শিশু যখন কথা বলতে শেখে তখন থেকেই শুরু হয় বাবা মায়ের নতুন ধৈর্য পরীক্ষার পালা। কারণ, সন্তানের নানা প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসার তখন কোন অন্ত থাকে না। তবে শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই জিজ্ঞাসার ধরণগুলোও আকারে বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ৪-৫ বছরের শিশুর মাঝে নতুন করে পৃথিবীকে জানার সময়ের শুরু হয়। তখন সে বাবা মায়ের কাছে শুধু জিজ্ঞাসা করেই ক্ষান্ত থাকে না, সাথে বায়নাও ধরে বসে। আর শিশুর সহস্র বায়নার মধ্যে একটি পরিচিত বায়না হচ্ছে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গল্প শোনা। প্রকৃতপক্ষে শিশুদের গল্প শোনার আগ্রহ এত বেশি হয় যে মাস খানেকের মধ্যেই মায়েদের গল্পের ভাণ্ডার ফুরোতে শুরু করে।
তাই আজকের ব্লগে আমরা একেবারে নতুন দু’টি মজার গল্প বলবো যেগুলো আপনার শিশুর ঘুমোতে যাওয়ার আগের বায়না পূরণে সহায়ক হবে।
১. আলমারির ভূত
রাকিব অনেক ছোট থাকতেই অন্ধকার খুব ভয় পায়। এজন্য সে রাতে সবসময় তার ঘরের লাইট জ্বালিয়ে ঘুমোয়। কিন্তু একদিন তার বাবা বলল, ‘রাকিব তুমি এখন স্কুলে পড়, আগের মত ছোট নও, তাই আজ থেকে তোমাকে ঘরের লাইট বন্ধ করে ঘুমোতে হবে।’ এরপর কি আর করা, সে রাত থেকে রাকিব লাইট বন্ধ করে ঘুমায় আর রুমের মধ্যে একটু শব্দ হলেই ও ভাবে, এই বুঝি ভূত ওর ঘার মটকে দিলো!
একদিন হল কি, রাকিবের হঠাৎ মাঝরাতে কি একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। শব্দটা তার রুমের আলমারি থেকে আসছে। তো সে বালিশের নিচে রাখা টর্চ লাইট টি নিয়ে এক পা এক পা করে গেল আলমারির দিকে। যখনই সে আলমারি খুলে সেদিকে টর্চটি ধরল, তখনই এক ইয়ায়ায়ায়ায়া বিশাল এক ভূত এসে তার সামনে হাজির হল। তখন সে আর ভূত দুজনেই চিৎকার দিয়ে উঠল। কিন্তু রাকিব তখনই খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো যে, ভুতটি তার সামনে বাচ্চাদের মত কাঁদছে। দেখে রাকিবের কিছুটা ভয় ভাঙল এবং মায়াও হল। সে তখন গুটি গুটি পায়ে ভুতের আরও সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ভূত তুমি কাঁদছ কেন?” ভূত আরও হাউমাউ করে কেঁদে বলে উঠল, “কারণ তুমি এখন আমাকে খেয়ে ফেলবে, তাই।” শুনে রাকিব অনেক অবাক হল। পরে ভূত রাকিবকে আসল কাহিনী খুলে বলল। যে, ভুতের বাবা মা তাকে বলেছে, ঠিকমত না ঘুমালে মানুষের বাচ্চাদের কাছে নিয়ে তাকে ছেড়ে দিবে। আর মানুষের বাচ্চারা অনেক ভয়ংকর বলে তখনই ভুতকে খেয়ে ফেলবে।
এ কথা শুনে রাকিবের মনে পড়লো, তার বাবা মাও তো এরকম করেই ভুতের গল্প বলে। এরপর রাকিব ও ভূত, এই দুজনেরই ভুল ভাঙলো। তারপর থেকে রাকিব কখনই ভূতকে ভয় পায় না। আর মাঝে মাঝেই সেই আলমারির ভুতটি তার বন্ধুদের নিয়ে রাকিবের সাথে দেখা করতে আসে। আবার রাকিবও যখন বাহিরে ঘুরতে যায়, তখন তার ভুত বন্ধুকে তার সাথে নিয়ে যায়।
২. চুল চোর
