীরে ধীরে ক্লেপটোম্যানিয়া প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

আসুন জেনে নিই, শিশুরা কেনো  না বলে কিছু নিয়ে নেয়? এবং শিশুদেরকে ক্লেপটোম্যানিয়ার প্রভাব থেকে রক্ষা করার কিছু উপায়।

শিশুরা কেনো গোপনে কিছু নিয়ে নেয়?

  • শিশুদের পছন্দের কোন বস্তু বিশেষ করে খেলনা, যদি সে না পায় তাহলে সে অন্যকারো খেলনা গোপনে নিয়ে আসতে পারে।
  • দামি কোন বস্তু শিশুদের পছন্দ হলে সে যদি বুঝতে পারে বস্তুটা পাওয়ার মতো সামর্থ্য বাবা-মার নেই অথবা সে বাবা-মাকে বলতে ভয় পাচ্ছে সেক্ষেত্রেও শিশুরা অন্য কারো সেই বস্তু লুকিয়ে নিয়ে আসতে পারে।
  • অসৎ সঙ্গের কারণেও শিশুর মাঝে এমন আচরণ দেখা যায়। স্কুলে অথবা সমবয়সী কোন বাচ্চার যদি এমন সমস্যা থাকে তাহলে তার সাথে মেশার ফলেও শিশু এমন আচরণ করতে পারে।
  • শিশুরা যদি বাবা-মা অথবা শিক্ষকদের মনোযোগ কম পায় সে ক্ষেত্রেও সে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এমন আচরণ করতে পারে।
  • অন্যান্য শিশুদের সাথে স্রেফ মজা করার ছলে শিশু এমন অদ্ভুত আচরণ করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা এমন কিছু লুকিয়ে নিয়ে আসে যেটা তার প্রয়োজন নাই।

শিশুর ক্লেপটোম্যানিয়া (লুকিয়ে কিছু নিয়ে আসা) প্রতিরোধ করার উপায়

শিশুর সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে হবে

শিশুর সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটানোর ফলে শিশুর বিভিন্ন আচরণ, শরীরি ভাষা পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে শিশুর মাঝে আপত্তিকর কোন আচরণ থাকলে বাবা-মা তা বুঝতে পারেন। শিশুর মাঝে লুকিয়ে কিছু নিয়ে আসার মতো কোন আচরণ দেখা গেলে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে আচরণগুলো ঠিক করা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটানো শিশুদের নৈতিকতাবোধ ভালো থাকে।

শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে

শিশুদের লুকিয়ে নিয়ে আসা বস্তুর মধ্যে খেলনার আধিক্যই বেশি। গোপনে অন্য কারো খেলনা নিয়ে আসার প্রবণতা কম-বেশি সব শিশুর মাঝেই দেখা যায়। এটার প্রধান কারণ শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব না দেয়া। শিশু তার পছন্দের বস্তু না পেলে ওই বস্তুর প্রতি তার একটা আকাঙ্খা কাজ করে। পরবর্তীতে অন্য কোথাও সে একই বস্তু পেলে সেটা লুকিয়ে নিয়ে আসতে পারে। সেজন্যই শিশুর খেলনাসহ যাবতীয় কেনাকাটার ক্ষেত্রে তার পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বস্তুর মালিকানা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে

শিশুদের মাঝে অন্যের খেলনা নিজের দাবী করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সেজন্য শিশুদের বস্তুর মালিকানা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তার জন্য কেনা খেলনাটির মালিক যেমন সে তেমনি তার কাজিনের জন্য কেনা খেলনাটির মালিক তার কাজিন। তার খেলনাটি তার কাজিন নিয়ে গেলে যেমন তার খারাপ লাগবে তেমনি তার কাজিনের খেলনাটি সে নিজের দাবী করলে তার কাজিনেরও খারাপ লাগবে। শিশুকে এইসব ধারণা দিলে তার ভেতর লুকিয়ে কোন কিছু নিয়ে আসার প্রবণতা কমবে।

অনুমতি নেয়া শেখাতে হবে

অনুমতি নেয়ার চর্চা শিশুর মাঝে নৈতিকতাবোধ জন্ম দেয়ার পাশাপাশি ক্লেপটোম্যানিয়া প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। নিজের ব্যতিত অন্য কারো খেলনা বা অন্য কারো বস্তু নিতে হলে অনুমতি নিতে হয়, শিশুকে এই ধারণা দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশু তার বন্ধু বা কাজিনের খেলনা নিয়ে এসেছে কিন্তু লুকিয়ে আনা তার উদ্দেশ্য ছিলো না। এসব ক্ষেত্রে তাকে ধারণা দিতে হবে; কারো খেলনা ধরার আগে সে যেনো খেলনার প্রকৃত মালিকের অনুমতি নেয়।

কোন বস্তু লুকিয়ে নিয়ে আসার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে

শিশু কোন বস্তু লুকিয়ে নিয়ে এসেছে? এটা নিয়ে বেশি চিন্তিত না হয়ে কেনো লুকিয়ে এনেছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। ধরা যাক, আপনার সন্তানের টেডি বিয়ার থাকা সত্ত্বেও সে আরেকজনের টেডি বিয়ার লুকিয়ে নিয়ে এসেছে! কেনো এনেছে সে কারণ খুঁজে বের করুন। দেখা যাবে তার টেডি বিয়ারটির কালারের চেয়ে তার কাছে অন্য কালার পছন্দের ছিলো। এক্ষেত্রে যদি আপনি তার জন্য খেলনা কেনার সময় তার পছন্দের কালারকে গুরুত্ব দিতেন তাহলে সে এমন আচরণ করতো না। এভাবে মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিশু যেনো নিজে কোন কিছু না নেয়

আপনার সন্তান স্কুলে যাওয়ার সময় আপনার কাছে ১০ টাকা চাইলো। আপনি তাকে বললেন, আপনার ব্যাগ থেকে নিয়ে নিতে! পরের দিন হয়ত আপনার সন্তান আপনাকে জিজ্ঞেস না করেই ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে নিবে। এই অভ্যাস একসময় ক্লেপটোম্যানিয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিবে। এজন্য সব সময় চেষ্টা করুন সন্তানকে আপনার মাধ্যমে টাকা দিতে। একই চর্চা কেনাকাটা করতে যাওয়ার বেলায়ও করতে হবে। শিশু যেনো নিজে থেকে কোন কিছু না নেয়। তার পছন্দ আপনাকে জানালে আপনি নিয়ে দিন।

শিশুর নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর দিকে নজর দিতে হবে

অনেক সময় সন্তান গোপনে কিছু নিয়ে আসলেও বাবা-মা সেটা টের পান না। ধরুন, আপনার সন্তান লুকিয়ে কারো খেলনা নিয়ে এসেছে, এনে সে দিব্যি খেলছে। আপনি বুঝতেও পারলেন না, তার এমন আচরণ প্রতিরোধে কাজও করতে পারলেন না। সেক্ষেত্রে আপনার সন্তানের খেলনাগুলোর দিকে নিয়মিত নজর দিয়ে নতুন কোন খেলনা খুঁজে পেলে (যেটা আপনি তাকে কিনে দেননি) সেই খেলনার উৎস সম্পর্কে তার কাছে জানতে চান। কারো খেলনা লুকিয়ে এনে থাকলে সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

শাস্তি না দিয়ে ভালোবেসে বুঝিয়ে বলতে হবে

সন্তান কারো খেলনা লুকিয়ে এনেছে; এটা বাবা-মার জন্য অনেক বিব্রতকর ইস্যু। কিন্তু তাই বলে রাগের মাথায় সন্তানকে শাস্তি দেয়া যাবে না। তাকে সুন্দর করে পাশে বসিয়ে লুকিয়ে কারো খেলনা নিয়ে আসা একটা লজ্জাজনক বিষয় এটা বুঝিয়ে বলতে হবে। লুকিয়ে আনা বস্তুটি সে সহ সঠিক মালিকের কাছে ফেরত দিয়ে তাকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলতে হবে। শিশুদেরকে শাস্তি না দিয়ে ভালোবাসা দিলে তাদের আচরণ পরিবর্তনে অনেক বেশি কার্যকরী ফল পাওয়া যায়।

শিশুর ক্লেপটোম্যানিয়ার প্রবণতা খুব চিন্তিত হওয়ার মতো কোন সমস্যা নয়। শিশুর দিকে একটু নজর দিলেই ক্লেপটোম্যানিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আরো জানতে পড়ুন-ডিসলেক্সিয়া; যে রোগের কারণে সন্তান পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

তথ্যসূত্র-momjunction, onlymyhealth, askdrsears

 1,649 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment