Show Categories

টিনএজ মেয়ে সন্তানের এই ৭ টি সমস্যা সম্পর্কে জানেন তো?

টিনএজ মেয়ে

টিনএজ সময়টি প্রতিটি মানুষের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সটা আনন্দের, মজার, শেখার আবার এই বয়সটি অনেকের জন্য ভেঙ্গে পড়ারও। এই সময়ে প্রতিটি ছেলে-মেয়ে বেশ কিছু প্রথম ও নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। এই অভিজ্ঞতাগুলো কখনো কখনো আনন্দের। আবার কখনো কখনো চ্যালেঞ্জের। আনন্দের পাশাপাশি জীবনের অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তারা। অভিজ্ঞতা এবং সমস্যা প্রায় সবই তাদের জন্য নতুন হওয়ায় এই সময়ে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে বাবা-মা হিসেবে আপনার সাহায্য অনেক বেশি দরকার। আমাদের আজকের ব্লগ টিনএজ মেয়ে সন্তানের সমস্যাগুলো নিয়ে। আর সাথে থাকবে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে আপনার জন্য বেশ কিছু টিপসও।

চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগা 

টিনএজ মেয়ে সন্তানদের সাধারণ সমস্যার মধ্যে একটি হলো চেহারা ও শারীরিক সৌন্দর্য্য নিয়ে হতাশা বা হীনম্মন্যতায় ভোগা। বয়ঃসন্ধিকাল ও পিরিয়ডের জন্য এই সময়ে তাদের শরীরবৃত্তীয় বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। যার প্রভাব পড়ে তাদের চেহারা ও শারীরিক সৌন্দর্য্যে। ব্রন হওয়া, চেহারায় চাপ পড়াসহ বর্তমান সময়ের শরীরি সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে অনেকেই নিজের শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে।

সমাধানঃ তাকে এই সময়ে তার শারীরিক পরিবর্তনের কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন। এবং এই পরিবর্তন যে সাময়িক তাও বোঝান। নিজের শরীরের যত্ন নেয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা, খাওয়া দাওয়া, ঘুম ইত্যাদি রুটিন মতো করার দিকে মনোযোগ দিন ও একই সাথে তার নিজস্বতার বিষয়টিও তাকে বোঝাতে পারেন। সুস্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাভাবিক অবকাঠামোই মূলত একজন মানুষকে সুন্দর করে তোলে এই বিষয়টিও তাকে বোঝাতে পারেন।

পড়ালেখা নিয়ে হতাশা

অনেক ছেলেমেয়েই আছে পড়ালেখার শুরুটা বেশ দারুণ ভাবেই শুরু করে। কিন্তু টিনএজ বয়সে এসে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে লেখাপড়ায় কিছুটা প্রভাব পড়ে। ফলে ফলাফল আর আগের মতো থাকে না। সবসময় পড়ালেখায় ভালো করার পর হুট করে এমন পরিবর্তনে সে নিজেও হতাশ হয়ে পড়ে। আর এই সময়ে পড়ালেখার ভালো ফলাফল না করার কারণে বাবা-মায়ের চাপ তাকে আরো বেশি হতাশ করে দিতে পারে।

সমাধান

প্রথমেই আপনাকে মেনে নিতে হবে ফলাফল কখনো কারো মেধার মাপকাঠি হতে পারে না। সবসময় ফলাফল দিয়েই তাকে বিচার না করে তার চেষ্টা দিয়ে বিচার করুন। আর সাময়িক কোন ধরণের ফলাফল বিপর্যয়ে সবার আগে আপনার সমর্থনই কিন্তু তাকে এই সমস্যা থেকে টেনে তুলতে পারবে। তার সমস্যা নিয়ে তার সাথে আলচনা করুন। একই সাথে তার হতাশা দূর করার জন্য সহমর্মিতার জায়গা থেকে তার সাময়িক ফলাফলের বিপর্যয়ের বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে তাকেও সাহায্য করুন। এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন এই সময়ে। এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজের ফলে এক ঘেয়েমি থেকে বের হওয়ার পাশাপাশি তার তার আত্মবিশ্বাসও বাড়াবে।

সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া

শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের জন্য এই সময়ে এসে টিনএজ মেয়ে’রা সম্পর্ক, প্রেম ও শারীরিক অন্তরঙ্গতা সম্পর্কেও কৌতুহলী হয়। অনেকে অসাবধানতাবসত এই সময়ে নানান রকমের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়ে। তার কৌতুহলের তুলনায় বিচার বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেধা কম থাকে বিধায় এই সময়টা একটা টিনএজার মেয়ের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। টিনএজার ছেলের জন্য একই। আর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে আধুনিক যুগে তাদের পক্ষে কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াটা বেশ সহজও।

সমাধান

এখানেও সবার আগে দায়িত্বটি আপনারই। আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এমন একটা সম্পর্ক যে সম্পর্কের ফলে সন্তান আপনাকে তার সবধরণের কৌতুহলের কথা খুলে বলতে পারে। আপনাদের মাঝে মুক্ত আলোচনা যত বেশি হবে, আপনাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও ততটা শক্তিশালী হবে। টিনএজ বয়সের পর থেকেই সন্তানের সাথে সম্পর্ক, প্রেম, ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। কোনটা তার জন্য ক্ষতিকর, কোনটা ক্ষতিকর না, তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কতটা পরিপক্ক ও সেখানে আপনার মতামত কেন গুরুত্বপূর্ণ; ইত্যাদি বিষয়গুলি সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে পারেন।

বুলিং

বাচ্চারা বুলিং এর শিকার টিনএজ বয়সের আগেও হতে পারে। স্কুল বুলিং থেকে অনলাইন বুলিং(যদি আপনার সন্তান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে পরিচিতি থাকে) তারা যেকোন ধরণের বুলিং এর শিকার হতে পারে। কারো আত্মবিশ্বাসকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া, তার মাঝে হতাশা বাড়িয়ে দেয়া, বিষণ্ণতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বুলিং-ই যথেষ্ট। আপনি স্রেফ আপনার ছোটবেলার কথাটি চিন্তা করুন। কেউ আপনার নাম ব্যঙ্গ করলেই আপনি ক্ষেপে যেতেন না? নাম ব্যাঙ্গ করা হচ্ছে বুলিং-এর একদম সর্বনিন্ম পর্যায়। সেই বুলিং যদি শারীরিক অবয়ব, গায়ের রঙ, পড়ালেখার বাজে ফলাফল নিয়ে হয় তখন তার মাত্রা কতটা হবে ভেবে দেখুন!

সমাধান

আপনার সন্তান এমন কোন কিছুর শিকার হলে আপনাকে জানাবেই; প্রথমে এটা নিশ্চিত করুন। পুরো ব্যাপারটা বিস্তারিত জেনে তাকে মানসিকভাবে সমর্থন দিন। বুলিং করাটি একটি ব্যাড ম্যানার, যে করছে সে ভালো কাজ করছে না। এতে যে আপনার সন্তানের আসলে কোন দোষ নেই তা তাকে বুঝিয়ে বলুন। অনলাইন বুলিং ও স্কুল বুলিং-এ আপনার করণীয় সম্পর্কে আমাদের এই দুইটি ব্লগ পড়তে পারেন।

আর একটা বিষয় মনে রাখবেন। সবসময় আপনার সন্তান বুলিং-এর শিকার হবে বিষয়টি এমন নাও হতে পারে! এমনতো হতে পারে যে আপনার সন্তানের দ্বারাই কেউ বুলিং-এর শিকার হচ্ছে! সেক্ষেত্রে বুলিং এর ক্ষতি ও তার বুলিং এর ফলে অন্য মানুষটি কতটা কষ্ট পায় তা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন!

নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা

টিনএজ মেয়ে’দের মাঝে নিজেকে নিজের বয়সী অন্য কারো সাথে কিংবা বিভিন্ন মডেলদের সাথে তুলনা করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। অন্যরা কী করে, কেমন পোশাক আশাক পরে সে অনুযায়ীই চলার একটা ভয়াবহ প্রবণতা তাদের মাঝে লক্ষ করা যায়। ফলাফল স্বরূপ অনেকেই নিজের শারীরিক সৌন্দর্য্য নিয়ে ভয়াবহ হীনমন্যতায় ভোগে। নিজের আত্মসম্মান বোধ হারিয়ে ফেলে। কেউ তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর, স্মার্ট; এই ভাবনাটি তাকে সবসময় কিছু আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানহীনতায় ভোগায়।

সমাধান

প্রথমেই খেয়াল রাখুন আপনার সন্তান যেন কোন মডেলকে আদর্শ ভেবে না বসে। মডেল হওয়ার স্বপ্ন থাকা বা নিজেকে সেভাবে তৈরি করার ভাবনা থাকাটি অন্য বিষয়। কিন্তু এর বাইরে কারো পোশাক আশাক বা শারীরিক সৌন্দর্যকে আদর্শ না ধরে সে দিকে খেয়াল রাখুন। আর অবশ্যই আপনার সন্তানের নিজস্বতা সম্পর্কে তাকে ধারণা দিবেন। তার সৌন্দর্য যতটুকু আছে সেটা যে আসলে অন্য কারো নাই তা তাকে বুঝান।  অন্যের মতো না হয়ে সে যেন নিজের মতো হওয়ার চেষ্টা করার কথাও তাকে বলতে পারেন।

পিরিয়ড জটিলতা

টিনএজ বয়সে মেয়েদের বেশিরভাগ জটিলতার মূলে থাকে পিরিয়ড জটিলতা। জীবনের এমন একটি অদ্ভূত পরিবর্তনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপক্ক হওয়ার সেই বয়সটিই আসলে তাদের হয় না এই সময়ে। ফল স্বরূপ এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে আরো অন্যান্য জটিলতায় পড়ে সে।

সমাধান

প্রথম পিরিয়ডের জন্য আপনার টিনএজ মেয়ে সন্তানের সাথে আলোচনাই আসলে মূল সমাধান। এই বিষয়টি সম্পর্কে তাকে অবগত করা। সতর্কতা, সাবধানতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো। এবং একই সাথে এও জানানো যে, এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটা বিষয়। সব মেয়ের জীবনেই এই চক্রটি আসবে। পিরিয়ডের জন্য কন্যা সন্তানের প্রস্তুতি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

হতাশা

চেহারা, বুলিং, পড়ালেখা টিনএজ বয়সে এত চাপ ও জটিলতা সামলাতে না পেরে অনেক ছেলে-মেয়েই হতাশায় ভোগে। এই সময়ে হতাশায় ভোগার অন্যতম কারণই আসলে বয়স। এই বয়সে তারা সবকিছুই আসলে অনেক সিরিয়াসভাবে নেয়। আর সবধরণের পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটে যে, তারা তার সাথে খাপ-খাইয়ে নিতে পারে না। তার উপর যদি পরিবারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে না উঠে তাহলে তার হতাশায় ভোগার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।

সমাধান

সন্তানের মাঝে হতাশার লক্ষনগুলো খেয়াল করুন। তার সাথে গল্প করুন বেশি বেশি। পছন্দের কাজ বেশি বেশি করতে দিন। এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। টিনএজ বাচ্চাদের হতাশা ও সমাধান সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,555 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment