Show Categories

সন্তানের হাতে কখন তুলে দিবেন ব্যক্তিগত মোবাইল? 

ব্যক্তিগত মোবাইল

একটু বড় হলেই সন্তানের প্রথম বায়না থাকে একটা স্মার্টফোন। আর হাতে একটা স্মার্টফোন মানে সারা দুনিয়া হাতের মুঠোয়। গেম, ইন্টারনেট মিলিয়ে একটা স্মার্টফোন মানে এক বিশাল রঙিন জগৎ। যেখানে ভালোর সাথে সমান তালে থাকে বেতাল হওয়ার সম্ভাবনাও। আর স্বভাবতই নিষিদ্ধ বা নেতিবাচক দিকের প্রতি টিনএজারদের আকর্ষণও থাকে একটু বেশি। ফলে স্মার্টফোনের ফ্যান্টাসির জগতটিই থাকে তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও আরাধ্য। কিন্তু একটা সময়ে এসে সন্তানকে একটা ফোন দেয়ার তো দরকার হয়েই যায়! আবার এও ভাবতে হয়, স্মার্টফোনের জগৎ নিয়ন্ত্রণ করার মতো বোধ ও পরিপক্বতা তার মাঝে আছে কি না? আমরা আজকের ব্লগে জানবো ঠিক কখন সন্তানের হাতে একটা ব্যক্তিগত মোবাইল তুলে দেয়া নিরাপদ। স্মার্টফোন দেয়ার আগে কী কী বিষয় নিয়ে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে ভাবতে হবে।

সন্তানকে ব্যক্তিগত ফোন কখন দেবেন

সাধারণত কলেজে উঠলে মানে ১৪-১৫ বছর বয়সের টিনএজাররা স্মার্টফোনের জন্য বায়না ধরে। বন্ধুদের সাথে সহজে যোগাযোগ করা, স্যারের নোট নেয়া কিংবা সে যখন বাসার বাইরে থাকে তখন তার সাথে আপনার যোগাযোগের জন্যও একটি মোবাইলের দরকার হয়েই যায়। সাধারণত ১৪-১৫ বছর বয়সে সন্তানের হাতে ব্যক্তিগত মোবাইল দেয়ার ব্যাপারেও অনেকে মত দেন।  তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের একটি গবেষণায় বলেছে, বয়সের উপর ভিত্তি করে সন্তানকে ব্যক্তিগত মোবাইল দেয়ার চেয়ে তার পরিপক্বতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে মোবাইল দেয়া উচিত।

এক্ষেত্রে সন্তানকে ব্যক্তিগত মোবাইল দেয়ার ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে নিজে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। সেসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর যদি আপনার মনে হয় সন্তানকে মোবাইল দেয়া উচিত তাহলে তাকে আপনি মোবাইল  দিতে পারেন।

  • আপনার সন্তানের ফোন কেন দরকার? শুধুই যোগাযোগ নাকি ডিজিটাল মাধ্যমটির সুবিধা নেয়া? শুধুই যোগাযোগ হলে সাময়িকভাবে শুরুতে আপনি তাকে স্মার্টফোন না দিয়ে ফিচার ফোন দিতে পারেন। আর স্মার্টফোন দেয়ার আগে তার প্রয়োজনীয়তাও বিবেচনা করবেন।
  • আপনার সন্তানের স্কুলে মোবাইল নেয়ার অনুমতি আছে কি না?
  • আপনার মোবাইলের প্রতি তার আকর্ষণটা আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে কি না? সে প্রয়োজনের সময় ফোন রেখে নিজের কাজ করে কি না? যদি আসক্তির পর্যায়ে চলে যায় তাহলে আগে সে আসক্তি দূর করার চেষ্টা করুন।
  • আপনার সন্তান একটা ব্যক্তিগত মোবাইল বহন করার মতো কতটা দায়িত্বশীল বা যত্নশীল? হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা আছে কি না?
  • আপনি তাকে মোবাইল ব্যবহারের সীমারেখার মধ্যে রাখতে পারবেন কি না?
  • আপনি নিয়মিত সন্তানের মোবাইল চেক করতে পারবেন কি না? একটা বয়স পর্যন্ত সে মোবাইল দিয়ে কী করছে? মোবাইলের কোন নেতিবাচক ব্যবহার করছে কি না? তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন কোন কাজ করছে কি না? এই বিষয়গুলোর প্রতি আপনি নজর রাখতে পারবেন কি না?
  • সাইবার বুলিং সম্পর্কে আপনার সন্তান যথেষ্ট সচেতন কি না?
  • ইন্টারনেটে কোন ধরণের ছবি ও তথ্য শেয়ার করবে, কোনগুলো করবে না; ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার সন্তানের স্পষ্ট ধারণা আছে কি না?

এইসব প্রশ্নের উত্তর যদি আপনার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়, যদি মনে হয় এবার সন্তানকে একটা ব্যক্তিগত মোবাইল দেয়াই যায়; তাহলে আপনি আপনার সন্তানকে একটা স্মার্টফোন অথবা ফিচার ফোন দিতে পারেন।

সন্তানকে ব্যক্তিগত ফোন দেয়ার পর যে বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন

আপনি যখন সন্তানকে একটি স্মার্টফোন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন সাথে সাথে স্মার্টফোনের রঙিন জগৎ থেকে তাকে রক্ষা করার দিকেও আপনাকে সমানভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন।

  • মোবাইলের পাসওয়ার্ড যেন আপনার জানা থাকে।
  • কোন ধরণের ক্ষতিকর কিছুর সম্ভাবনা দেখলে কিংবা সে মোবাইলকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করলে তাকে ভালো-মন্দ ভালো ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করুন। একই ভুল বারবার করলে মোবাইল ফিরিয়ে নিবেন।
  • মোবাইল ব্যবহারের একটা সীমা ঠিক করে দিবেন। মোবাইল কোনভাবে তার স্বাভাবিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে কি না, মোবাইলের প্রতি তার আকর্ষণটা বেশি হয়ে যাচ্ছে কি না; এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন। তবে আপনি যদি প্রতিদিন মোবাইল ব্যবহারের একটা সীমা ঠিক করে দিতে পারেন তাহলে সে নেতিবাচক ভাবে ফোন ব্যবহারের তেমন সুযোগ পাবে না।
  • খাওয়ার সময়, পড়ার সময় ও ঘুমানোর সময় যেন সে মোবাইলে আসক্ত না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
  • ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে সাইবার সেফটি, সাইবার বুলিং ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দিন। তার সাথে আলোচনা করুন। কোন ধরণের পোস্ট শেয়ার করবে, কোন ধরণের পোস্ট করবে না; ইত্যাদি বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিয়ে রাখুন। মাঝে মাঝে তার ফোন ও অনলাইন কার্যক্রম নিয়ে গল্পও করতে পারেন।

অনেকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা বলবে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে সন্তানের প্রতি আপনার কিছু নজরদারি তার নিরাপত্তার খাতিরেই দরকার। এই বিষয়টি সন্তানকেও বুঝিয়ে বলতে পারেন।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,505 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment