সন্তানের জন্য আপনি সবসময় সবচে’ ভালোটাই চিন্তা করেন। তার ভবিষ্যতের জন্য দরকারি সব অভ্যাস গড়ে তোলেন ছোটবেলা থেকেই। সেই সকল অভ্যাস এর মধ্যে ফ্রি রাইটিং (Free Writing) রেখেছেন তো?
ফ্রি রাইটিং বলতে মূলত অবাধে লেখার অভ্যাস বোঝায়,একটা নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে কেবল কলম চালিয়ে যাওয়া;যেখানে শব্দের বানান,বাক্যের গ্রামার বা লেখার টপিকের কোনো বালাই নেই।তৎক্ষণাৎ মনে যা আসবে তাই লিখে যাওয়া,এমনকি তা অন্য কারো পড়বার ও দরকার নেই।মানুষের সহজাত লেখার প্রবৃত্তি আছে, আর শিশুদের জন্য তা আরো বেশি দরকার কেননা শিশুরা অনেকসময়ই লাজুক স্বভাবের হয়,নিজেদের মনের সব কথা বলে বোঝাতে পারেনা;নিজেদের ভালো লাগা-মন্দ লাগা গুলো গুছিয়ে বলতে পারেনা অনেক শিশু,লজ্জা পায়,ভয় পায়।কিন্তু লিখে বলতে হলে ঠিকই পারে।লেখকদের জন্য ফ্রি রাইটিং এর গুরুত্ব সকলেই জানেন,কিন্তু আপনার সন্তানের জন্য ফ্রি রাইটিং এর অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই দরকারি।
১।একাডেমিক পড়াশোনায় সহযোগিতা
ফ্রি রাইটিং এর অভ্যাস একাডেমিক পড়াশোনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।আজকের শিক্ষা ব্যবস্থায় মুখস্থ করার রীতি দিনকে দিন বিলুপ্ত হচ্ছে,এখন বরং সৃজনশীল পড়াশোনার যুগ,যেখানে পড়ে বুঝে নিজের মত করেই অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় শিক্ষার্থী কে।ফ্রি রাইটিং এর অভ্যাস থাকলে সেই ধাপে সফল হওয়া যাবে আরো সহজে।
২।জাগিয়ে তুলুন ভিতরকার লেখক কে
বড় বড় লেখকদের জীবনী পড়লে দেখা যায় খুব ছোট বয়স থেকেই কলম ধরেছিলেন তারা।১৫ বছর বয়সে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।অ্যালেক্সান্ডার পোপ ১২ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা লিখেন।ফ্রি রাইটিং এর অভ্যাস আপনার সন্তানকে দিবে নিজের মত লেখার স্বাধীনতা,চিন্তা করার স্বাধীনতা।কে জানে এই লেখার অভ্যাস তাকে ভবিষ্যতে হয়ত একজন অসাধারণ লেখক করে তুলবে।
৩।কল্পনার জগতে স্বাগতম
মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, “ইমাজিনেশন ইজ বিগার দ্যান নলেজ”,জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে,কিন্তু কল্পনার নেই।কল্পনার রাজ্যে তাই কোনো বাধা,নিষেধ,নিয়ম,কানুন নেই।তাই কল্পনার জগতে শিশু তার মনের মত করে সাজাতে পারে সকল কিছু, গড়ে ওঠে ক্রিয়েটিভিটি।যা তাকে একজন সৃষ্টিশীল মানুষে পরিণত করবে।
৪।নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা
ফ্রি রাইটিং এর মাধ্যমে শিশু নিজেকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারে,নিজের চিন্তা এবং অনুভূতি গুলোকে রিলেট করতে পারে।নিজের অ্যাকশন এবং রিঅ্যাকশন এর ব্যাপারে সচেতন হতে পারে।নিজের কাজ এবং অন্যদের কাজের পার্থক্য আর সামঞ্জস্য বুঝতে পারবে।
