ছোটদের নিয়ে ছুটির দিনে কোথাও কেন যাবেন?
কর্ম জীবনের ব্যস্ততায় এখন সব কিছুই অতীতের চেয়ে অনেক আলাদা। এখন পরিবারের সবাই মিলে একসাথে খাওয়াটাও যেন এক একটা ইভেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের এই দৌড়ে একটু ভালোভাবে জীবন যাপনের প্রত্যাশায় আমরা হয়ত শিশুদের ঠিক মত সময় দিতে পারছি না। পুরো সপ্তাহের অফিসের জমে যাওয়া কাজগুলো সপ্তাহান্তে করতে হয়। বাচ্চার স্কুল বন্ধ, নিজেদের অফিস বন্ধ, তবুও যেন ব্যস্ততাকে ছুটি জানাতে পারছি না। এতে করে হয়ত আমরা নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারব। কিন্তু আমাদের সন্তানরা কি মানসিক স্বস্তি নিয়ে বেড়ে উঠছে? উত্তরটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিক্ত। মানসিক স্থিতির জন্য চাই আনন্দ, প্রকৃতির সাহচর্য আর পরিবারের সবার মিলেমিশে থাকা।
আচ্ছা, আজ কি আপনার ছুটির দিন? তবে এবার কাজকে কিছু সময়ের জন্য বিরতি দিন। উঠুন এবং চট করে বাসার সবাইকে তৈরি হতে বলুন। এখনই সবাই মিলে একটু নির্মল বাতাস খেতে বেরিয়ে পড়ুন। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আপনি এখন সেই সুখের খোঁজেই বের হচ্ছেন।
কিন্তু এই বায়ান্ন হাজার গলির শহরে আপনি নির্মল বাতাস আর শিশুদের প্রণোদনার জায়গা কোথায় পাবেন ভাবছেন? আপনাকে তাই আজ জানাব ঢাকা ও এর আশেপাশে এমন কোথায় কোথায় যেতে পারেন।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, মিরপুর
সামনে থেকে বাঘ সিংহের গর্জন, বানরের লাফালাফি, ময়ূর, হরিণের অবাধ চলাফেরার কারণে শিশুদের কাছে ঘুরে বেড়ানোর জন্যে সবচেয়ে আনন্দের জায়গা হলো চিড়িয়াখানা। ০-২ বছরের বাচ্চাদের টিকেটের প্রয়োজন হয় না। অনেক গাছ পালার সমারোহের কারনে ছোটদের পাশাপাশি ভালো লাগবে বড়দেরও।
ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন
গত কয়েক বছরে বোটানিক্যাল গার্ডেন যেন তার নিজ রূপ ফিরে পেয়েছে। সম্পূর্ন নিরিবিলি এবং নতুন গাছপালায় আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে। নির্মল বাতাস আর পাখ-পাখালীর কিচির-মিচিরে এ যেন গ্রামের পথ ধরে হারিয়ে যাওয়ার এক অন্যরকম অনুভূতি। শিশুদের খেলার জন্যে আছে বেশ কয়েকটি মাঠ। আছে ফুলের উদ্যান, লেক, কাঁচের তৈরি ঘর, ওয়াচ টাওয়ার। শিশুদের জন্যে বুক ভরে একটু নিঃশ্বাস নেয়ার জন্যে এরচেয়ে ভালো জায়গা আপনি আর পাবেন না। এটি ঠিক জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই অবস্থিত।
সন্তানের খেলাধুলা নিয়ে আরো পড়ুন- https://bigganbaksho.com/importance-of-playing-for-kids/
তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক, মিরপুর
চমৎকার সব রাইড নিয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধের পাশেই গড়ে উঠেছে এই ফ্যামিলি পার্ক। সুইমিং পুল থেকে শুরু করে লাঞ্চ, সন্ধ্যার খাবার সবই পাবেন এখানে। বাচ্চাদের খেলার সব উপকরণই পাবেন এখানে। ছুটির দিনগুলোতে তাই বেড়িয়ে আসতে পারেন।
শিশুমেলা
একের মধ্যে সব। শিশুমেলা হলো ছোট প্যাকেজে ভরপুর আনন্দ। রাজধানীর শ্যামলী এবং কলেজ গেটের মাঝামাঝি দূরত্বে পেয়ে যাবেন শিশুমেলা। অল্প সময়ে বেড়িয়ে আসতে চাইলে এখানে অবশ্যই যেতে পারে। (শিশুমেলার নাম পরিবর্তন হয়ে এখন “ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক” নামকরণ করা হয়েছে)।
যমুনা ফিউচার পার্ক
আধুনিক সব রাইড সেইসাথে ফিউচার পার্কের সিনেপ্লেক্স হয়ে যেতে পারে ছুটির দিনের কমপ্লিট প্যাকেজ। নর্দায় অবস্থিত ফিউচার পার্ক সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শিশুদের জন্যে আছে মজার সব আধুনিক রাইড।
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক
যানজটের এই শহরে আপনি যদি যাত্রাবাড়ি বা এর আশেপাশের বাসিন্দা হন তাহলে সায়েদাবাদ রেল ক্রসিং এর পাশেই ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক আপনার জন্যে। মাঝারি আয়তনের এই পার্কে শিশুদের সাথে বড়রাও যেতে পারেন তাদের ছুটির দিনটি উপভোগ করতে।
আহসান মঞ্জিল
বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে আহসান মঞ্জিল। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল সবার জন্যে উন্মুক্ত থাকে। প্রাচীন কালের নির্দশন এবং ইতিহাস জানানোর জন্যে আমরা শিশুদের এখানে নিয়ে যেতে পারি।
লালবাগ কেল্লা
বইপত্রে পড়া মোঘলদের ইতিহাস নিজের চোখে দেখতে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে পারেন পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লায়। মোঘল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে পরী বিবির মাজার। এখানে আছে দরবার হল, নবাবের হাম্মামখানা (গোসলের জায়গা)। আছে শাহী মসজিদ। রয়েছে একটি জাদুঘরও। খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
শিশুপার্ক
বাচ্চাদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থান হলো শিশুপার্ক। বইয়ে অনেক গল্প আছে শিশুপার্ক নিয়ে কিন্তু সেখানে অনেকেই যাননি। বাচ্চাদের নির্মল আনন্দ দিতে তাই এই ছুটির দিনেই চলে যেতে পারেন রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্কে।
জাতীয় জাদুঘর
এটিও শাহবাগে অবস্থিত। তিনতলা বিশিষ্ট এই ভবনে আছে প্রাকৃতিক নিদর্শন, আছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নির্মিত শিল্প। এছাড়াও আছে আমাদের দেশের হস্ত শিল্প, কুটির শিল্প, বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত অস্ত্র, চীনামাটির হস্তশিল্প। বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে জাদুঘর সবার পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
শনি থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট এবং শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘর সবার জন্য খোলা থাকে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
আমাদের বাঙালীর জাতির ইতিহাস জানাতে শিশুদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যেতে পারেন। এখানে আমাদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বাচ্চারা জানতে পারবে আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি মূহুর্ত সম্পর্কে । স্বাধীনতার সেই সময়ে আমাদের যারা সহযোগীতা করেছিল তাদের আমরা যেভাবে স্মরণ করেছি সেইসব নিদর্শন আছে। অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বাচ্চাদের সাথে এইসব ইতিহাসের যোগসূত্র গড়ে দেয়ার। নয়ত কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে আমাদের এই স্বাধীনতার ইতিহাস।
এবার হবে পেটপুজো
সারাদিন ঘোরাঘুরি করে নিশ্চয়ই খুব ক্ষিধে পাবে। তাই এবার জানিয়ে দিচ্ছি সেই সব জায়গার নাম।
মিরপুরের মধ্যে কাজি এসপারাগাস, সাগুফতা, মিরপুর ১ এ বেশ কিছু খাবারের জায়গা পাবেন। বেইলীরোড, বাসাবো, বনশ্রীতে পাবেন পছন্দের সব খাবার। এছাড়া পুরান ঢাকার কাচ্চি মিস করতে না চাইলে চলে যেতে পারেন নান্না বিরিয়ানি, হাজি বিরিয়ানিতে। ধানমন্ডিতে থাকলে আপনি স্টার কাবাব থেকে শুরু করে সীমান্ত স্কয়ার হতে মোহম্মদপুর পর্যন্ত অজস্র খাবারের দোকান পাবেন।
সারাদিন ঘোরাঘুরি করে একবুক প্রশান্তি নিয়ে আপনি যখন ঘরে ফিরবেন, তখন দেখবেন আপনার বাচ্চা কতটা স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজের কাজগুলো করছে। সারাদিনের ক্লান্তি যেন তাকে ছুঁতেই পারছে না আর। আপনিও এসব দেখে মনে ভালো লাগা অনুভব করতে পারবেন। এভাবেই ভালো কাটুক আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রতিটি ছুটির দিন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,944 total views, 1 views today