ময়লা বা আবর্জনা পৃথিবীর পরিবেশের জন্য সবসময় ক্ষতিকর। আর প্রতিদিনই পৃথিবীতে আবর্জনার পরিমাণ বাড়ছে। তুমি চিপস খাওয়ার পর যেই প্যাকেটটি থেকে গেছে সেই প্যাকেটটিও পৃথিবীতে ময়লার পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিয়েছে। আমেরিকার এক গবেষণা মতে শুধু আমেরিকাতে প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন টনের বেশি আবর্জনা জমা হয়। তার মধ্যে রি-সাইকেলিং করা যায় মাত্র ১-২ শতাংশ। বাকি আবর্জনার বেশিরভাগই প্লাস্টিক হওয়ায় বছরের পর বছর অপচনশীল অবস্থায় থেকে যায় এবং শেষে তাদের জায়গা হয় সমুদ্রে। এইসব ময়লা সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়, সমুদ্রের পরিবেশ নষ্ট করে, ভারসাম্য নষ্ট করে আমাদের পুরো ইকো-সিস্টেমেরও। তাহলে এই যে এতসব ময়লা সাগরে না ফেলে কী করা যেত? পুড়িয়ে ফেলা যেত! হ্যাঁ, এখন নিশ্চই তোমার মনে প্রশ্ন জেগেছে এতসব ময়লা সাগরে না ফেলে আগ্নেয়গিরি-তে কেন ফেলা হচ্ছে না! আগ্নেরগিরি-তে ফেললে তো সব আবর্জনাই একসাথে পুড়ে আগ্নেয়গিরি’র সাথে মিশে যেত। ইকো-সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হতো না কিংবা সমুদের পরিবেশেরও কোন ক্ষতি হতো না! এমন চিন্তা এসেছিলো আবর্জনার রি-সাইকেল নিয়ে কাজ করা গবেষকদের মনেও। তারা চেষ্টাও করেছেন।
২০০২ সালে ইথিওপিয়ান কিছু গবেষক এমন চিন্তা থেকে একটা কাজ করে বসেন। তারা ৩০ কেজির মতো আবর্জনা নিয়ে ফেলেন একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরিতে। কিন্তু আগ্নেয়গিরির অনেক বেশি তাপমাত্রার মধ্যে তুলনামূলক অনেক কম তাপমাত্রার ময়লা ফেলার ফলে আগ্নেয়গিরির লাভাগুলো আস্তে আস্তে ফুঁটতে থাকে। ধীরে ধীরে তা একটি চেইন বিক্রিয়ার রূপ নেয়। এবং আগ্নেয়গিরির মধ্যে বিশাল এক বিষ্পোরণ ঘটে।
মাত্র ৩০ কেজি আবর্জনায় এত বিশাল বিষ্পোরণ! তাহলে একবার চিন্তা করো সব ময়লা যদি আগ্নেয়গিরিতে ফেলা হয় তাহলে বিষ্পোরণ কতটা প্রকট ও ভয়াবহ হবে।
এই বিষ্পোরণের ফলে আগ্নেয়গিরির ভেতরের লাভা অনেক সময় আগ্নেয়গিরির জ্বলামুখ দিয়ে বাইরে চলে আসে। এসে আবারো সমুদ্রের পানিতে চলে যায়। ফলে ক্ষতি আরো বেশি হয়।
এই বিষ্পোরণের ফলেই আবার বিশাল ক্ষতি হতে পারে আমাদের পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডলের। আগ্নেয়গিরিতে ময়লা ফেললে কিছু পরিমাণ ময়লা হয়তো পৃথিবীর কেন্দ্রে চলে যায়। বেশিরভাগ ময়লা কিন্তু আগ্নেয়গিরির পৃষ্ঠেই পুড়তে থাকে। এই পোড়ার ফলে তৈরি হয় অনেক বিষাক্ত গ্যাস। এই বিষাক্ত গ্যাস ফিরে আসে আমাদের মাঝেই। বিশাল ক্ষতি করে পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডলের।
আরেকটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় পরিবহন ব্যবস্থা। পৃথিবীর সব জীবন্ত আগ্নেয়গিরিই জনপদের থেকে অনেক দূরে। তাছাড়া আগ্নেয়গিরির আশে পাশে মানুষের যাওয়াটাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে আগ্নেয়গিরিতে ময়লা ফেলার জন্য বিশেষ পরিবহনের দরকার হতে পারে। আমাদের পৃথিবীতে প্রতিদিন এত বেশি পরিমাণ ময়লা উৎপন্ন হচ্ছে যার সব কিছু বিশেষ পরিবহনে (বিমান অথবা হেলিকপ্টার) বহন করা সম্ভব নয়।
আর পড়তে-একটা বিশাল আকৃতির ব্ল্যাকহোল আমাদের পৃথিবীর আশে পাশে চলে আসলে কী হবে?
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র- What if
1,522 total views, 2 views today