মা-বাবা সন্তানের জন্য পরম নির্ভাবনার আশ্রয়স্থল হিসাবে বিবেচিত। মা-বাবা তাদের মেধা ও জ্ঞান (knowledge) দিয়ে সন্তানের জীবন গড়ে দেন। সন্তানের সাথে মা-বাবার একটি পবিত্র সম্পর্ক বিরাজ করে। তবে মাঝে মধ্যে এই পবিত্র সম্পর্কেও ভাঙ্গন ধরে। ফলে তিক্ততার সৃষ্টি হয়, যা থেকে একসময় বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়।
আর তাই আজ আমরা মা-বাবার সাথে সন্তানের তিক্ততার সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
১। বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরি করুণ
সন্তানকে বুঝতে চেষ্টা করুণ এবং সেও যাতে আপনাকে বুঝতে পারে সেই পথ সুগম করুন। একে-অন্যের ত্রুটি না ধরে যাতে ভালো বোঝাপড়া গড়ে উঠে, সম্পর্ক ভালো হয় সেই চেষ্টা করুন। বিভিন্ন প্যারেণ্টিং গাইডলাইন পড়ে সেখান থেকে সন্তান লালন-পালনের উপর জ্ঞান (knowledge) আহরণ করুন।
২। মতামতকে মূল্য দিন
প্রত্যেক মানুষেরই ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকে। এক্ষেত্রে একেঅন্যের মতামতকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতে হয়। তাহলেই ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর তাই তো সন্তানের উপর নিজের মতাদর্শ চাপিয়ে না দিয়ে, বরং ওর মতামতকেও দাম দিতে শিখুন। এক্ষেত্রে সে ভুল পথে চললে তাকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলুন।
৩। এক সাথে সময় কাটান
শত ব্যস্ত থাকলেও সময় বের করে সন্তানকে সময় দিন। দূরত্ব একসময় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে সুতরাং সন্তানের সাথে দূরত্ব না রেখে তার কাছাকাছি যাবার চেস্টা করুণ। দেখবেন আপনার সাথে সুন্দর মায়াময় সময় কাটালে, তিক্ততার বরফ গলতে শুরু করেছে।
৪। রাগারাগি-মারামারি নয়
সম্পর্ক যতই তিক্ততার হোক না কেন, কখনোই রাগারাগি কিংবা মারধর করবেন না। এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। দেহের আঘাতের ক্ষত হয়তো শুকায়, কিন্তু মনের আঘাতের ক্ষত সহজে বিলীন হয় না। আর তাই তো সময় থাকতে রাগারাগি-মারামারির পথ পরিহার করুন। জোর করে কখনোই কাউকে বশে আনা যায় না।
৫। সন্তানের উপর বিশ্বাস রাখুন
আপনার সন্তানকে বিশ্বাস করুন এবং নিজেও আস্থাভাজন হোন। মিথ্যা-কথা, সন্দেহ, অবিশ্বাস মায়াবী সম্পর্ক গুলোকে নষ্ট করে দেয়। আর আত্মার বাঁধনের এ সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে বিশ্বাসের জায়গাটা শক্ত করুন।
৬। উপহার দিন
বিশেষ দিনগুলিতে সন্তানকে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু গিফট করুন। তার বিশেষ দিনগুলিতে তার পাশে থাকার চেষ্টা করুন, সে যে আপনার কাছে স্পেশাল, সেটা তুলে ধরুন। তাকে বিভিন্ন মনিষীদের জীবনীমূলক এবং জ্ঞান (knowledge) ভিত্তিক বই উপহার দিন। তাকে স্নেহ মমতার পাশাপাশি ভালো মানুষ হবার দীক্ষা দিন।
৭। স্নেহের বহিঃপ্রকাশ করুণ
মানুষ রোবট নয়, তারা স্নেহ মমতার কাঙ্গাল। আর নিজ সন্তানকে তো সব মা-বাবাই ভালোবাসেন। অনেকে হয়তো সেভাবে প্রকাশ করতে পারেন না, ফলে সন্তানের ধারণা হয় তার অভিভাবক তাকে ভালোবাসেন না। আর তাইতো স্নেহের বহিঃপ্রকাশ করুন এবং তাকে যে আপনি ভালোবাসেন সেটা অনুভব করতে দিন। দেখবেন এক সময় দূরত্বটা কেটে গিয়ে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
৮। সুখ দুঃখের ভাগীদার হোন
সন্তানের সুখের সময় যেমন তার পাশে ছিলেন, দুঃখের সময়ও তেমনি তার পাশে থাকুন। তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাকে সমালোচনা না করে তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুণ। দেখবেন সে আপনাকে আস্থাভাজন হিসাবে মেনে নিবে। এবং এমনি করে এক সময় তিক্ততার সম্পর্ক বদলে মায়াময় সম্পর্কে পরিণত হবে।
৯। ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি করুন
আপনার সন্তান হয়তো অবুঝ, জেনারেশন গ্যাপের কারণে সে হয়তো আপনাকে বুঝতে পারছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তিক্ততার সম্পর্ক আর এতে কষ্ট পাচ্ছেন আপনারা দু’জনই। সুতরাং এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি করুন এবং সেই মানসিকতা যেন আপনার সন্তানের মাঝেও গড়ে উঠে সেই চেষ্টা করুণ।
১০। দুঃখ প্রকাশ করুণ
মানুষ মাত্রই ভুল করে, আর ভুল ছোট বড় যে কেউ করতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন বিষয়ে যদি আপনার ভুল হয়ে থাকে, তবে তা স্বীকার করে, দুঃখ প্রকাশ করতেও পিছপা হবেন না। আপনার সন্তানকে জীবন থেকে বাস্তব জ্ঞান (knowledge) আহরণ করে শিক্ষা নিতে দিন। এবং তার মাঝে শ্রদ্ধাবোধ, কৃতজ্ঞতাবোধ, মানবতা, সহনশীলতা, ধৈর্য্য ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে সচেষ্ট হোন। আর এসব গুণাবলীর বিকাশের মাধ্যমেই আপনার সন্তান একজন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ হিসাবে গড়ে উঠবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
766 total views, 1 views today