রিমকি তার বাবাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। কারণ দিনের পর দিন সে লক্ষ্য করছে যে, তার বাবার মাথার চুল অল্প অল্প করে কমে যাচ্ছে। এই যেমন, গতকাল কে রিমকি তার বাবার মাথায় যতটুকু চুল দেখেছিল আজ দেখে তার মনে হচ্ছে চুলের পরিমাণ কালকের চেয়ে কিছুটা কম। একদিন রিমকি সকালে নাস্তার টেবিলে বসে বাবাকে জিজ্ঞেস করেই বসল, “আচ্ছা বাবা, তোমার মাথার চুল দিন দিন কমে যাচ্ছে কেন?” বাবা তার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলেন এবং বললেন, “আসলে এটা চুল চোরের কাজ।” রুমকির বাবা তার মাথার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, “আমি যখন রাতে ঘুমিয়ে পরি তখন এখানে একটা ছিচকে চোর আসে। প্রতি রাতে সে এসে একটা একটা করে চুল চুরি করে নিয়ে যায়, যত খুশি তত। আর তাকে থামানোর কোন উপায়ও আমার জানা নেই।”
এই কথা শুনে রিমকি ত আরও গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো। কিন্তু সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো যে, সে তার বাবাকে সাহায্য করবে। এরপর থেকে প্রতি রাতেই রিমকি বাবার মাথার পাশে জেগে থাকত। অন্তত, যতক্ষণ না তার ঘুম আসত। তারপর তার বাবা ঘুমের ঘোরে যখনই হালকা নাক ডাকতে শুরু করত তখনই সে পাশের রুম থেকে একটি স্টিলের স্কেল নিয়ে বাবার মাথার পাশে বসত। সে একেবারে খুব সতর্ক হয়ে অর্থাৎ কোন শব্দ না করেই বসে থাকার চেষ্টা করত। কারণ, সে চুল চোরটিকে বুঝতে দিতে চায় না যে, সে তাকে ধরার জন্য বসে আছে।
তারপর এক রাতে…
রিমকি চুল চোরকে ধরার জন্য নিঃশব্দে বাবার মাথার পাশে স্টিলের স্কেল নিয়ে বসে আছে। এমন সময় সে হঠাৎ বাবার মাথায় একটা ছায়ার মতন দেখল আর অমনি শরীরের সব শক্তি দিয়ে দিলো স্টিলের স্কেল দিয়ে এক ঘা! এরপর বিকট চিৎকারে তার বাবা মাথায় হাত দিয়ে উঠে গেল। উঠে দেখে পাশে রিমকি স্টিলের স্কেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা তার মাথা থেকে হাত সরিয়ে দেখে সেখানে অনেক বড় একটা আলুর জন্ম হয়েছে। বাবা ওঠার সাথে সাথেই রিমকি চিৎকার করে বলে উঠলো, “ওহহো বাবা, আমি চুল চোরকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম, কিন্তু কিভাবে যেন সে পালিয়ে গেলো!
এতক্ষণ পাশে বসে রিমকির মা সব শুনছিলেন, এবার তিনি উচ্চস্বরে হো হো করে হেসে উঠলেন। রিমকির মা তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এবার নিশ্চয় বুঝেছ, সন্তানকে আজগুবি গল্প বলার মজাটা কেমন…!” অতঃপর রিমকির বাবা তাকে চুল কমে যাওয়ার প্রকৃত ঘটনাটি বললেন। তিনি বললেন, “কোন চুল চোর আমার চুল চুরি করে নি আর চুল চোর বলে কিছুই নেই। আসলে, মানুষের যখন বয়স বারে একসময় এরকম করে চুল পরে যাওয়াটাই একটি স্বাভাবিক বিষয়। এখানে অবাক হওয়ার মত কিছুই নেই।
আরো পড়তে পারেন-
বাচ্চাদের জন্যে শিক্ষামূলক ৭টি মোবাইল এ্যাপ
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
2,435 total views, 3 views today