অনেকের সন্তানই স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্কুল বাস ব্যবহার করে, কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন, কেউ মোটরসাইকেল। আর গাড়ির সাথে দুর্ঘটনা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটু অসাবধানতা বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ কোন বিপদ। সেজন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, শিশুদেরকে জানাতে হবে কিছু নিয়ম। বিশেষ করে যে সকল শিশু স্কুল বাস ব্যবহার করে, তাদেরকে অবশ্যই এইসব নিয়ম সম্পর্কে জানাতে হবে। গত পর্বে আমরা শিশুদেরকে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচানোর কিছু উপায় সম্পর্কে জেনেছি। আজকে আমরা জানবো বাসে, কারে বা বিভিন্ন যানবাহনে শিশুদের নিরাপদ থাকার জন্য করণীয়।
বাসের ওঠার সময় মানতে হবে ৭ টি নিয়ম
• আপনার সন্তানকে বাসা থেকে বাসস্টপ পর্যন্ত সব সময় হেঁটে যেতে বলতে হবে। সন্তান যদি যথেষ্ট বড় না হয় তাহলে বাবা-মার উচিত তাকে বাসস্টপ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।
• বাসস্টপে যাওয়ার সময় তাকে ফুটপাত ব্যবহার করতে বলুন, যদি ফুটপাত না থাকে তাহলে রাস্তার বাইরে দিয়ে হাঁটতে বলতে হবে।
• স্কুল বাস থামার নির্দিষ্ট স্থানে অন্তত ৫ মিনিট আগে যাওয়া উচিত। যদি কখনো বাসস্টপে যাওয়ার আগে বাস চলে আসে সেক্ষেত্রে দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠা যাবে না এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
• প্রতিদিন একই জায়গায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, যদি কখনো বাস আসতে ৫-১০ মিনিট দেরি হয় তাও একই স্থানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে।
• বাসের জন্য অপেক্ষা করার জন্য রাস্তা থেকে ১০ কদম অথবা ৩ মিটার দূরত্বে দাঁড়ানো উত্তম।
• চলন্ত বাসে কোন অবস্থাতেই ওঠা যাবে না, আপনার সন্তানকে বলুন, বাস ভালোভাবে থামলে যেন সে বাসে উঠে।
• যদি কখনো স্কুল বাস না আসে কিংবা আসতে অনেক বেশি দেরি করে সেক্ষেত্রে অন্য কোন গাড়ি কিংবা কোন প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না, এতে অপহরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সন্তান একটু বড় হলে গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারে কিন্তু অন্য কারো প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। গাড়ি না আসলে বাড়ি চলে আসাই উত্তম।
বাসের ভেতরে মানতে হবে ৪ টি নিয়ম
• বাসে ওঠে সরাসরি নিজের সিটে গিয়ে বসার জন্য শিশুকে অবগত করতে হবে। শিশু যদি বাসে উঠে সিটে গিয়ে না বসে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে গল্প করে সেক্ষেত্রে বাস চলন্ত থাকার ফলে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে পারে।
• বাসে দাঁড়িয়ে না যাওয়াই উত্তম। কারণ, বাসের গতি পরিবর্তনের ফলে ছোট বাচ্চাদের নিজেদের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। কখনো পড়ে গিয়ে ব্যথাও পেতে পারে।
• স্কুল বাস কিংবা দূরপাল্লার বাস, কোন অবস্থাতেই বাসে বসে জানালা দিয়ে হাত অথবা মাথা বাইরে রাখা যাবে না। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
• বাসে বসে ড্রাইভারের সাথে কোন কারণে কথা বলতে হলে সিটে বসে লুকিং গ্লাস বরাবর হাত তোলার জন্য বলুন। চলন্ত বাসে সিট থেকে উঠে গিয়ে ড্রাইভারকে ডাকা যাবে না। এতে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাস থেকে নামার সময় মানতে হবে ৬ টি নিয়্ম
• বাস নির্দিষ্ট স্থানে এসে সম্পূর্ণরূপে থামলেই কেবল সিট ছেড়ে নামতে হবে। বাস না থামা পর্যন্ত সিট ছাড়া যাবে না।
• বাস থেমে নামার পরে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে, ব্যাগের ফিতা, জামা বা অন্য কোন কিছু বাসের দরজার সাথে আটকে আছে কি না!
• নামার সময় তাড়াহুড়ো করা কিংবা কাউকে ধাক্কা দেয়া যাবে না। যে আগে আছে তাকে আগে নামতে দিতে হবে।
• যদি তাকে বাসের সামনে দিয়ে পার হতে হয়, তাহলে বাস থেকে অন্তত ১০ ফুট সামনে দিয়ে ক্রস করা উচিত যাতে ড্রাইভার তাকে দেখতে পায়। বাসের একেবারে সামনে দিয়ে ঘেঁষে বাস ক্রস করা যাবে না। এতে ড্রাইভারের তাকে না দেখার সম্ভবনা থাকে, ফলে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
• যদি ভুলে বাসে কোন কিছু রেখে নেমে যায়, তাহলে তাড়াহুড়ো করে বাসে আবার ওঠা যাবে না। বাসের বাইরে থেকে ড্রাইভারকে জানাতে হবে। জানানো সম্ভব না হলে পরে ড্রাইভার বা দায়িত্বশীল কাউকে জানাতে হবে।
• স্কুল বাস থেকে নেমে শিশুর সরাসরি বাসায় আসা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাইভেট কারে ও মোটর সাইকেলে শিশুর নিরাপত্তা
স্কুল বাসে শিশু একা গেলেও পারিবারিক গাড়িতে শিশুর সাথে বাবা-মা থাকেন। প্রাইভেট কারের ভেতরে এজন্য শিশুরা অনেক নিরাপদ। প্রাইভেট কারে শিশুকে সিটবেল্ট লাগানো শেখাতে হবে এবং প্রাইভেট কারে সবসময় শিশুর সিটবেল্ট বাধা নিশ্চিত করতে হবে। ভালো হয় কারে যে কজন থাকবে সবাই যেন সিট বেল্ট ব্যবহার করে। এতে শিশু সবার দেখাদেখি সিট বেল্ট ব্যবহারে অভ্যস্ত হবে। প্রাইভেট কারে থাকা অবস্থায় শিশুকে ট্রাফিক সংকেত সম্পর্কেও ধারণা দেয়া যেতে পারে।
আর মোটর সাইকেলে চড়ার সময় অবশ্যই শিশুরও হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
আরো জানুন-শিশুর মোশন সিকনেস হলে করণীয়।
দুর্ঘটনা হয়তো জানিয়ে আসে না। কিন্তু একটা প্রবাদ আছে “সাবধানের মার নেই”। একটু সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলেই আমরা সড়ক দুর্ঘটনা হার অনেকটা কমিয়ে আনতে পারি।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র-safekids
806 total views, 2 views today