মজার বিজ্ঞান এর আজকের পর্বটা খুব ইন্টারেস্টিং! আচ্ছা, তোমরা কি বন্ধুদের সাথে কাদামাটি নিয়ে খেলতে পছন্দ করো? কাদামাটি দিয়ে খেলা আসলেই অনেক মজার। আবার যারা সমুদ্রে ঘুরতে গিয়েছ তারা ত জানই যে সমুদ্র সৈকতের বালি দিয়ে খেলা করা কতই না আনন্দের। বালি দিয়ে ইচ্ছেমত মূর্তি-দালান ইত্যাদি তৈরি করা, তারপর গর্ত করে বালির ভেতর লুকিয়ে থাকা এরকম অসংখ্য খেলা নিশ্চয়ই খেলেছো সৈকতে! কিন্তু তোমরা কি কখনো ভেবেছো, এই মাটির নিচে কী আছে? হ্যাঁ, তোমাদের সাথে আমিও একমত। মাটির নিচে মাটিই আছে। কিন্তু তোমরা কি জানো, যে এই মাটি কয়েকটি স্তরে বিভক্ত?
আচ্ছা একটু ব্যাখ্যা করে বলছি। তোমাদের পায়ের নিচে যে মাটি আছে এটা খুড়ে দেখো। হুবহু এরকমই মাটি বের হচ্ছে। তাই না? কিন্তু তোমরা কি জানো, অনেক ভেতর পর্যন্ত খুঁড়লে এইরকমের মাটি শেষ হয়ে নতুন রকমের মাটি, পাথর বা অন্য কোন বস্তু পাওয়া যাবে। এমনকি খুড়তে থাকলে একসময় লোহার মত শক্ত ধাতু, কয়লা, পাথর বা নানারকম ধাতব বস্তু পাওয়া যাবে। এবং সব গুলো জিনিসের প্রত্যেকটিই কোন না কোন স্তরে থাকে।
তোমরা প্রত্যেকেই বার্গার, জন্মদিনের কেক, স্যান্ডুইচ খেয়েছ নিশ্চয়। এগুলো কাটার পরে ভেতরের স্তর (Layer) লক্ষ্য করেছ কি ! আবার বাসায় আম্মু রান্নার সময় পেয়াজ, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজির ভেতরে লক্ষ্য করলে দেখবে যে এগুলো একটা স্তরে স্তরে সাজানো। ঠিক তেমনই আমাদের পৃথিবীর মাটিও কয়েকটি স্তরে সাজানো।
তাহলে এখন এসো মাটির স্তরগুলো এবং এর উপর মজার কিছু বিষয় দেখে আসি।
পৃথিবীর মাটি পাঁচটি স্বতন্ত্র মানে আলাদা স্তরে (Layer) বিভক্ত।
#1. O Horizon
যে স্তরটিতে আমরা হাটি সেটাকে বলে ও-হরাইজন (O Horizon) বা ভূ-ত্বক।
মাটির ৫ টি স্তরের মধ্যে এটাই প্রথম স্তর। এ স্তরেই উদ্ভিদ, তৃণলতা, জীবজন্তু সহ পৃথিবীর সব পচনশীল বস্তু পচে উর্বর মাটি হয়ে থাকে। আর এ স্তরের মাটির উর্বরতা ও এই উর্বরতার ধরনের উপর ভিত্তি করেই তৃণলতা-বৃক্ষাদির কম-বেশি আর পার্থক্য হয়ে থাকে। মাটির ধরনের উপর নির্ভর করে এই স্তরের মাটি হতে পারে পুরু বা মোটা, পাতলা এমনকি একেবারেই পাতলা যেটা থাকা না থাকার সমান।
#2. A Horizon
ঠিক এই স্তরের নিচেই থাকে যে স্তরটি রয়েছে, তার নাম ‘এ-হরাইজন’ (A Horizon) বা অশ্মমণ্ডল। এটাকে অনেকে টপ সয়েল (Top soil) অর্থাৎ সবচেয়ে উপরের স্তরের মাটিও বলে থাকে।
এই স্তরেই আমরা বৃক্ষ রোপণ করি আর শস্য উৎপাদনের জন্য বীজ বপন করি। মাটির এই স্তরেই গাছপালা, তৃণলতার শেকড় থাকে যেগুলো থেকে গাছ সুস্বাদু ফল উৎপন্ন করে। এই স্তর বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আর জৈবকনা দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। এই স্তরের মাটি অনেক নরম এবং ঝরঝরে থাকে যাতে করে গাছপালা তার শিকড় খুব সহজেই মাটির নিচে বিস্তৃত অর্থাৎ ছড়িয়ে দিতে পারে। আবার এ স্তরই যাবতীয় কীট আর গর্ত করে থাকা প্রাণীর আবাস।
#3. B Horizon
‘এ-হরাইজনের’ নিচে রয়েছে ‘বি-হরাইজন’ (B Horizon) বা এস্থোনস্ফিয়ার (Asthenophere). অনেকে এই স্তরকে অন্ত-মৃত্তিকা বা Subsoil বলে থাকে।
এ স্তরের মাটি অনেক শক্ত এবং দৃঢ়। একমাত্র বড় বড় গাছের শিকড় এ স্তর পর্যন্ত পৌছাতে পারে। অনেক যুদ্ধ করে বড় গাছগুলোর শেকড় এ পর্যন্ত গিয়ে কিন্তু অনেক মূল্যবান সম্পদ নিয়ে আসে। কারণ, এ স্তর গাছের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানে পরিপূর্ণ থাকে।
#4. C Horizon
এখন আমরা আসি পরবর্তী স্তরে, যার নাম সি-হরাইজন (C Horizon) বা গুরুমন্ডল (Mantle).
এই স্তরের মাটিগুলো পাথুরে কিন্তু এর পাথর যেরকম শক্ত ভাবছ সেরকম শক্ত নয়। একে বিজ্ঞানীরা অতি ঘন, আঠালো, চটচটে বলে অভিহিত করে থাকেন। আর হ্যাঁ, এই স্তরের মাটিতে এমন কোন খনিজ উপাদানই থাকে না যেগুলো গাছের কাজে লাগবে। এছাড়া ‘বি-হরাইজন’ থেকে এই স্তর অপেক্ষাকৃত অনেক শক্ত বলে এখানে গাছের শেকড়ও প্রবেশ করতে পারে না।
#5. Bedrock
আর এখন চলে আসলাম মাটির স্তরের সবচেয়ে শেষ স্তরে। এর নাম নিশ্চয় তোমরা এতক্ষণে জেনে গেছো! হ্যাঁ, ওপরের ছবিতে দেখেছো নিশ্চয়ই। বেডরক (Bedrock) বা কেন্দ্র মণ্ডল (Core).
এটা পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত। তোমরা বৃত্ত অঙ্কনের সময় এর মাঝে যে একটা কেন্দ্র থাকে ঠিক এরকম কেন্দ্রেই এই স্তরটির অবস্থান। এই স্তরে কোন মাটি নেই, একেবারে শক্ত পাথর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই পাথর শক্তিশালী কোন লোহার চেয়েও শক্ত। আর তা ত হতেই হবে, কারণ, এর উপরেই মাটির অন্যান্য স্তর গুলো দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলো স্তরকেই সে তার কাঁধে বহন করছে।
এখন তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো যে অনেক লম্বা আর বড় কিছুর নিচের অংশ অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি পরিমাণে শক্ত হতে হয়। যেমন তুমি একটি ৫ তলা বাড়ি বানাবে, তাহলে নিচতলা হতে হবে বাকি সব তলার থেকে বেশি শক্তিশালী। না হলে একটু ভূমিকম্পেই কিন্তু…
আরো কয়েকটি মজার তথ্যঃ
তোমরা কি জানো মাটির ক্ষেত্রেও মৃত মাটি বা ডেড-সয়েল আছে।
শুনে হয়ত খুব অবাক হচ্ছো যে মাটির ত জীবন নেই, এর আবার জীবিত-মৃতের কি আছে !
যে মাটিতে গাছ লাগালে গাছ মরে যায়, সেগুলোকে ডেড সয়েল (Dead Soil) বলে।
আরো একটি মাটির স্তর আছে যেটা ‘এ’ এবং ‘বি’ হরাইজনের মাঝে থাকে।
এর নাম এলুভিয়েশন স্তর (Eluviation Layer) অথবা এক কথায় ‘ই-হরাইজন’ (E Horizon)
আরো পড়তে পারো- মজার বিজ্ঞান- পানিচক্র
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,879 total views, 1 views today