শিশুদের মনোযোগ তৈরিতে মেডিটেশন হতে পারে একটি কার্যকর পদ্ধতি। মেডিটেশন শিশুর শরীর, মন ও স্নায়ু সবটাই বেশ সতেজ ও প্রাণচঞ্চল রাখে। মেডিটেশন শুধু যে বড়দের ক্ষেত্রেই কাজ করে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। কেননা সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে কী করে মেডিটেশন শিশুদের মানসিক চাপমুক্ত করে লেখাপড়ায় আরো বেশি মনোযোগী করে তোলে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী পিতা-মাতা ও স্কুল সবাই একটি বিষয় স্বীকার করেছেন যে, মেডিটেশন শুধু শিশুদের মনোযোগই বাড়ায় না, পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, পরিকল্পনা করা এবং সংগঠিত করার মতো ক্ষমতাও অর্জন করে। চলুন মেডিটেশনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।
১। মনোযোগ ও চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
মনোবিশেষজ্ঞদের মতে, মেডিটেশন বা নিবিষ্ট মনে বসে থাকলে মানসিক, শারীরিক এবং স্নায়বিক প্রশান্তি কাজ করে। যার ফলে যেকোনো কাজেই অধিক মনোযোগী হওয়া যায়। মেডিটেশন শিশুর চিন্তাশক্তিকে একটি বিষয়ে কেন্দ্রীভূত করতে শেখাবে, যার ফলে শিশুর যেকোন একটি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পড়ার সময় অন্য সব চিন্তা মস্তিষ্ক থেকে দূরে থাকবে।
মেডিটেশন শুধু শিশুদের মনোযোগই বাড়ায় না, পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, পরিকল্পনা করা এবং সংগঠিত করার মতো ক্ষমতাও অর্জন করে।
২। আই কিউ লেভেল বৃদ্ধি
গবেষকদের মতে মেডিটেশন সব বয়সের মানুষের আইকিউ লেভেল বৃদ্ধিতে মারাত্মক কাজ করে। আর শিশুর জন্য এটি আরও দারুন ভাবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ৮ সপ্তাহ বা তার বেশী মেডিটেশন করলে একপর্যায়ে মানুষের মস্তিষ্কের LEFT HIPPOCAMPUS, POSTERIOR CINGULATE CORTEX ও TEMPORO PARIETAL JUNCTION অংশ আয়তনে বৃদ্ধি লাভ করে। এতে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়তে পারেন- প্যারেন্টিং টিপস- বাচ্চাদের গতি অসুস্থতা বা মোশন সিকনেস হলে করণীয়
৩। অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ থেকে মুক্তি
আপনার ঘরে যদি একটি শিশু থাকে এবং সে যদি স্কুলগামী হয় তাহলে আপনি অবশ্যই খেয়াল করেছেন যে বর্তমানে তাদের পড়াশোনায় কতটা চাপ সামলাতে হয়। স্কুলে যাওয়ার সময় একগাধা বই, ক্লাস থেকে বাসায় ফিরে আবার হোম টিউটরের পড়া, তার উপর স্কুল পড়ার প্রিপারেশন সব মিলিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা। এই ধকল থেকে মুক্তি দিতে পারে মেডিটেশন।
৪। বদ অভ্যাস ত্যাগে ভূমিকা
প্রায় প্রত্যেক শিশুর কিছু না কিছু বদ অভ্যাস তৈরি হয়। বাবা মা অনেক চেষ্টা করেও সেই বদ অভ্যাস দূর করতে পারেন না। কোন কোন শিশুর হঠাৎ রেগে যাওয়া, ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই বদ অভ্যাস পরিহারে মেডিটেশনের কোন বিকল্প নেই।
৫। হাতাশা থেকে মুক্তি
প্রত্যেক মানুষের জীবনে হতাশা থাকে। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে এই হতাশার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। ধরুন, আপনার শিশু কোন খেলনা কিনে দিতে বায়না ধরল। আপনি সেটা কিনে দিলেন না। তাহলে আপনার শিশু হয়তো ভেবে বসতে পারে আপনি তাকে ভালবাসেন না। ফলে সে হতাশ হয়ে পড়ে। এছাড়াও শিশু হতাশ হওয়ার অনেক কারন থাকতে পারে, যেমন বন্ধুদের সাথে মনোমালিন্য, পড়াশোনার চাপ ইত্যাদি। এই হতাশা কাটিয়ে উঠার অন্যতম উপায় হল মেডিটেশন।
আরও পড়তে পারেন- স্কুলে ভর্তির আগে বাচ্চাদের কীভাবে পড়াবেন? প্রি-স্কুল কারিকুলাম টিপস ১ম পর্ব
1,775 total views, 1 views today