বছর দু-এক বা তারও বেশি সময় অপেক্ষার পর হামাগুড়ি আর আড়মোড়া ভাঙ্গার দিনগুলো পেরিয়ে আদরের সন্তান হাঁটা শুরু করে দিয়েছে দু-এক পা করে। দু-এক পা দেয় আবার পড়ে যায়, এটা সেটা ধরতে চায়। সারাদিনই ছোট ছোট পায়ে কুটকুট করে ঘুরে বেড়ায় সারা ঘর। আর আপনি খুশিতে আটখানা হন। হাত বাড়িয়ে দেন, সে যেন ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আপনার। আপনার কাজের সময় যখন ছোট ছোট পায়ে সারা ঘর হেঁটে বেড়ায় তখন মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন তার দিকে। কখনো ভেবেছেন, একটা ছোট দুর্ঘটনাই কিন্তু আপনার এই ঝলঝল চোখকে ছলছল করে দিতে পারে। দৃষ্টির মুগ্ধতা সরে গিয়ে সেখানে চলে আসতে পারে আতঙ্ক, কষ্ট আর ভয়। হ্যাঁ, সদ্য হাঁটতে শেখা আদরের সন্তান কিন্তু জানেনা তার জন্য কোথায় বিপদ অপেক্ষা করছে। সে প্রবল আগ্রহ নিয়েই ছুটে বেড়ায় এঘর ওঘর। এই ছুটে বেড়ানোতেই হুট করে পড়ে যেতে পারে সিঁড়ি দিয়ে। কিংবা তীক্ষ্ণ কোন কিছু ধরে কেটে ফেলতে পারে শরীর এর কোথাও কোথাও। বিপজ্জনক কোন কিছু খেয়ে ফেলতে পারে কিংবা ইলেক্ট্রিক বোর্ডে হাত দিয়ে ডেকে আনতে পারে বিপদ। বাচ্চাদের হাঁটা শুরু হওয়ার পর থেকে একটু সাবধান না হলে এই বিপদগুলো হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। সেজন্য বাচ্চাদের হাঁটা শেখার পর থেকেই ঘরকে করে তুলতে হবে চাইল্ডপ্রুফ। ঘরকে চাইল্ডপফ্রুপ করার কিছু টিপস জেনে নিন বিজ্ঞানবাক্স ব্লগ থেকে।
ফার্নিচারের কোন তীক্ষ্ণ অংশ উন্মুক্ত নয়
শিশুরা হাঁটা শেখার পর সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ ঘটে সম্ভবত ঘরের আসবাবপত্রের সাথেই। তারা আসবাবপত্রই ধরে বেশি আসলে। সেজন্য টেবিল, চেয়ার, খাট, সোফা কিংবা কেবিনেটসহ ঘরের সব ধরণের ফার্নিচারের তীক্ষ্ণ অংশগুলো ঢেকে দিন। বিশেষ করে ফার্নিচারের তীক্ষ্ণ কোনাগুলো্র কারণে শিশুদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে যেতে পারে। সেজন্য তোয়ালে, নরম কাপড়, গামছা বা অন্য যে কোন নরম জিনিস দিয়ে আসবাবপত্রের তীক্ষ্ণ অংশগুলো মুড়িয়ে রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয় পরিত্যাক্ত বাবল র্যাপ দিয়ে মোড়াতে পারলে।
সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চার জন্য ইলেকট্রিসিটি হতে পারে ভয়াবহ কোন দুর্ঘটনার কারণ। বাচ্চা হাঁটতে হাঁটতে দেয়ালে লাগানো কিংবা ফ্লোরে ছড়িয়ে থাকা কোন ইলেকট্রিক লাইন, সকেট কিংবা প্ল্যাগ ইত্যাদিতে হাত দিয়ে দিতে পারে। সেজন্য বাসার ইলেকট্রিক সেফটি নিশ্চিত করতে হবে। বাসার যে কোন অব্যবহৃত ইলেকট্রিক প্ল্যাগ বন্ধ করে রেখে দিন। ব্যবহৃতগুলোতেও কভার লাগাতে পারেন। ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি বাচ্চার নাগালের বাইরে রাখুন। বিশেষ করে যে কোন ধরণের ইলেকট্রিক তার ফ্লোরে ছড়িয়ে রাখবেন না। তার দেখলেই তা বাচ্চারা মুখে দিতে চায়।
দরজায় ডোর স্টপার ব্যবহার করুন
বাচ্চারা হাঁটতে হাঁটতে কোন কিছুকে ধরতে চাইবে। আর দরজার আশেপাশে গেলে দরজা ধরে খুলতে চাইবে এটা নিশ্চিত। এই সময়েই কিন্তু দরজার চিপায় চাপ লেগে আদরের সন্তানের হাতে ভয়াবহ জখম লাগতে পারে। দরজায় চাপ লাগার ব্যাথা বড়দের জন্যই যেখানে অসহনীয় পর্যায়ের সেখানে ছোট বাচ্চার জন্য কেমন ভাবুনতো একবার! চেষ্টা করবেন বাসার দরজাগুলো লক করে রাখতে। অথবা ডোর স্টপার ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে সন্তান দরজা খুললেও তা আর লাগাতে যেতে পারবে না। বাসার মূল দরজা বন্ধ রাখুন। শিশু যেন কোনভাবেই তা খুলতে না পারে।
রান্নাঘরের নিরাপত্তা
বাসায় ছোট বাচ্চার সবচেয়ে প্রিয় কে? অবশ্যই মা। মায়ের আশেপাশে থাকতেই সে বেশি পছন্দ করে। মা রান্না ঘরে গেলে সন্তানেরও রান্নাঘরে যাওয়া অস্বাভাবিক না। আর রান্নাঘর শিশুদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণই বলা যায়। রান্নাঘরে ছুরি, কাঁচির মতো অনেক তীক্ষ্ণ বস্তু থাকে। যা শিশুর হাতের নাগালে রাখলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া রান্না করার সময় অনেক গরম দুধ কিংবা গরম পানিতো আছেই। এইসবের কাছাকাছি গেলে যেকোন সময় অসাবধানতাবসত কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেজন্য রান্নাঘরের বিপজ্জনক সবকিছু শিশুর নাগালের বাইরে রাখার চেষ্টা করুন।
সিঁড়ির পথ খোলা নয়
ঘরের ভেতর দিয়ে যদি কোন সিঁড়ি থাকে তাহলে তার প্রবেশ দ্বার বন্ধ করে রাখুন। সিঁড়িতে দরজা লাগাতে পারেন অথবা একটু উঁচু কিছু একটা দিয়ে রাখতে পারেন। যেন শিশু তা মাড়িয়ে সিঁড়ির কাছে যেতে না পারে। না হলে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়ে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বাচ্চাদের হাঁটা শেখার সময়টা বাবা-মায়ের জন্য অনেক বেশি আনন্দের। কিন্তু সেই আনন্দ যেন বিষাদে রূপ না নেয় সেজন্য আমাদের সচেতন থাকা উচিত।
আরো পড়ুন-বেবি ওয়াকার আপনার সন্তানের ক্ষতি করছে না তো?
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,526 total views, 4 views today