৫।বৃদ্ধি করে লেখার গতি
যে কোনো কাজ যত বেশি চর্চা করা হয় তাতে দক্ষতা তত বৃদ্ধি পায়,লেখালেখি ও তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়।ফ্রি রাইটিং এর মাধ্যমে আপনার সন্তানের হাতে লেখার গতিই নয় শুধু টাইপিং স্পীড বাড়িয়ে তুলতে পারেন।তাকে উৎসাহিত করুন টাইপ করে লেখায়।এতে টাইপিং স্পিড বৃদ্ধি পাবে।ফ্রি রাইটিং এর মাধ্যমে একদিকে যেমন আপনার সন্তান একাডেমিক জীবনে দ্রুত লিখতে পারবে তেমন দ্রুত টাইপ করার ক্ষমতা তাকে সাহায্য করবে ভবিষ্যৎ জীবনে প্রফেশনাল লাইফ এর কঠিন যুদ্ধে।
৬।নিরবিচ্ছিন্নভাবে একটি বিষয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
একাধারে লেখার সময় ব্রেন চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।অন্যান্য সময় বিবিধ চিন্তায় এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়,একাধারে লেখার মাধ্যমে তা একটি সরলরেখায় চিন্তা করার সুযোগ পায়।একটি রেখায় চিন্তা করার এই ক্ষমতা মানুষের জীবনে খুবই বিরল।কিন্তু লেখার সময় ব্রেনে এক ধরনের মেডিটেশন ঘটে যার কারণে বিবিধ দিকে ছুটে যাওয়া মনকে কেন্দ্রিভুত করা যায় একটি বিন্ধুতে।
৭।ব্রেইন কে আরো ধারালো করে তোলে
লেখালেখির সময় ব্রেনের স্মৃতি এবং মোটর স্কিলগুলো একত্রে কাজ করে।জ্ঞানের চর্চা হতে থাকে,ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।ব্রেনকে করে তোলে আরো সচল,বেড়ে যায় স্মৃতিশক্তি।ব্রেনের নার্ভ এর সিগনাল রিসিভিং পাওয়ার বেড়ে যায়।এভাবে ব্রেনের ব্যায়াম এর মাধ্যমে ব্রেইন হয়ে ওঠে আরো ধারলো।
৮।দুঃখ দুর করার ওষুধ
ফ্রি রাইটিং কে বলা হয় স্ট্রেস রিলিভার,লেখালেখির মাধ্যমে শিশুর মানসিক দুঃখবোধ,যন্ত্রণা,অপমান এর অবসান ঘটে।কথায় বলে,নিজের দুঃখের কথা অপরের কাছে বললে মন হাল্কা হয়।অনেক সময়ই শিশুরা নিজেদের শিশুসুলভ আচরণের জন্যই লজ্জিত হয়,অপমান বোধ করে।মনের ভিতর চাপা কষ্ট জমিয়ে রাখে।লজ্জায়,অপমানে তা কারো সাথে শেয়ার করতেও চায়না।লিখে প্রকাশ করা এক্ষেত্রে একটি ভালো সমাধান হতে পারে।
৯।ডায়রি হোক সেরা বন্ধু
সব কথা কি সবাইকে বলা যায়??কিন্তু লেখা তো যায়।হ্যাঁ,তাই আপনার লেখার সেই ডায়রিটি হোক আপনার শিশুর সেরা বন্ধু।মন খুলে নিজের চিন্তা,ভাবনা,ইচ্ছা সব শেয়ার করে ফেলা যায় ডায়রিতে।আর রক্ত মাংসের বন্ধু কষ্ট দেয়,কখনও কখনও দূরেও চলে যায়।কিন্তু ডায়রি সেই বেঈমানি একদম করেনা।তাহলে এবার নতুন বন্ধু বানাতে দেরি কিসের?
তাই এবার শিশুর দৈনন্দিন কাজের এর মধ্যে ফ্রি রাইটিং এর অভ্যাস কে যুক্ত করুন।তাকে বেঁধে নিন একটা নির্দিষ্ট সময়।স্বাধীনভাবে আপনার সন্তান প্রকাশ করবে তার চিন্তাভাবনা,ইচ্ছা,আকাঙ্ক্ষা,অনুভূতি।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,015 total views, 1 views today