পরীক্ষায় ফেল, মার্কস কম, দৈনন্দিন জীবনে অনেক সাধারণ ভুল, পড়া বুঝতে ব্যর্থ হওয়া এমন অনেক ভুল করা ও ব্যর্থ আপনার সন্তান হতেই পারে।। ভুল করা বা ব্যর্থ হওয়া মানে পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়! আর আপনার সন্তান কোন ভুল করলে বা ব্যর্থ হলে তার পড়ার টেবিলে রাখা ছোট গ্লোবটারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না! বিশ্বাস করুন! কিন্তু তার ভুলের জন্য যদি আপনি তাকে কেবল বকাঝকা করেন তাহলে ক্ষতি হতে পারে! আবার তার ভুলকে যদি সঠিক উপায়ে সমাধান না করেন তাহলেও ক্ষতি হতে পারে। সন্তান ভুল করলে বকাঝকা সহ এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো করা যাবে না, আবার কিছু বিষয় আছে যে গুলো করা যাবে। এমন ৫ টা ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ নিয়েই আমাদের আজকের ব্লগ।

লজ্জা দেয়া বা বকাঝকাকে ‘না’
সন্তান ভুল করলে বা ব্যর্থ হলে আমরা প্রথমেই এই কাজটা অজান্তেই করে ফেলি। তাকে বিভিন্নভাবে লজ্জা দেই ও বকাঝকা করি। সবার আগে লজ্জা দেয়া বা বকাঝকা করাকে তিনবার না করে দিতে হবে। কোন ভাবেই সন্তানকে তার ভুলের জন্য, ব্যর্থ হওয়ার জন্য বকা যাবে না। বকলে সন্তান হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারে ও ডিমোটিভেটেড হতে পারে। একটা কথা মনে রাখবেন, আমি হই, আপনি হন কিংবা আপনার সন্তান আমরা কেউই সচেতনভাবে ভুল করি না। ভুলটা আমরা অচেতনভাবেই করি। অচেতনভাবে করা ভুলের জন্য বকা কি ঠিক হবে?

তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়াকে ‘না’
সন্তান একটা অংক ভুল ভাবে করছে? কিংবা ঘরের কোন কিছু ভুলে ভেঙ্গে ফেলেছে? এসব ক্ষেত্রে সাথে সাথে গিয়ে তাকে সঠিকভাবে অংক ধরিয়ে দেয়া কিংবা কিছু ভেঙ্গে ফেলার জন্য বকাঝকা করা থেকে বিরত থাকুন। একটু অপেক্ষা করলেই হয়তো দেখবেন সে নিজে নিজে অংকটার সঠিক সমাধান বের করে ফেলেছে এবং ভেঙ্গে ফেলা বস্তুটি আপনার সামনে এনে সত্য কথাটা বলে ভুলের জন্য লজ্জিত হয়েছে! এইটা দেখে নিশ্চই আপনি খুশি হবেন? একই সাথে সন্তান নিজে নিজে সমস্যা সমাধান করার দক্ষতাও অর্জন করবে।

সন্তানের চাওয়ার আগে সাহায্য ‘না’
আমাদের মাঝে একটা সহজাত আচরণ থাকে, সন্তান কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে আমরা সাথে সাথে গিয়ে তা সমাধান করে দিতে চাই। এতে সন্তানের মাঝে চেষ্টা করার আগ্রহ কমে যায় ও ঠিক কখন তার সাহায্য প্রয়োজন এই বোধটা জন্ম নেয় না। আপনার সন্তান যদি কোন সমস্যার মুখোমুখি হয় তাহলে তাকে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা টা করতে দিন। সে ব্যর্থ হয়ে যখন আপনার কাছে সাহায্য চাইতে আসবে তখন তাকে সাহায্য করতে যাবেন। এতে সে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার সুযোগ পাবে ও নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারণা পাবে। আর সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারেও আগ্রহী হবে।

ফলাফল না দেখে চেষ্টা দেখুন
পড়ালেখা বা যে কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সব শিশু একই রকম ভাবে সফল হয় না। সবার সফল হওয়ার দ্রুততায় ভিন্নতা থাকে। কেউ অনেক তাড়াতাড়ি শেখে কেউ একটু সময় নিয়ে শেখে। কেউ অল্প চেষ্টায় সফল হয়, কেউ অনেক বেশি ব্যর্থ হয়। সেজন্য সন্তান কতবার সফল হয়েছে, কতবার ব্যর্থ হয়েছে কিংবা সমস্যা সমাধানে কতটা সময় নিয়েছে তা নিয়ে না ভেবে সে পর্যাপ্ত চেষ্টা করেছে কি না তা খেয়াল করুন। চেষ্টায় তার আগ্রহ থাকলে দেরিতে হলে সফল হবেই।

ভুল থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা
সন্তান ভুল করলে সাথে সাথে আপনি সমাধান করে দিচ্ছেন, কিংবা তাকে সাহায্য করছেন! এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এই ভুল থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেয়া। খেয়াল রাখা যেন একই ভুল সে বারবার না করে। এজন্য কোন ভুল করলে কিংবা কোন কাজে সে ব্যর্থ হলে সেটার সমাধান পরিপূর্ণভাবে করার পাশাপাশি ভুলগুলোকে চিহ্নিত করে সেই ভুলগুলো নিয়ে আলাদা করে কাজ করতে হবে। সে যেন একই ভুল পরবর্তীতে না করে।

মাঝে মাঝে বিরতি নিন
অনেকক্ষণ ধরে একই পড়া সন্তানকে বোঝাতে পারছেন না? একটা সহজ অংক অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর পরও সে বুঝছে না! এমন পরিস্থিতিতে তার উপর রেগে যাবেন না। এমন হতেই পারে! মনে করে দেখুন, কখনো কখনো আপনারও এমন হয়! এমন হলে বইটা বন্ধ করে তাকে নিয়ে একটু হেঁটে আসুন আশেপাশের পার্ক থেকে কিংবা টিভিতে তার প্রিয় কোন অনুষ্ঠান বা সিনেমা দেখতে পারেন, তার প্রিয় কোন খাবারও তাকে খাইয়ে আনতে পারেন। এরপর ফ্রেশ মন নিয়ে আবার বসুন। দেখবেন এবার একবারের চেষ্টায়ই সে বুঝে ফেলেছে সব।

আপনার সন্তান ব্যর্থ হতেই পারে, করতে পারে ভুল, পরীক্ষায় মার্কসও কম পেতে পারে। কিন্তু সন্তান ভুল করলে আপনি যদি তাকে বলেন, পরিক্ষায় মার্কস কম হলেও তার জন্য আপনার ভালোবাসা কমবে না কখনো তাহলে দেখবেন সে এই ভালোবাসার সম্মানে আপনাকে ভালো কিছুই উপহার দিবেন।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,923 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment