গতি অসুস্থতা (Motion Sickness) বা গাড়িতে উঠলে বমি বমি ভাব কমবেশি সবারই হয়। কারও বেশি পরিমাণে কারও কম। কিন্তু গতি অসুস্থতা হয় না বা কারও নেই এ কথা একেবারেই ভুল। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে ভ্রমণের কথা উঠলে গতি অসুস্থতা বা গাড়িতে বমি হওয়া ত একেবারে সাধারণ একটি বিষয়। স্থল, জল বা আকাশ যেকোনো পথেই গতি অসুস্থতা হতে পারে। বিশেষ করে দূরপাল্লার ভ্রমণে যেকোনো শিশুরই গতি অসুস্থতা হয়ে থাকে। এজন্যে অনেকেই নিজেদের মত করে অনেকরকম পথ্য ও নানারকম উপায় বের করেন এ বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্যে। আসুন আজ আমরা জেনে নিব সেরকমই আরও অনেক উপায় যেগুলোর দ্বারা আমরা ভ্রমণে শিশুদের গতি অসুস্থতা দুর করতে পারি।
প্রথমেই যে কাজগুলো ভ্রমণে থাকার সময় অথবা গাড়িতে চড়ার আগে করবেন না:
১. বাচ্চাদের কোনপ্রকার ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত রাখুন। উদাহরণস্বরূপ, চকোলেটে সাধারণত ক্যাফেইন থাকে, তাই বাচ্চার গতি অসুস্থতা এড়াতে ভ্রমণের পূর্বে বা সে সময় তারা যেন এ জাতীয় খাবার না খায়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
২. গাড়িতে ওঠার পূর্বে পেট ভরে খাওয়া আবার একেবারেই খালি পেটে ওঠা থেকে বিরত থাকুন।
৩. ভ্রমণের সময় বাচ্চাদের বই পড়া বা মোবাইল গেমস খেলা থেকে বিরত রাখুন।
৪. গতি অসুস্থতা এড়াতে বাচ্চাদের সামনে ভ্রমনকালিন সময়ে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
(পড়তে পারেন- ধূমপানের ফলে যেভাবে ভেঙে পড়ে শিশুর স্বাস্থ্য
গতি অসুস্থতা দূর করতে যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করতে পারেন:
১. গতি অসুস্থতা এড়াতে বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে পারেন। তবে তার মানে পেট পুরে নয়। পানি ঠাণ্ডা হলে ভাল হয়।
২. বাচ্চার মুখে আর মাথায় হালকা পানির ঝাপটা দিতে পারেন। এক্ষেত্রেও পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা হলে ভাল।
৩. সম্ভব হলে বাচ্চাকে শুইয়ে দিন। শুইয়ে রাখা সম্ভব না হলে সামনের সীটের সাথে শক্ত করে বাচ্চাকে মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখতে বলুন।
৪. গতি অসুস্থতা এড়াতে দিনের চেয়ে রাতে ভ্রমণই বেশি কার্যকর। তাই ভ্রমণে বাচ্চাকাচ্চা থাকলে রাতে ভ্রমণ করতে চেষ্টা করুন।
৫. (আমাদের দেশের শহুরে লোকাল বাসগুলোর ক্ষেত্রে) বাসের সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসুন। আবার (হাইওয়েতে চলা বড় বাসগুলোর ক্ষেত্রে) গাড়ির মাঝখানের সিটে বসুন। অথবা গাড়ির চাকার উপরের সিটটিতেও বসতে পারেন। গতি অসুস্থতা থেকে রেহাই পেতে অনেকেই এ পদ্ধতিটি প্রয়োগ করেন।
৬. আবার যদি প্লেনে থাকেন, তাহলে প্লেনের পাখার উপরের সিটে বসুন। যদি লঞ্চে যাত্রা করেন, তাহলে যেদিকে লঞ্চ যাচ্ছে বাচ্চাকে নিয়ে সেদিকে মুখ করে বসুন।
৭. এরোমা থ্যারাপি নিন :
এরোমা থ্যারাপি মানে সুগন্ধি থ্যারাপি। অনেকেই দাবি করেন, ভ্রমণে সুগন্ধি ব্যাবহার করে তাদের গতি অসুস্থতার উন্নতি হয়েছে। সুতরাং, ভ্রমণে সাথে সুগন্ধি রাখতে পারেন।
৮. মুখে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা বাতাস লাগতে দিন :
গাড়িতে এসি থাকলে একেবারে মুখ বরাবর এসি রেখে, মাথা সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখুন। একেবারে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গতি অসুস্থতার উন্নতি হবে। আর আপনি যদি এসি বাসে না থাকেন, তাহলে বাচ্চাকে জানলার পাশে বসিয়ে মুখে বাতাস লাগতে দিন।
৯. আকুপ্রেসার পদ্ধতি প্রয়োগ করুন :
আকুপ্রেসারের অনেক পদ্ধতি আছে যেগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে আপনার সন্তান গতি অসুস্থতার হাত থেকে রেহাই পেতে পারে। যেমন:- সন্তানের হাতের কব্জির উপর তিন আঙ্গুল পর্যন্ত মাপ দিয়ে তার পরের অংশটির উপর আরেক হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন। চাপ দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রেখে ছেড়ে দিয়ে আবার চাপ প্রয়োগ করুন। গতি অসুস্থতা দুর করার এ পদ্ধতিটির মতো আরও অনেক পদ্ধতি প্রাচীন চীন জাপানে আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এর অনেকগুলো এখনও প্রচলিত আছে।
১০. আকুপ্রেসার রিস্ট ব্যান্ড :
গাড়িতে উঠলে যাদের গতি অসুস্থতা খুব সাধারণ একটি বিষয় তাদের জন্য আকুপ্রেশার পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কিছু রিষ্ট ব্যান্ড পাওয়া যায়। আপনার সন্তানের জন্য এগুলো ব্যাবহার করতে পারেন। উপরের আকুপ্রেশের পদ্ধতিটিই এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ হাতের যে অংশে আঙ্গুল দিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে হত, সে অংশে একটি ছোট মার্বেল পাথর রেখে এ ব্যান্ড টি তৈরি করে হয়েছে।
এছাড়া গতি অসুস্থতা প্রতিরোধে অনেকে বিভিন্ন রকম মেডিসিন বা ডাক্তারি পথ্য ব্যাবহার করে থাকেন। যদিও শতভাগ গতি অসুস্থতা দুর করার নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। তারপরেও আগামী ব্লগে শিশুদের গতি অসুস্থতার ঘরোয়া কিছু সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো।
আরো পড়তে পারেন- শিশুদের ডিজিটাল আসক্তি থেকে সাইবার সিকনেস, আপনার সন্তানও আক্রান্ত নয় তো?
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,107 total views, 1 views today