কম্পাস সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। বড় কম্পাস না হলেও খেলার জন্য কিংবা মজা করার জন্য ছোট খাটো কম্পাস আমরা সবাই দেখেছি। আমরা নিশ্চয় জানি কম্পাস কি কিংবা কম্পাস দিয়ে কী হয়। যদি না জেনে থাকি তাহলে চল এখনই জেনে আসি।
কম্পাস কী?
কম্পাস হচ্ছে একটি দিক নির্দেশক যন্ত্র। এই যন্ত্র দিয়ে যেকোন পরিবেশে, যেকোন জায়গায় কিংবা যেকোন সময় সঠিক দিক নির্ণয় করা যাবে খুব সহজে।
গহীন জঙ্গলে কিংবা গভীর সমুদ্রে অথবা ঘুটঘুটে অন্ধকারে তুমি পথ হারিয়ে ফেলেছো। এখন কোন দিকে গেলে তুমি তোমার গন্তব্যে পৌঁছাবে সেটা বুঝে উঠতে পারছো না। এখন তোমার হাতে যদি একটি কম্পাস থাকে তাহলে সেটিই তোমাকে সঠিক পথ বাতলে দিবে কোন দিকে উত্তর কিংবা কোনদিকে দক্ষিন।
ছোট খাটো কম্পাসের কথা যেহেতু আসলোই তাহলে বলে রাখি বর্তমানে বিভিন্ন রকমের কম্পাস দেখা যায়। যেমন: সাধারণ ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয় পকেট কম্পাস, আকাশপথে ব্যবহৃত হয় জাইরো কম্পাস আবার নৌপথে ব্যবহৃত হয় নৌকম্পাস।
মূলত কম্পাস একটি চুম্বক। সূচালো শলার উপর সরু চুম্বকের পাত বসিয়ে কম্পাস তৈরি করা হয় যেখানে চুম্বকপাতের প্রান্ত দুটি সর্বদা উত্তর-দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে থাকে। কিন্তু কম্পাস কেন সব সময় উত্তর দক্ষিনে দিক নির্দেশ করে সেটি জানলে তোমরা আরও বেশি অবাক হবে। আমাদের পুরো পৃথিবীটাই একটি বিশাল আকারের চুম্বক। পৃথিবীরও উত্তর এবং দক্ষিন দুটি দিক রয়েছে। তাই পৃথিবী নামক এই বিশাল আকারের চুম্বকের কারনে কম্পাস সব সময় উত্তর দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে থাকে। কিন্তু কম্পাসের আশে পাশে যদি অন্য কোন শক্তিশালী চুম্বক থাকে তাহলে কম্পাসের কাঁটা সেদিকেই ঘুরে যাবে।
কম্পাস আবিষ্কারের ইতিহাস-
বর্তমান সময়ে কম্পাস খুব সহজলভ্য হলেও এর পেছনে রয়েছে বিশাল এক ইতিহাস। ধারণা করা হয় খ্রিষ্ট-পূর্ব ২০৬ সালের দিকে হ্যান রাজত্বকালে প্রাচীন চীনে ভবিষ্যৎবাণী করার জন্য কম্পাস আবিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ১০৪০-১০৪৪ সাল পর্যন্ত সং রাজ শাসনের সময় সামরিক বাহিনীর নৌপথ পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহার হত এই কম্পাস। এছাড়াও ১১১১ থেকে ১১১৭ সাল পর্যন্ত নৌপথে এর ব্যবহার দেখা যায়।
১১৮৭ থেকে ১২০২ সালের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপে কম্পাস ব্যবহারের সর্বপ্রথম প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায়। ১৯৩২ সালেও পারস্যে কম্পাস ব্যবহার হয়েছিল। ১৩০০ সালের দিকে ইউরোপে শুষ্ক কম্পাস আবিষ্কৃত হয়।
আবার অন্যদিকে জানা যায় ইউরোপিয়ানরা বিভিন্ন ভ্রমনে দিক নির্ণয়ের জন্য পরিষ্কার দিনের আকাশের সূর্য অথবা রাতের বেলায় আকাশের নক্ষত্র বিশেষ করে নর্থ স্টার বা সন্ধ্যা তারার উপর নির্ভর করতো। কিন্তু ঝামেলা হল প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঝড় বা আকাশ পরিষ্কার না থাকলে দিক নির্ণয়ে তাদের ঝামেলা হত। এই অবস্থায় ইউরোপিয়ানরা প্রথম আমেরিকায় ভ্রমণের চিন্তা করলে এই দিক নির্ণয়ের বেলায় এসে কম্পাসের অভাব বোধ করে।
তবে অনেক আগেই চুম্বকের সাহায্যে দিক নির্ণয়ের সহজ সমাধান থাকায় ইউরোপিয়ানরা এর মাধ্যমে কম্পাসের আধুনিক সংস্কার করে।
এছাড়াও আরও একটি প্রবাদ চালু আছে যে আরবরা চীনের ফর্মুলা অনুসরণ করে কম্পাসের উন্নতি সাধন করে। এতে করে মুসলিমরা কাবা ঘরের সঠিক অবস্থান জানার মাধ্যমে তাদের নামাজ আদায় করে।
ঘরে বসেই যেভাবে কম্পাস বানানো যায়
আমরা এখন নিজেরাই একটি কম্পাস বানানোর চেষ্টা করবো। যদি ঘরে বসে নিজেই কম্পাস বানাতে চাও তাহলে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্সের চুম্বকের চমক বাক্সের ‘৭ নাম্বার পরীক্ষণ অর্থাৎ নিজে বানাও কম্পাস’ টি অনুসরণ করো। প্রথমে বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া ছোট্ট কম্পাসটি নিতে হবে। কম্পাসটি রাখলে দেখা যাবে উত্তর দক্ষিণ কোন দিকে আছে। দেখা যাবে কম্পাসটি উত্তর দক্ষিন ও পূর্ব পশ্চিমের দিক নির্দেশ করছে।
এবার আমরা যদি একটি বাটিতে কিছু পানি নিয়ে তার মধ্যে এক টুকরো ফোমের গায়ে একটি সুঁই আটকে দিয়ে ভাসিয়ে দেই তাহলে দেখা যাবে সেটি উত্তর দক্ষিণ বরাবর মুখ করে থাকবে। এবার ফোমটিকে যদি অন্যদিকে ঘুরিয়েও দেয়া হয় তাহলেও সে আবার উত্তর দক্ষিণ বরাবর অবস্থান নিবে। আমরা যদি ফোমটি সম্পূর্ণ উল্টো ঘুরিয়ে দেই তাহলেও সে কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার উত্তর দক্ষিন বরাবর অবস্থান নিবে। দেখা যাবে সূচালো মাথাটা উত্তর দিক এবং মোটা মাথাটা দক্ষিন দিক নির্দেশ করবে। এভাবেই ঘরে বসে একটি কম্পাস তৈরি করা যায় খুব সহজেই। তাহলে আর দেরী না করে এক্ষণই বানিয়ে ফেল এই কম্পাসটি। আর এই এক্সপেরিমেন্ট করতে তোমার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে সাথে রাখো চুম্বকের চমক বিজ্ঞানবাক্সটি।
সব বিজ্ঞানবাক্স দেখো এই লিংক থেকে
2,465 total views, 2 views today