Show Categories

একটি গিফট শপ এবং বিজ্ঞানবাক্স- গিফট এন্ড বুক এর গল্প

 

“দোকানটা যখন প্রথম শুরু করি, তখন শুধুমাত্র বই রাখতাম। তবে পড়ার বই না। নন একাডেমিক বই। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, এসব”।
একটু অবাকই হলাম তার কথা শুনে। লাইব্রেরিগুলোতে তো একাডেমিক বইয়ের খুব ভালো কাটতি, তাহলে তার এমন বিমুখতার কারণ কী?

উত্তরটা আমাদের ভাবালো। তিনি বললেন “আমাদের সন্তানেরা প্রতিদিন বিশাল বইয়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে কুঁজো হয়ে স্কুলে যায়। পড়তে পড়তে তারা বিরক্ত। তাদেরকে বইমুখী করতে হলে নন একাডেমিক বই ছাড়া গতি কী? এতে আমার কিছু লস হলেও আমি মেনে নিতে রাজী”।

এই হচ্ছেন মোহাম্মদ হায়াতুল্লাহ, “গিফট এন্ড বুক” দোকানটির স্বত্বাধিকারী। মিরপুর ২ নাম্বারের ডি ব্লক এলাকাটা মিরপুরের অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু অন্যরকম। বেশ ছিমছাম, খোলামেলা, আর সাজানো গোছানো। গিফট এন্ড বুক দোকানটাও বেশ সুসজ্জিত। চারিদিকে সুন্দর সব উপহার, বাতাসে মৃদু শব্দ করে গুনগুনিয়ে যাচ্ছে উইন্ড চাইম, ঢুকলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।

তবে এই পথ চলাটা এত সহজ ছিলো না। সেই নোয়াখালিতে লাইব্রেরি, পল্টনে ডিজাইন এন্ড প্রিন্টিং এর দোকান, তারপর মিরপুরের সনি হলের কাছে গিফট এন্ড বুক দোকানটির প্রথম বাসস্থান। সেখানে ভালোই চলছিলো, হঠাৎ একদিন নোটিশ এলো, দুই মাসের মধ্যে মার্কেট ছেড়ে দিতে হবে! সে এক চরম বিপর্যয়। কেবলই পসার জমতে শুরু করেছিলো, এতগুলো টাকা দিয়ে দোকান দিলেন, কোথায় যাবেন, কী করবেন?

তবে উদ্যোগী এবং সাহসী মানুষের পথ মিলে যেতে সমস্যা হয় না। মিরপুর দুই নাম্বারের ডি ব্লকে যখন দোকানটা দিলেন, তখন ছিলেন চরম আর্থিক সংকটে। খুব দরকার ছিলো কারো কাছ থেকে সহায়তার। পেয়ে গেলেন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে। এগিয়ে এলেন স্বল্প পরিচিত পাশের দোকানের লোকটি, এবং আরো কেউ কেউ। বিশ্বাস ফিরে পেলেন মানুষের প্রতি, নিজের প্রতি।

অবশ্য নিজের প্রতি বিশ্বাস তার বরাবরই ছিলো। ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিন বন্ধু মিলে। একে একে বন্ধুরা চলে গেলো বিভিন্ন কারণে। তিনি বেছে নিলেন একলা চলার নীতি।

তবে আসলেই কি তিনি একা? বিজ্ঞানবাক্স কিন্তু তার সাথে বরাবরই আছে! তখন বিজ্ঞানবাক্সের নাম ছিলো জ্ঞানবাক্স! নতুন পণ্য, মানুষ কেমনভাবে নেবে বোঝা যাচ্ছে না। অনেকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু তিনি ছিলেন আমাদের সাথে, এখনও আছেন।

তার দোকানে এখন আর বই নেই। শুধুমাত্র গিফট আইটেম। কিন্তু তার কাছে যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন, “আচ্ছা আমার সন্তানের জন্মদিনে কী উপহার দিতে পারি?”। তার উত্তর হবে, বই!
আর যদি বই না হয়, তাহলে শিক্ষামূলক কিছু। সেটা হতে পারে বিজ্ঞানবাক্স, হতে পারে ম্যাজিক স্লেট, হতে পারে বিজ্ঞানবাক্স!
তার দুই মেয়ে তাজিয়া এবং নওরিয়া বড় হলে যে বাবার কাছ থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর গিফট পাবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই!

আরো পড়তে পারেন- লাইব্রেরির নাম কাঁচামরিচ

 2,521 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment