Show Categories

প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ খরা, এসো জানি খরার বিজ্ঞান

Bigganbaksho- art work

“উফ্‌ফ্‌ফ্‌, আজকে পানির কী হলো! সেই সকাল থেকে পানি নেই.!”

আচ্ছা, বাসায় পানি না থাকলে প্রায়ই কি তোমরা এভাবে বিরক্ত হও? এই প্রচণ্ড গরমে একদিন পানি না থাকলেই মনে হয়, এই বুঝি প্রাণ গেলো রে বাবা…! তাহলে একবার ভাবো তো, যদি পুরো সাতদিন পানি না থাকে, অথবা একটানা মাস খানেক বা তারও বেশি পানি ছাড়া আমাদের কাটাতে বলা হয়? এই দাঁড়াও দাঁড়াও, এখনই বোতলে পানি ভরার জন্য যেতে হবে না। তার আগে শুনে যাও যে আজ কী নিয়ে গল্প করবো।

আজকে আমাদের গল্পের বিষয় হচ্ছে খরা। অর্থাৎ ঠিক কি কি কারণে খরার সৃষ্টি হয়, আমরা ছবি ও গল্পে এর ভেতরের বিজ্ঞানটি জেনে নেবো।

তাহলে চলো শুরু করা যাক!

আচ্ছা, তোমরা বলতে পারবে, খরা কী? হ্যাঁ, ঠিক বলেছো, খরা হচ্ছে পরিবেশের পানি শুন্যতা। খরা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অনেকদিন পানির অভাবে আমাদের পরিবেশের যে শুষ্ক অবস্থার তৈরি হয়, তাই খরা। আরেকটু ব্যাখ্যা করে বললে, একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে যখন বৃষ্টি হওয়া বন্ধ থাকে অথবা পরিবেশের জন্য যতটুকু পানির দরকার তার থেকে অনেক কম বৃষ্টিপাত হলে তখন খরার সৃষ্টি হয়। তবে মনে রাখবে খরা কিন্তু সারা বছর হয় না। বছরের যে সময়টা খুব গরম পরে এবং বৃষ্টি অনেক কম হয় অর্থাৎ মার্চ থেকে নিয়ে মে মাস পর্যন্ত সময়ে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি হয়ে থাকে।

এবার এসো, প্রথমে, বৃষ্টি না হলে আমাদের চারপাশের পরিবেশে ঠিক কী কী ঘটে তা জেনে নেই। সাধারণত তোমরা জানো যে, আমাদের চারপাশে যে বাতাস রয়েছে তাকে বলে বায়ুমণ্ডল।  আবার আমরা যে মাটির উপরে হাটি তাকে বলে মাটির উপরের স্তর আর এই মাটির নিচেও যে মাটি রয়েছে, তা হল মাটির নিচের স্তর।

(মাটির স্তর সমূহ সম্পর্কে জানতে এই ব্লগটি পড়তে পারো।) 

এখন, একটানা অনেকদিন ধরে বৃষ্টি না হলে, বায়ুমণ্ডল আর মাটির ওপরের স্তর পানি শূন্য হয়ে পড়ে।  এমন কী মাটির নিচের স্তরের পানিও আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তোমরা মনে করতে পারো, এরকম সময়ের জন্য বেশি করে পানি জমা করে রাখলেই তো হয়। হ্যাঁ, আমরা মানুষরা নিজেদের জন্য পানি জমা করে রাখতে পারি তা ঠিক। কিন্তু পশু-পাখি, গাছ-পালা এরা ত পানি জমা করতে পারে না, তাই না! তাই খরার সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এরা।

শুধু তাই নয়, খরায় পরিবেশের আরো অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়। যেমন, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, আবাদি জমির ক্ষতি, গরু-ছাগল এসব গবাদি পশুর খাদ্য সংকট, মানুষসহ কলকারখানায় পানির ঘাটতি ইত্যাদি।

তোমরা কি বলতে পারবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে কত প্রকারের খরার সৃষ্টি হয়ে থাকে? বই খোলার দরকার নেই, আমি বলে দিচ্ছি। উত্তরটা হল ৪ প্রকার। যেমন,

১. বায়ুমণ্ডলীয় খরা বা Meteorological Drought

২. কৃষিভিত্তিক খরা বা Agricultural Drought

৩. হাইড্রলজিকাল খরা বা Hydrological Drought

৪. আর্থ-সামাজিক খরা বা Socio Economic Drought

বায়ুমণ্ডলীয় খরা (Meteorological Drought)

বায়ুমণ্ডলীয় খরা পৃথিবীর একেক স্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন, ২০ ইঞ্চি ঘন পরিমাণের বৃষ্টিপাত মরুভূমির জন্য স্বাভাবিক মাত্রার বৃষ্টিপাত। কিন্তু একই পরিমাণের বৃষ্টি যদি গাছপালায় ঘেরা বন এলাকায় হয় তাহলে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

কৃষিভিত্তিক খরা (Agricultural Drought)

কৃষিভিত্তিক খরার তখনই সৃষ্টি হয় যখন কৃষিকাজ করার জন্য ফসল ও মাঠে পর্যাপ্ত পানির ঘাটতি পরে। আর তখনই সেচের অভাবে সময় মত চারা রোপণ করা যায় না আবার যে চারাগুলো আগেই রোপণ করা হয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পানির অভাবে খাবারের ঘাটতি দেখা দেয়। মনে রাখবে, এই খরাটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে অনেক ভয়াবহ।

হাইড্রলজিকাল খরা (Hydrological Drought)

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যায়। ফলে এগুলোতে পানির প্রবাহও কমে যায়। আর তখনই তৈরি হয় হাইড্রলজিকাল খরা অর্থাৎ এক কথায় যে খরা নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। তবে মানুষের অনেক কাজ কর্ম এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ টির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলে।

আর্থ-সামাজিক খরা (Socio-Economical Drought)  

এ খরা মানুষের দ্বারা তৈরি ছাড়া আর কিছু নয়। বুঝতে পারছ না? সহজ ভাবে বলছি তাহলে। আমরা আমাদের প্রয়োজনে অসংখ্য পরিমাণে বিশাল বিশাল কলকারখানা তৈরি করেছি। এখন এইসব কল-কারখানা চালানোর জন্য পানির দরকার হয়। আবার আমরা থাকার জন্য যে দালান-কোঠা তৈরি করছি এখানেও দরকার পরছে পানির। আর এই পানি আমরা পাচ্ছি কোত্থেকে? এই পানি আমরা নিয়ে আসছি মাটির অনেক নিচ থেকে বা নদী-নালা থেকে। এখন, কলকারখানা বা দালান-কোঠা তৈরিতে যতটুকু পানি ব্যাবহার করছি, তার পরিমাণ যদি খুব বেশি হয় অর্থাৎ যা আমাদের মাটির নিচে আছে, তখনই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটির সৃষ্টি হয়।

গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ গরমের সময় সবার আগে একটাই কথা মাথায় রাখবে যে, “পানি অপচয় করবো না”। তাহলে এখন ছবিতে দেখে নেই এরকম কিছু টিপস।

ঠিক আছে তাহলে, আজকে বিদায়। শিঘ্রই আসছি বিজ্ঞানের নতুন কোনো বিষয় নিয়ে!

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,204 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment