সাধারণত শিশুরা বাবা-মায়ের সাথে ঘুমায়। কিন্তু সন্তান বড় হলে তাকে একা ঘুমানো শেখানো জরুরী। তখনি বাবা-মাকে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কারণ, অনেক দিন বাবা-মার সাথে ঘুমানোর ফলে শিশুর মাঝে একা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলাটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। আজকে আমরা জানবো শিশুদের মাঝে একা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য কিছু কৌশল।
সন্তানের জন্য একা ঘুমানো’র অভ্যাস কেনো জরুরী?
সন্তান বড় হয়ে গেলে তাকে একা ঘুমাতে দিতে হয়। তাছাড়া সন্তান অনেক লম্বা সময় বাবা-মায়ের সাথে ঘুমালে তার মাঝে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। একা একা ঘুমানোর ফলে নিজের দায়িত্ব নেয়ার একটা পাঠ শিশুর মধ্যে গড়ে উঠে। দীর্ঘ সময় বাবা-মায়ের সাথে ঘুমানোর ফলে সন্তানেরা বাবা-মায়ের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাবা-মার উপর থেকে নির্ভশীলতা কমানোর জন্য তাকে একা একা ঘুমাতে দেয়া উচিত।
আরো পড়ুন-সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার জন্য করণীয়।
সন্তানদের একা একা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ার কৌশল
বিশেষজ্ঞর যদিও বলেন ৩-৪ বছর বয়স থেকেই সন্তানের মাঝে একা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সন্তানকে ৬-৮ বছরে বয়স থেকেই একা ঘুমাতে দিতে হবে। তবে হুট করেই একা ঘুমাতে দেয়া যাবে না। সেজন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে! চলুন জেনে নিই।
ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে
হঠাৎ করেই শিশুকে একা ঘুমাতে দেয়া যাবে না। শুরু করতে হবে ধীরে ধীরে। সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন তাকে একা ঘুমাতে দিয়ে তার প্রতিক্রিয়া খেয়াল করতে হবে। যদি মনে হয় সে এভাবে একা ঘুমাতে পারছে তাহলে ধীরে ধীরে দু-একদিন বাড়িয়ে দিতে পারেন। এভাবে ধীরে ধীরে তার মাঝে অভ্যাস গড়ে উঠবে!
কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
সাধারণত শিশুদের ঘুম নিরবচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। সেজন্য ঘুমিয়ে গেলে তেমন চিন্তা করতে হয় না। সেজন্য ঘুমানোর আগে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন, দাঁত ব্রাশ করা, বিছানা ঠিক করা। এরপর তার বিছানায় বসে গল্প শোনাতে পারেন। এবং শিশু ঘুমিয়ে গেলে চলে আসতে পারেন। এই কাজগুলো প্রতিদিন করার ফলে এই কাজ করলেই শিশুর মাঝে ঘুমানোর একটা মাইন্ডসেট তৈরি হয়!
আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেন
অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মার সাথে বেশি সম্পৃক্ত। সেক্ষেত্রে তাদের মাঝে আলাদা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ার জন্য তাদেরকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। প্রয়োজনে একসাথে শুয়ে কিংবা পাশে বসে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। চাইলে তাদের মায়ের ব্যবহৃত বালিশ ও কাঁথা ব্যবহার করা যায়। এটা মনস্তাত্ত্বিকভাবে মায়ের উপস্থিতি বোঝাতে সাহায্য করে।
কখনো কখনো কঠোর হতে হবে
বাচ্চাদের একা ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেলেও মাঝে মাঝে তারা বাবা-মার সাথে ঘুমানোর জন্য আবদার করবে। কখনো কখনো কান্নাকাটি করবে। এমন পরিস্থিতিতে বাবা-মাকে একটু দৃঢ় হতে হবে। তাকে ভালোভাবে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমানোর কথা বলতে হবে। যদি কাজ না হয়, তাহলে সে ঘুমানো পর্যন্ত তার রুমে থাকতে পারেন। কিন্ত তার সাথে না ঘুমানোর উত্তম।
উদযাপন করা ও উৎসাহ দিতে হবে
উদযাপন ও উৎসাহ মানুষকে কিছু করার প্রেরণা বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি কাজ করে। শিশু একা ঘুমাতে পারলে তাকে উৎসাহ দিতে হবে ও ছোট কোন স্পেশাল উদযাপন করা যেতে পারে। একা ঘুমাতে পারার পুরষ্কার হিসেবে তাকে একটা নতুন টেডি বিয়ার অথবা অন্য যেকোন কিছু উপহার দেয়া যেতে পারে।
শিশুর সাথে জোর করা যাবে না
কোন অবস্থাতেই শিশুকে ধমক দেয়া অথবা শিশুর সাথে জোর করা যাবে না। প্রয়োজনে আরও সময় নিতে পারেন। জোর করলে বা ধমক দিলে সেটা হিতে-বিপরীত হতে পারে। কখনো কখনো ইনসমনিয়ায়তেও আক্রান্ত হতে পারে শিশু!
একই রুমে আলাদা বিছানা করতে পারেন
যদি শিশুকে আলাদা রুমে একা ঘুমাতে দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাহলে প্রথম দিকে একই রুমে আলাদা বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করে তুলতে হবে। এতে ধীরে ধীরে সে আলাদা রুমে একা ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারবে!
একা ঘুমানোর অভ্যাস শিশুদেরকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে! সেজন্য সন্তান বড় হলে তাকে একা ঘুমাতে দিতে হবে।
আরো পড়ুন-শিশু দুঃস্বপ্ন দেখছে? দেখুন করণীয়।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র- psychologytoday
998 total views, 4 views today