আজকাল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে শিশুরা অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। যান্ত্রিক প্রযুক্তির অদ্ভুত এক চক্রে বন্দি হয়ে আছে তাদের নির্মল শৈশব। খুব সহজেই হাতের নাগালে থাকা স্মার্টফোনের কল্যাণে তারা বিভিন্ন গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের অধিকাংশ সময় কাটছে মোবাইলে গেমস (Mobile Games) খেলার মাধ্যমে। যুদ্ধ, ধ্বংস, অস্বাভাবিক গতি নির্ভর গেমসগুলো তাদের মনোজগতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে তাদের মধ্যে আগ্রাসী, ধ্বংসাত্মক এবং ঝুঁকিপ্রবণ আচরণের প্রবনতা বেড়ে চলছে।
মোবাইল গেমস (Mobile Games) আসক্তির কারণে শিশুদের উপর যেসব ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, দেখে নিনঃ
১। চোখের ক্ষতি হয়
অনেকসময় বাচ্চারা সারাক্ষণ মোবাইলে গেমস নিয়ে পড়ে থাকে। কিছু বললেও খেয়াল করে না। আর মোবাইলে অতিরিক্ত গেমস খেলার ফলে তাদের চোখের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সেক্ষেত্রে মোবাইলের স্কিনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
২। মাথা ব্যথা ও নিদ্রাহীনতা সৃষ্টি হয়
রাত জেগে মোবাইলে গেমস (Mobile Games) খেললে ঘুমের অনিয়ম হয়। ফলে একসময় অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও নিদ্রাহীনতাসহ বিভিন্ন ঘুমের রোগ দেখা দিতে পারে।
৩। অসামাজিক হয়ে বেড়ে উঠে
অনেক শিশুই সারাক্ষণ মোবাইলে গেমস খেলতে ব্যস্ত থাকে। ফলে অন্যদের সাথে গল্প-গুজব করা, খেলাধুলা করার সময় তার হয় না। যে কারণে তার সামাজিক দক্ষতা কমে যায়। এর দরুন সে অসামাজিক হয়ে বেড়ে উঠে।
৪। শিশু স্থূলকায় হয়ে উঠে
যে বয়সে বাচ্চার উচিত হেসেখেলে ছুটে বেড়িয়ে খেলাধুলা করা। আর সেই বয়সে সে বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলায় মত্ত। ফলে সেভাবে নড়াচড়া বা দৌড়ঝাঁপ না করায় তার শরীরে মেদ জমছে। সে স্থূলকায় হয়ে উঠছে এবং এর ফলে তার শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাধছে।
৫। মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোনে গেমস খেলতে খেলতে শিশু মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মোবাইল গেমস (Mobile Games) তার মনোযোগের ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। অস্বাভাবিক দ্রুতগতিসম্পন্ন গেমের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে মস্তিষ্ক এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে বাচ্চার সহিংস এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।
আপনার সন্তান যখন মোবাইল গেমসে (Mobile Games) আসক্ত!
শিশুরা মোবাইলে গেমস (Mobile Games) খেলতে পারে, তবে তা পরিমিত আকারে। তা যেন কখনোই আসক্তির পর্যায়ে না যায়। আর যদি তা আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়, তবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। সুতরাং এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে মা-বাবাকেই। আর মোবাইল গেমসের আসক্তি শাসন করে বন্ধ করতে গেলে, তার ফলাফল ভাল নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে বাচ্চার এই আসক্তি দূর করা যায়।
আসুন শিশুর মোবাইল গেমসের আসক্তি দূর করতে কিছু করনীয় বিষয় দেখে নিই।
১। বাচ্চাকে বেশী করে সময় দিন
যান্ত্রিক নাগরিকতার দরুন আমরা সবাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। ছোট্ট বাচ্চাটা কিভাবে তার সময়গুলো কোন ক্ষেত্রে কীভাবে ব্যয় করছে। তাও আমরা ঠিকভাবে খেয়াল রাখছি না। আর সেক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে আরও বেশী করে সময় দিন। বাচ্চার সাথে বন্ধুর মতো গল্প করে তার সব কথা জেনে নিন। খেয়াল রাখুন সে কতটা সময় নিয়ে মোবাইলে গেমস (Mobile Games) খেলছে। অনেকক্ষণ পার হলে ওর মন অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করুন, কায়দা করে মোবাইল নিয়ে নিন।
সাইবার বুলিং (Cyber-Bullying)-একটি সামাজিক ব্যাধি, সতর্ক হোন!
২। বই পড়তে উৎসাহিত করুন
বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে আগ্রহী করে তুলুন। তার বয়স অনুযায়ী নানারকম বই কিনে দিন। স্কুল কিংবা পাড়ার রিডিং ক্লাবের সদস্য করে দিতে পারেন। এছাড়াও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরীর সদস্য করে দিতে পারেন।
৩। সময়ের মূল্য বোঝাতে চেষ্টা করুন
সময়ের কাজ সময়ের মধ্যেই করা উচিত। বাচ্চাকে সময় অপচয় করার কুফলগুলো সম্পর্কে সচেতন করুন। তাকে ছোটবেলা থেকেই সময়ের মূল্য বুঝে চলার শিক্ষা দিন। আর সে যে গেমস খেলে সময় নষ্ট করে, পড়াশুনারও ক্ষতি করে চলছে। যা তার ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। সেটা তাকে ধৈর্য ধরে ভালভাবে বুঝিয়ে বলুন।
৪। সময় নির্ধারণ করে দিন
একদিনেই তো আর আসক্তি দূর হয় না। আর তাইতো বাচ্চাকে সময় নির্ধারণ করে দিন। এবং তার সাথে খোলাখুলি ভাবে কথা বলুন। তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন, সারাদিনে তুমি এক ঘণ্টা গেমস খেলতে পারবে। আস্তে আস্তে সময় কমিয়ে দিতে ট্রাই করবেন। এভাবে সময় বেঁধে দিলে তার এই অতি আসক্তিটা আস্তে আস্তে কমে যাবে।
৫। বাইরের জগতে হোক অনাবিল বিচরণ
ছুটির দিনগুলিতে বাচ্চাকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান। খোলা আকাশের নিচে আনন্দে কাটুক ওর অবসর সময়টুকু। বাইরের আলো হাওয়ায় ঘুরেফিরে কাটালে তার মনও অনেক ভাল থাকবে। এছাড়াও পাড়ার মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করুন।
ছুটির দিনে, আনন্দের ঘ্রাণে- শিশুকে দিন নির্মল বাতাসের আলিঙ্গন
৬। সৃষ্টিশীল কাজে বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখুন
শিশুর মধ্যে সৃজনশীলতা বিকাশে তাকে ছবি আঁকা, গান, আবৃত্তি প্রভৃতি শেখার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে এসব শেখার সুযোগ আছে, সুতরাং একটু খোঁজ নিলেই পাবেন। এছাড়াও তাকে বিজ্ঞানের প্রতি মনোযোগী করে গড়ে তুলতে, তার হাতে তুলে দিতে পারেন বিজ্ঞানবাক্স। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় এক্সপেরিমেন্ট করলে, তার মেধার বিকাশ ঘটবে এবং মনোযোগও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
অতি শাসনের ভাষা কিংবা অযথা ভয় দেখিয়ে নয়। বরং ভালভাবে বুঝিয়ে বাচ্চার মোবাইল গেমসের (Mobile Games) আসক্তি দূর করুন। আপনার সন্তানের দু’চোখ ক্ষুদ্র স্কিনের জগতেই আটকে না থাকুক। বরং বৃহৎ আকাশের পানে চেয়ে ও নতুন পৃথিবী আবিষ্কারের স্বপ্নে বিভোর হোক!
1,979 total views, 1 views today