একটা সময় ছিলো সন্তানের খেলাধুলার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ থাকলে বাবা-মা বকেঝকে হাত থেকে ব্যাট-বল কেড়ে নিয়ে জোর করে বই ধরিয়ে দিতো! এছাড়া আর উপায় বা কী ছিলো! কী হতো খেলাধুলা করে! জীবনে কিছু করার জন্য চাই বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা। সেই দিন অবশ্য বদলে গেছে, আর বদলে গেছে বলেই আমরা সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাসরাফি, মামুনুল, মাবিয়াদের মতো দেশ বরেণ্য খেলোয়াড় পেয়েছি। আপনার সন্তানের খেলাধুলায় প্রবল আগ্রহ থাকলে এখন আর তাকে জোর করে বইয়ে মুখ গুঁজিয়ে রাখতে হবে না। খেলাধুলা দিয়েই সে সফল হতে পারবে। নিজের জন্য, দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারবে। পরবর্তী প্রজন্মের সাকিব, মামুনুল, মাবিয়া হতে পারবে। কিন্তু শুধু খেলাধুলায় প্রবল আগ্রহ থাকলেই কী হয়ে যাবে? না! পড়ালেখার মতো খেলাধুলার মেধাকে শাণিত করার জন্যও লাগবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আর খেলাধুলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথা আসলেই সবার আগে আসবে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(বিকেএসপি) এর কথা।
হ্যা, আমরা আজকে জানবো বিকেএসপিতে ভর্তি প্রক্রিয়া, বিকেএসপির বিভিন্ন বিভাগ সর্বোপরি বিকেএসপি সম্পর্কে।
মজার বিষয় হচ্ছে, বিকেএসপি-এর পুরো নাম বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও তারা শুধু খেলাধুলা শেখায় না। খেলাধুলার পাশাপাশি এখানে সমানতালে চলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখাও। ৪র্থ শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ আছে এখানে।
বিকেএসপিতে ভর্তি হতে কী কী লাগবে?
বিকেএসপি-তে ভর্তি হতে তেমন কিছুই লাগবে না। লাগবে শুধু খেলাধুলার প্রতি তুমুল আগ্রহ। হ্যাঁ, সাথে শারীরিক যোগ্যতা। শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে আর ভালো শারীরিক উচ্চতা। তবে আপনার সন্তান যদি কোন ধরণের খেলায় বেশ ভালো প্রতিভা সম্পন্ন হয় তাহলে বিকেএসপি শারীরিক কম উচ্চতায় বিষয়টি বিবেচনায় রাখে।
কারা ভর্তি হতে পারবে?
১০-১৫ বছর বয়সের, খেলাধুলায় পারদর্শী যে কেউ বিকেএসপি-তে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মধ্যে নির্দিষ্ট খেলার জন্য নির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করে দেয় বিকেএসপি। সাথে শারীরিক যোগ্যতাও।
বিকেএসপি-তে কোন কোন খেলার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়?
মোট ১৭ রকমের খেলাধুলার জন্য বিকেএসপি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। সেগুলো হলো, ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল, বক্সিং, অ্যাথলেটিকস, জিমন্যাস্টিকস, সাঁতার, টেনিস, টেবিল টেনিস, শ্যুটিং, জুড়ো, আর্চারি, ভলিবল, তায়াকোয়ানডো, উশু, কারাতে।
ভর্তির নিয়ম ও প্রাথমিক বাছাই
প্রতিবছরই বিকেএসপি ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিকেএসপি-তে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন খেলার জন্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবেদন আহবান করে। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় আবেদন প্রক্রিয়া। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি জানার জন্য বিকেএসপি ওয়েবসাইটে নজর রাখলেই হবে। ২০২০ সালের ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে জানুয়ারির ২ তারিখ পর্যন্ত। আবেদন করতে হয় অনলাইনে। অনলাইনে আবেদন করার পর অনলাইনে বিকেএসপি-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে একটা অনলাইন ফরম পাওয়া যাবে। সেই ফরম পূরণ করে ও বিকেএসপি-এর দেয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়। এরপর বিকেএসপি দেয়া নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে এসে দিতে হয় পরীক্ষা।
বাছাই করা হয় তিন ধাপে।
১ম ধাপে স্বাস্থ্য ও বয়স পরীক্ষা করা হয়। ২য় ধাপে শারীরিক সক্ষমতা দেখা হয়। আর তৃতীয় ধাপে শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় মাঠে। সেখানে শিক্ষার্থীর আবেদন করা খেলায় তার পারদর্শীতা দেখা হয়।
এই তিন ধাপ যারা সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারে তাদের কে নিয়ে শুরু হয় ৭ দিনের একটি ক্যাম্প। সপ্তাহব্যাপী সেই ক্যাম্পে অংশগ্রহণের পর নেয়া হয় ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষার বিষয় বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান।
প্রথম ধাপ-স্বাস্থ্য পরীক্ষা
এ ধাপে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও বয়স দেখা হয়। বিকেএসপি-এর নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞ দ্বারা এই পরীক্ষা গুলো করা হয়। সেক্ষেত্রে সন্তানের বয়স নিয়ে কোন ধরণের অসত্য তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন। সত্য তথ্যটা তারা খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারবে।
দ্বিতীয় ধাপ-শারীরিক সক্ষমতা
আবেদন অনুযায়ী স্ব স্ব গ্রাউন্ডেই হয়ে থাকে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা। এখানে বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে স্পিড (গতি), স্ট্রেংথ (শক্তি), অ্যান্ডুরেন্স (দম), এজিলিটি (ক্ষিপ্রতা), ব্যালান্স (ভারসাম্য), ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা) যাচাই করা হয়। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনার সন্তানের এতটুকু শারীরিক সক্ষমতা লাগবেই। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আপনার সন্তানকে খেলোয়াড় বানাতে চাইলে খেলাধুলার পাশাপাশি তার শারীরিক ব্যায়ামের দিকেও সমান মনোযোগ দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ-ব্যবহারিক পরীক্ষা
এই ধাপটাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন। আবেদনকারীদের খেলার বিষয় অনুযায়ী ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হয়।
এই তিনটি ধাপই এক দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এখান টিকে গেলে সাত দিন ব্যাপী বাছাই পরীক্ষার ডাকা হয়।
৭ দিনের আবাসিক ক্যাম্প
সাত দিনের এই আবাসিক ক্যাম্পে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিজস্ব হোস্টেলে চূড়ান্ত নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু করা হয়। টানা ৭ দিন বিভিন্ন অনুশীলনে তাদের মেধা ও দক্ষতা যাচাই করা হয়। সঙ্গে লক্ষ্য করা হয় আবেদনকারীর আচার-আচরণ ও ব্যবহার।
এই পর্বের শেষ দিনে হয় ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। যেখানে বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। লিখিত পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস হয় পূর্ববর্তী ক্লাশের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী। অর্থাৎ ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে হবে, ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে ৩য় শ্রেণির সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। এই ক্যাম্পের পর চূড়ান্ত তালিকা প্রদান করা হয়।
বিকেএসপি ছাড়া অন্য কোথাও খেলাধুলা শেখার সুযোগ নেই?
আছে! তবে বিকেএসপি-র মতো অন্যান্য ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই সাথে খেলাধুলা ও প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার সুযোগ তেমন একটা নেই। তবে আপনার সন্তান যদি নির্দিষ্ট কোন খেলায় পারদর্শী হয়, আপনারও যদি সন্তানকে খেলোয়াড় বানানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে ঢাকা বা অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের যে কোন স্পোর্টস একাডেমিতে সন্তানকে ভর্তি করাতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,560 total views, 1 views today