শিশুদের স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া সারা বিশ্ব জুড়েই একটা উদ্বেগের বিষয়। অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া শিশুদের মাঝে ছোট থেকেই ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, লিভারে চর্বি জমে যাওয়া, হৃদরোগের মতো জটিল সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। শিশু অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে খাদ্যাভাস ও জীবনধারণে কিছু পরিবর্তন আনলে শিশুর স্থূলতা কমানো সম্ভব। চলুন জেনে নিই, শিশুর অতিরিক্ত ওজন কমানোর ৭ টি পরামর্শ।
শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহী করতে হবে
যেকোন ধরণের শারীরিক ব্যায়াম ক্যালরি কমাতে সাহায্য করে। সন্তানকে শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহী করে তুলতে হবে। রুটিন মাফিক ব্যায়ামের পাশাপাশি দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজে শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহী করতে পারেন। যেমন, বিল্ডিংয়ে ওঠার সময় লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা স্বল্প দূরত্বে কোথাও যেতে গাড়ি ব্যবহার না করে হেঁটে যাওয়ার ব্যাপারে বেশি উৎসাহী করতে পারেন।
পারিবারিক খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে
পারিবারিক খাদ্যাভাসে একটা নিয়ম মেনে চলতে হবে। একদিন এক জায়গায় না খেয়ে খাবারের জন্য সবসময় একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করতে হবে। সেটা ডাইনিং টেবিল হলেই ভালো। সন্তানকে কেবল তখন খেতে দিতে হবে যখন সে ক্ষুধার্ত থাকে। খুব প্রিয় কোন খাবারের ক্ষেত্রে ক্ষুধা না থাকলে অল্প পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। বাসায় জাঙ্ক ফুড পরিহার করাই উত্তম। সবচেয়ে ভালো হয় তার সাথে খাওয়ার সময় সে যে খাবার খাবে সেগুলো অন্যরাও খেতে চেষ্টা করলে।
খাবার জায়গা থেকে টিভি দূরে রাখতে হবে
খাবারের জায়গা এমন কোন স্থানে রাখুন যার আশেপাশে টেলিভিশন নেই এবং সন্তানকে খাওয়ানোর সময় তার কাছ থেকে যেকোন ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস দূরে রাখতে হবে। মোবাইল, টিভি অথবা কম্পিউটার এইসব দেখতে দেখতে খাওয়ার ফলে বাচ্চারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলে। যেটা শরীরের স্থূলতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
খাবারে বেশি করে সবুজ শাক-সবজী ও ফলমূল যোগ করতে হবে
সবুজ শাক-সবজী ও ফলমূলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে কিন্তু অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। সেজন্যই ফল ও শাক-সবজী ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাবারে বেশি করে ফল ও শাক-সবজী যোগ করতে হবে। তবে বাজারে পাওয়া ফলের জুস পরিহার করাই উত্তম। এইসবে কৃত্রিম চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় স্থূলতা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মিষ্টিভুট্টা, কলাইজাতীয় সবজী ও মটরশুটি পরিহার করতে হবে।
তৃষ্ণা মেটাতে শুধু পানি খেতে হবে
অনেকেই সন্তানকে বিভিন্ন জুস বা অন্যকোন বেভারেজ পানিয় দিয়ে থাকেন। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। জুস কিংবা বেভারেজের পরিবর্তে বাচ্চাদের পানি দিতে হবে। আর তাছাড়া, সব সময় পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সন্তানকে হালকা ঠান্ডা পানি দেয়া যেতে পারে। ঠান্ডা পানি শরীরের ক্যালোরি ক্ষয় করতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো নিশ্চিত করতে হবে
বাচ্চাদের জন্য কমপক্ষে ১০ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। আর একটু বড় বাচ্চাদের কমপক্ষে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে দিতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘুমানো ও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা বাচ্চাদেরকে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাচ্চাদের নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
চিনি ও লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে
কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবার যেমন- বাজারে পাওয়া জুস, চকলেট, মিষ্টি বেভারেজ ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তার পরিবর্তে বাসায় ফলমূল খেতে দেয়া যেতে পারে। ফলে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি থাকে। যা শরীরে চিনির অভাব পূরণ করে ও ওজন কমাতেও সাহায্য করে। উচ্চ সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ী, টমেটো সস, প্রক্রিয়াজাত পনির, টিনজাত বিস্কুট ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
শিশুর অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য শিশুর বয়স ও তার শারীরিক ওজনের উপর নির্ভর করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ ও থেরাপি দিয়ে থাকেন। আপনার সন্তানের ওজন যদি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়, তাহলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া উচিত।
তথ্যসূত্র-Helpguide
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
851 total views, 1 views today