Show Categories

জীবনের লক্ষ্য; সন্তান অর্জন করা শিখুক ছোট থেকেই

জীবনের লক্ষ্য

স্কুলে জীবনের লক্ষ্য রচনায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথাতো আমরা সবাই লিখেছি, কিন্তু হতে পেরেছি কতজন! কতজন হতে পেরেছি তা না ভেবে চলুন ভাবি কতজন আমরা লক্ষ্যের পেছনে হেঁটেছি! আরো একটু পেছনে গিয়ে আপনি ভাবতে পারেন, আমরা আসলে জীবনের লক্ষ্য বিষয়টিকে তখন বুঝতাম কি না! লক্ষ্যের পেছনে হাঁটতে হয় তাও জানতাম কি না! জীবনে কিছু হতে চাওয়াতো অনেক লম্বা সময়ের লক্ষ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা আসলে লক্ষ্য সেট করেছি ঠিকই, কিন্তু সেই লক্ষ্যের পথে হাঁটিনি। গবেষণা বলছে লক্ষ্যকে ধরতে চাওয়া বা লক্ষ্যের পথে হাঁটাও অভ্যাসের ব্যাপার। কেউ একজন যদি ছোট থেকেই জীবনের ছোট ছোট লক্ষ্যগুলো স্পর্শ করতে পারে তাহলে তার মধ্যে একটা অভ্যাস ও আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। আর এই আত্মবিশ্বাসই সেই মানুষটাকে জীবনের বড় লক্ষ্যের দিকে যেতে সাহায্য করবে। হ্যাঁ, আপনি চাইলে আপনার সন্তানের মাঝেও লক্ষ্যের দিকে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন! ভাবছেন, ছোট বাচ্চা, সে আবার লক্ষ্যের বা লক্ষ্যের পেছনের ছোটার মতো এত ভারি বিষয় কী এমন বুঝবে! জীবনে কি হতে চাও; এই কথা তাকে জিজ্ঞেস করলে সেও অন্য সবার মতোই বলবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ক্রিকেটার এমন কিছুই। সে সবের পথে হাঁটা তাকে আপনি কীভাবে শেখাবেন! আমরা আসলে সেসব নিয়ে কথা বলবো না! আমরা আজকে কথা বলবো অভ্যাস গড়া নিয়ে। ছোট থেকেই কীভাবে তার ভেতরে জীবনের লক্ষ্যের দিকে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলবেন তা নিয়ে। তাহলে চলুন, জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এমন কিছু টিপসই জেনে নেই আমরা আজ!

ছোট লক্ষ্য দিয়েই শুরু হোক

ছোট থেকেইতো সব কিছু বড় হয়। আমার মা বলতো, ১-এর পরে ২ আসে তারপর ৩। আসলেই, ছোট ছোট কিছু সফলতা, ছোট ছোট অর্জনই আমাদেরকে মূলত প্রস্তুত করে বড় কিছুর জন্য, স্বপ্ন দেখায় বড় কিছু অর্জনের। জীবনের বড় লক্ষ্যটার দিকে ছোট বেলা থেকেই ছোটার দরকার নেই। আগে ছোট ছোট লক্ষ্য সেট করুন সন্তানের জন্য। সেগুলো সে অর্জন করুক আগে। এতে অভ্যাসটা হোক। লক্ষ্য সেট করতে পারেন সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক। লক্ষ্য পড়ালেখা সম্পর্কিতও হতে পারে কিংবা পড়ালেখার বাইরের কিছুও হতে পারে। যেমন ধরুন, বইয়ের কোন একটা অধ্যায় শেষ করবেন এক সপ্তাহে কিংবা তার ভালো লাগার কোন ছড়া বা গান শিখতে বলুন। এভাবে মাসিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যও একটু বেশি করে সেট করুন লক্ষ্য। এভাবে ধীরে ধীরে সে নিজের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারলে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে অনেকগুণ। সে তৈরি হবে বড় লক্ষ অর্জনের জন্য।

