Show Categories

সন্তান লালন সংক্রান্ত গাইড, দেখুন তো না জেনেই এই ৬টি ভুল আপনি করছেন কি না?

আফসানা শিউলি একজন কর্মজীবী মা। তার দুটি সন্তান। কর্মজীবী হলেও সন্তান-লালন এর ক্ষেত্রে আফসানা শিউলি খুবই সতর্ক। তিনি প্রায়ই সন্তানদের স্কুলে যান। স্কুলে তাদের বন্ধুদের সাথে ও বন্ধুদের বাবা-মায়ের সাথে গল্প করেন। অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে প্রায় সময়ই তিনি তাদের সন্তান-লালন ‘এর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। মূলত, মিস. আফসানা প্রত্যেকের কাছ থেকে সন্তান-লালন এর ভাল ভাল উপায় গুলো জানতে আগ্রহী। যাতে করে, নিজ সন্তানদের লালন-পালনে সবচেয়ে উত্তম পন্থাটি প্রয়োগ করতে পারেন।

কিন্তু আমাদের সমাজের প্রকৃত চিত্র এমন নয়। সত্য কথা বলতে গেলে অনেক সময় ঠিক বিপরীত। যদিও সব বাবা-মাই চায় নিজের সন্তান-লালন ‘এর সবচেয়ে উত্তম পন্থাটি প্রয়োগ করতে। কিন্তু বেশিরভাগ মনোবিজ্ঞানীদের মতে  অনেক অভিজ্ঞ বাবা-মাও সন্তান-লালন ‘এ না বুঝেই মারাত্মক রকমের ভুল করে থাকেন।

তাহলে আসুন জেনে নেই, এরকম কিছু ভুল যেগুলো হয়ত আপনিও করছেন না বুঝেই!

১. চুরি করা তো খুবই খারাপ কিন্তু….!  

‘চুরি করবে না’ বা ‘কারও কিছু না বলে ধরবে না’ এই বাক্য দুটি  বাবা-মা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন। এটি অবশ্যই ভাল একটি উপদেশ। কিন্তু সন্তান লালন এর ক্ষেত্রে হতে হবে আরেকটু কৌশলী এবং নরম।

মনোবিজ্ঞানীগন এখানে শিশুদের অন্য একটি বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। তারা মনে করেন, শিশুরা বাবা-মা বা শিক্ষকদের বকা খাওয়ার ভয়ে কোন অন্যায় করলে বলতে চায় না। এই যে তাদের মাঝে বকুনির ভয়ে অন্যায় লুকিয়ে ফেলার যে একটা মানসিকতা তৈরি হয়েছে, এটি ভাল লক্ষণ নয়। তাই, আপনার সন্তান-লালন ‘এ সন্তান যা বলতে চাচ্ছে তা প্রথমে শুনুন এবং তা যেরকমই হোক, কোন রকম বকা-ঝকা না করে খুব সুন্দর করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করুন।

২. ‘বাচ্চাদের খারাপ লাগতে পারবে না’ এরকম ভাবাটা ভুল :

অনেক সময় বাবা-মা তাদের সন্তানদের কোন কিছুর জন্য কান্নাকাটি বা রেগে যাওয়া দেখলে বিরক্ত হন। অর্থাৎ, সন্তানের রেগে যাওয়া বা কান্না করা যাবে না’- বাবা-মায়ের এরকম মনে হওয়াটা খুবই ভুল একটি বিষয়। যেমন অনেক সময় বাচ্চারা রেগে গেলে খেলনা ছুড়ে ফেলে বা কোন কিছু না পেলে চিৎকার শুরু করে। এরকম সময়ে আমরা প্রায়ই সন্তানদের ধমক দিয়ে থাকি। আর মনে করি যে এই ধমক দেয়াটা তো খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়।

কিন্তু মনোবিজ্ঞানী রা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সন্তান লালন এর ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের এহেন আচরণ বিপদজনক বিপদজনক।এখানে সন্তানদের ধমক দেয়ার বদলে কেন তারা কাঁদছে এর কারণ বের করার চেষ্টা করা উচিত।

৩. আমার বাচ্চাকে সবাই ভাল বললেই সে ‘ভাল’ :

‘আমার ছেলে কে এ পাড়ার সবাই পছন্দ করে’ -এটি প্রায় সব বাবা-মাই মনে করেন। কিন্তু, যদি বলা হয় যে এটা  আদর্শ সন্তান লালন এর অন্তরায়, তাহলে অবাক হবেন না কিন্তু! কারণ, এটাই প্রকৃত সত্য।

