১,২,৩ গুণেই সন্তান চলে যায় ৮-এ। বই, খাতা, কলম নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করেও যোগটা শেখাতে পারছেন না! সন্তানের উপর বিরক্ত হয়ে ভাবছেন, এই বোকাটিকে দিয়ে কী হবে! সামান্য যোগ অংকটাই বুঝতেছে না! রেগে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে তার উপর রাগও দেখাচ্ছেন! এবার একটু থামুন! বই খাতা রেখে নিচের ব্লগটি পড়ে নিন। আশা করছি আপনার সমাধান পেয়ে যাবেন! সন্তানকে শেখানোর ক্ষেত্রে আমরা সবসময় বই-খাতা-কলম নিয়ে পড়ে থাকি। একটা ছোট্ট শিশুর জন্য এটা অনেকক্ষেত্রে বেশ নিরানন্দ কাজ। একটু বড় হলে, অ, আ, ক, খ কিংবা ১,২ শেখাতে শুরু করি বই খাতা পাশে নিয়ে। যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ সেখাতে শুরু করি পুরোদমে। আপনি হয়তো জানেন না, একটা শিশুর কাছে এটি পুরোদমে জটিল কোন সমীকরণ শেখার মতো! ফলে দেখা যায় সামান্য যোগ শিখতে কিংবা সংখ্যা গণনা শিখতেও সন্তানকে ও সাথে আপনাকেও বেশ বেগ পেতে হয়! অথচ আপনি চাইলেই গণিতের সংখ্যা গণনা, যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ সন্তানকে বই খাতা না নিয়েও শেখাতে পারেন। আমাদের প্রতিদিনের যা কাজ, সেগুলোই হতে পারে শিশুদের গণিত শেখার রসদ। এই পদ্ধতিতে বিরক্তিবোধ ছাড়াই বেশ সহজে অনেক ছোট থেকেই আপনি সন্তানকে গণিত শেখাতে পারবেন।
গণনা শিখুক দৈনন্দিন কেনাকাটায়
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কেনাকাটাতো থাকেই। কখনো সুপার শপ, কখনো সবজি দোকান, কখনো টুকটাক জামা কাপড়! প্রতিদিনের এই কেনাকাটাতেই আপনি সন্তানকে শেখাতে পারেন সংখ্যা। সুপার শপে গেলে শপের তাক গুনতে বলতে পারেন সন্তানকে। কিংবা কয়টা আইটেম ট্রলিতে নিচ্ছেন তাও গুনতে বলতে পারেন তাকে। একই কাজ করতে পারেন সবজি কিনতে গেলেও। এক কেজিতে কয়টি টমেটো ধরলো তা সন্তানকে গুনে গুনে ব্যাগে নিতে বলেন কিংবা বাসায় আসলে ব্যাগ থেকে গুনে গুনে বের করতে বলতে পারেন। খুঁজলেই এমন আরো অনেক দারুণ উপায় পেয়ে যাবেন।
খেতে খেতে শিখবে জ্যামিতিক আকৃতি
বাইরে খেতে গেলেই কিন্তু শেখাতে পারেন বৃত্ত, ত্রিভুজ কিংবা চতুর্ভুজের ধারণা। পিৎজা দেখতে কিন্তু বৃত্তের মতো! আর পিৎজার স্লাইস ত্রিভুজের মতো! শুধু বাইরে খেতে গেলে না, ঘরের খাবারেও খুঁজলে এমন অনেক জ্যামিতিক ধারণা পেয়ে যাবেন। চা-এর সাথে বিস্কুট খেতে বসলেই পেয়ে যাবেন বৃত্ত আকৃতির বিস্কুট কিংবা চতুর্ভুজ আকৃতির বিস্কুট। আপনার ঘরে, বাইরে, চারপাশে এমন অনেক কিছু পাবেন যেখানে লুকিয়ে আছে জ্যামিতিক ধারণা। একটু খুঁজে নিয়ে সন্তানকে খেতে খেতেই কিছু শিখিয়ে ফেলতে পারেন এসব।
হাঁটতে গেলে শিখে ফেলবে সংখ্যা
হাঁটতে গেলে কিংবা কোথাও বেড়াতে গেলে সংখ্যা শিখিয়ে ফেলতে পারেন খুব সহজে। পার্কে হাঁটতে হাঁটতে পাশের সারি সারি গাছগুলো গুনুন! দেখবেন আপনার লিটল জিনিয়াসও আপনার সাথে গুণা শুরু করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে পার্কের দূরত্ব, কিংবা বাড়ি থেকে আত্মিয়ের বাসার দূরত্বও গল্পে গল্পে তাকে জানাতে পারেন। “জানো, আমরা ঠিক এক কিলোমিটার হেঁটেছি আজকে” এই কথাটি সন্তানকে বললেই দেখবেন সে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে। এবার তাকে আপনি দূরত্বের ধারণাও কিন্তু দিতে পারবেন।
যোগ-বিয়োগ শেখান কেনাকাটার হিসেবে
কেনাকাটা করতে গেলেন। দোকানের বিলটি সন্তানকেই হিসেব করতে বলুন। দোকানের টাকা মিটিয়ে কত টাকা পাবে সে হিসেবটাও সন্তানকে করতে বলুন। কিংবা একসাথে করুন। এভাবে খুব সহজে ও কোন ঝামেলা ছাড়াই সন্তানকে আপনি যোগ-বিয়োগ শিখিয়ে ফেলতে পারবেন। তার জন্য তিনটি চকলেট কিনলে ৫ টাকা করে তিনটির দাম কত টাকা আসে; এমন কৌশলে শেখাতে পারবেন গুণও!
সামঞ্জস্য রাখুন
সন্তানের একাডেমিক পড়ার সাথে আপনি তাকে খেলার ছলে বা দৈনন্দিন কাজের গণিতের যেসব ধারণা শেখাবেন তার একটা সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করুন। একাডেমিক পড়ায় যদি তাকে জ্যামিতি শেখানো হয় তাহলে সেটার প্রয়োগ দৈনন্দিন কাজের মধ্যে করার চেষ্টা করুন। যেমন, তাকে বৃত্ত শেখানোর পরে গোল বিস্কুট খাওয়ার সময় বলতে পারেন, এই বিস্কুটটা কিসের মত দেখতে? এভাবে সামঞ্জস্য রাখার ফলে তার শেখার গতি কিছুটা বাড়বে ও শেখাটাও বেশ পাকাপোক্ত হবে। শেখাতে পারেন এর উল্টো কৌশলও। মানে, আগে বিস্কুট দেখালেন, এরপর বইয়ের বৃত্তটা দেখিয়ে বললেন, এটি কিন্তু তোমার সকালে খাওয়া বিস্কুতের মত দেখতে! যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ বা যে কোন ধরণের পড়া শেখানোর ক্ষেত্রেও এই কৌশলটি কাজে লাগাতে পারেন।
গণিত হোক কিংবা ইংরেজি, শিশুদের জন্য পড়ালেখা যত মজার করে উপস্থাপন করতে পারবেন সে ততটা আনন্দ নিয়ে শিখবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,771 total views, 2 views today