তার স্বপ্নের জন্য তৈরি করুন পরিবেশ

আপনার সন্তান ক্রিকেটার হতে চায়! কিন্তু আপনি তাকে ক্রিকেটটা খেলতেই দেন না। পড়ালেখার অজুহাতে দেখতে দেন না ক্রিকেট খেলাও। এর ফলে কিন্তু তার আগ্রহটা কমে যাবে। এইসব কারণে হয়তো সে স্বপ্ন দেখাই ভুলে যাবে। সন্তানের আগ্রহের বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন। তার জন্য পরিবেশও তৈরি করুন সেভাবে। তার আগ্রহের জায়গায় ক্রিকেট থাকলে তার সাথে ক্রিকেট খেলা দেখুন, তাকে নিয়ে মাঠে খেলা দেখতে যান। আপনার সন্তানের আগ্রহ যদি বিজ্ঞানের দিকে থাকে তাহলে তার সাথে আলোচনা করুন বিজ্ঞান নিয়ে। বিজ্ঞানীদের গল্প, বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের গল্প ইত্যাদি তার সাথে করুন। কিনে দিতে পারেন সায়েন্স কিট কিংবা সায়েন্টিফিক কন্সেপ্টের খেলনা। কিংবা তার ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে দিন নিউটন, জগদিশ চন্দ্র বসুদের ছবি। আপনি যদি তার স্বপ্নের জন্য সেভাবেই তার চারপাশের পরিবেশ তৈরি করেন তাহলে সে তার স্বপ্নকে প্রতিনিয়ত নিজের সামনেই দেখতে পাবে। ও সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য কাজও করবে।

তার সাথেই করুন কিছু কাজ

শিশুরা সবসময় বাবা-মাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে। বাবা-মাকে কোন কিছু করতে দেখলে তা করার আগ্রহ শিশুদের মাঝেও তৈরি হয়। আর যদি তার পছন্দের বিষয়ে আপনার আগ্রহ দেখে তাহলেতো সোনায় সোহাগা। সে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে সেই কাজটি করতে থাকবে। তার স্কুলের কোন প্রজেক্টের প্রস্তুতি নিন একসাথে পরিকল্পনা করে। ধরুন, স্কুলের বিজ্ঞানমেলায় প্রজেক্ট দিবেন। স্কুলের প্রোগ্রাম কবে? কোন সময়ের মধ্যে প্রজেক্ট শেষ করবেন? কী কী লাগবে? কোন কোন জায়গা থেকে যন্ত্রাদি সংগ্রহ করবেন? যন্ত্রাদি সংগ্রহ কবে শেষ করবেন? কবে কাজ শুরু করবেন? ইত্যাদি সবকিছুর জন্য ক্যালেন্ডার তৈরি করে রাখুন ও পরিকল্পনা মাফিক কাজ করুন। তাছাড়া আপনার ব্যক্তিগত কিছু কাজেও তাকে যুক্ত করতে পারেন। তাকে সহই শোবার ঘরটা গোছানোর একটা দিন ঠিক করলেন, কিচেন রুমটা একদিন সাজালেন সুন্দর করে। এমন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে পরিকল্পনাও করতে পারেন। এতে আপনার সন্তান নিজের লক্ষ্যের পথে হাঁটার পরিকল্পনা, মিশন ও সফলতার ধারণা পাবে।

তাকে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করুন

লক্ষ্য অর্জনের পথে সীমাবদ্ধতা, বাধা, দুর্বলতা অনেক কিছু থাকে। মানুষ ধীরে ধীরে সেসব কাটিয়ে উঠে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করে পৌঁছায় তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। আপনার সন্তানের ছোট বেলায় হাঁটতে শেখার লক্ষ্যের কথাই ধরুন না। সে হামাগুড়ি দিয়েছে, কিছু ধরে উঠে দাঁড়িয়েছে, এরপর দু-এক পা ফেলার চেষ্টা করেছে। কখনো পেরেছে, কখনো পারেনি। বীর বিক্রমে আপনার দিকে ছুটে আসতে গিয়ে দু-এক পা দিয়েই টুপ করে পড়ে গিয়েছে। এরপর অপারগতায় জুড়ে দিয়েছে কান্না। সেই পড়ে যাওয়া থেকে সন্তানকে তুলেছেন, হাতে ধরে শিখিয়েছেন হাঁটা। ধীরে ধীরে সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ছোট সোনামনি এখন ঘুরে বেড়ায় সারা ঘর জুড়ে। জীবনের ছোট বড় সব লক্ষ্যই আসলে এমন। সীমাবদ্ধতা থাকে। নিজের চেষ্টায় বা কারো সহায়তায় সবাই সে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে। আপনার সন্তানের সেই সীমাবদ্ধতা গুলো খোঁজার চেষ্টা করুন। এরপর তাকে সাহায্য করুন তার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে। মাঝে মাঝে তাকে শিখিয়ে দিন সমৃদ্ধ হওয়ার টোটকা। জীবনের লক্ষ্য অর্জনের পথে এই শিক্ষাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

আরো পড়ুন-সন্তানকে কীভাবে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবেন।

 1,274 total views,  2 views today

What People Are Saying

Facebook Comment