বাবা মায়েরা প্রায়ই সন্তানদের সবার সাথে মিলেমিশে চলার কথা বলে থাকেন, যা খুবই ভাল উপদেশ। কিন্তু এই উপদেশ পালন করতে গিয়ে তারা অনেক অন্যায়কেও নীরবে মেনে নেয়। এবং এটিই সন্তানের মানসিক বিকাসের বাধা বলে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন।

৪. পরীক্ষায় ভাল না করলে জীবনে কোন উন্নতি করতে পারবে না :

এই কথাটির সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। অর্থাৎ বর্তমান বাবা মায়েরাও যখন ছোট ছিলেন, তখন তারাও নিশ্চয় এই  উপদেশ শুনেছিলেন!  এ কথা  সত্য যে, বর্তমান সময় অনেক প্রতিযোগিতার সময়। তাই বলে পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে সে প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়া যায় না। জয়ী হতে হয় মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাবা-মায়েরা সন্তান-লালন ‘এর ক্ষেত্রে প্রায়ই সন্তানের স্কুলের রেজাল্ট এর জের টেনে নিয়ে আসেন, সন্তানের যোগ্যতা প্রমানের জন্য। এর দ্বারা আপনি একে ত মস্ত ভুলই করছেন, আবার উলটো সন্তানের যতোটুকু প্রতিভা আছে, সেটুকুও নষ্ট করে দিচ্ছেন।

এটা আমার কথা নয়, মনোবিজ্ঞানীদের কথা। বিশ্বাস না হলে এই লিংকে গিয়েই দেখুন!

৫. বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের জন্য দামি দামি খেলনা ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন :

সম্প্রতি আমেরিকার  মনোবিজ্ঞানীগন গবেষণা করে বের করেছেন  যে, ‘প্রতি বছর বাবা-মা সন্তানদের মানসিক বিকাশের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় কতে খেলনা কিনে থাকেন।’ দামী খেলনা ক্রয়ের এই ব্যয়ে হার দিন দিন বাড়ছে ফলে অনেকেই খরচের ভয়ে সন্তান নেয়াতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে এটিও সন্তান-লালন ‘এর ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের একটি বড় ভুল ধারনা। কারণ, প্রায় সব বিজ্ঞানী বা মনীষিগন দামি খেলনা, এমনকি কোন খেলনা ছাড়াই বড় হয়েছে। সুতরাং, দামী খেলনা বা যন্ত্রপাতির সাথে সন্তানের মানসিক বিকাশের কোন সম্পর্ক নেই।

(আরো পড়তে পারেন- খেলনা নিয়ে যত কথা, এবং খেলনার ইতিহাস )

৬. পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু না কিছু করতেই হবে :

মালিহা জামান একজন গৃহিনী। তিনি তার একমাত্র মেয়ের পড়ালেখাসহ সার্বিক উন্নয়নের প্রতি খুবই মনযোগী। তার মেয়ে মাইশা, স্কুল শেষ করে সপ্তাহে ৩ দিন শিশু একাডেমিতে গান শেখে। আর তিন দিন শেখে আর্ট। এছাড়া সপ্তাহে বাকি ১ দিন স্কুলের অভিনয় গ্রুপের সাথেও সে অভিনয় চর্চা করে মাইশা। মা হিসেবে মালিহা জামান এ নিয়ে খুবই গর্ব বোধ করেন যে তার সন্তান অন্যদের চেয়ে দ্রুত জ্ঞানী হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন এর সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে বাচ্চারা কখনই জোর করে ঘারে কিছু চাপিয়ে দিলে শিখতে পারে না যতক্ষণ না তাদের নিজেদের মত করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তাই সঠিকভাবে সন্তান-লালন ‘এর জন্য তাদের প্রতিদিন কিছু সময় নিজের মত করে ছেড়ে দিন।

প্রত্যেক বাবা মাই চায় তার সন্তান আদর্শ মানুষ হোক। পড়ালেখা, খেলাধুলা ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই তারা সবার থেকে এগিয়ে থাকুক। তাই, তাদের মানসিক বিকাশের জন্য, পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য বাবা-মায়ের থাকে নিরন্তর প্রচেষ্টা। কিন্তু সন্তান-লালন ‘এর ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই নিজের অজান্তেই এমন অনেক ভুল করে চলেছি যেগুলো সন্তানদের উন্নতির জন্য হচ্ছে বাধা।

(আরো পড়তে পারেন- সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত? দেখে নিন ৯টি সমাধান! )

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,510 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment