বিজ্ঞানের আধুনিক এই যুগেও মানুষ কিছু কিছু কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। এই যুগেও আমরা এমন অনেক কিছুই জানি এবং এক অর্থে মেনেও চলি যার কোন যুক্তি বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নাই। এই কুসংস্কার গুলো বলা যায় বংশ পরম্পরায় চলে এসেছে। এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই শুধু মুরুব্বিরা বলত বলেই আমরা মেনে চলছি। তবে কিছু কিছু বিষয়ে আবার এর পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। চলুন আজকে আমরা জেনে আসি এধরনের পুরনো কিছু কুসংস্কার, মিথ কিংবা ভ্রান্ত ধারণা ও এর পেছনের প্রকৃত সত্য সম্পর্কে-
দুধ-আনারস একসঙ্গে খেলে মৃত্যু হয়-
আনারস দারুণ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু একটি ফল। ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ এই ফলে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। আর অন্যদিকে দুধ একটি সুষম ও আদর্শ খাবার। কিন্তু বাংলাদেশে হয়তো এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে যে তাদের মুরুব্বীদের কাছে এই দুটি খাবার একসাথে খেতে নিষেধাজ্ঞা পায় নি। এমনও শোনা যায় আনারস ও দুধ একসাথে খেলে মৃত্যু হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
আসলেই কি এই ঘটনা সত্য? বিশেষজ্ঞরা বলছেন আনারস ও দুধ একসাথে খেলে বড়জোর পেট খারাপ, বদহজম কিংবা পেট ফাঁপা হতে পারে। কেননা আনারস একটি এসিডিক ও টক জাতীয় ফল আবার অন্যদিকে দুধের মধ্যে টক দিলে দুধ ফেটে যায়। তাই এই ফেটে যাওয়া দুধ খেলে পেট খারাপ হয়। আবার যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে খালি পেটে আনারস খেলে তাদের এই ধরণের সমস্যা বেশি হয়।
মৃত্যুর পরও মানুষের নখ ও চুল বড় হয়-
আমাদের সমাজে এমন কথা প্রচলিত আছে যে মানুষের মৃত্যুর পর নখ ও চুল বড় হয়। কিন্তু আসলেই কি তাই। এক্ষেত্রে যুক্তি কিংবা বিজ্ঞান কি বলে? না এধরনের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেননা সেক্ষেত্রে মৃত ব্যাক্তির পুষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া সেগুলো হজম করা এবং তার শরীরের সেলুলার প্রক্রিয়া গুলো সম্পাদন করা উচিৎ। এবং অবশ্যই তার কোনটিই একজন মৃত ব্যাক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারনেই মৃত ব্যাক্তির চুল এবং নখগুলি তৈরির জন্য শরীরে কেরাটিন তৈরি করার কোনও উপায় নেই।
তারপর ও বলতে গেলে পোস্ট-মর্টেম পর্যন্ত মৃত ব্যাক্তির শরীরে নখ ও চুল বড় হতে পারে। কিন্তু এরপরে মৃত ব্যাক্তির শরীর শুকিয়ে যাওয়ার পরে আর কোন সম্ভাবনা নেই।
মানুষ তার মগজের মাত্র ১০% ব্যবহার করে
আমরা প্রায় সময় হয়তো বলে থাকি হয়তো আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি যে সারা জীবনে একটা মানুষ তার ব্রেইনের মাত্র ১০% ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আসলেই কি তাই? এ ব্যাপারে প্রকৃত সত্য ঘটনাই বা কী?
ধারনা করা হয় ১৮০০ সালে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মানুষের ব্রেইনের ব্যবহার নিয়ে তুমুল তর্ক- বিতর্ক শুরু হয়। এই তর্ক বিতর্কের মধ্যেই উইলিয়াম জেমস নামে এক বিজ্ঞানী তার এক প্রবন্ধে বলেন যে মানুষের মগজের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ তার পুরো জীবদ্দশায় ব্যবহৃত হয়, আর গুজব ছড়িয়ে যায় যে এই অংশটি সম্পূর্ণ মগজের মাত্র ১০%। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য মগজের ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট অংশ কাজ করে।
চীনের মহাপ্রাচীর মহাকাশ থেকেও দেখা যায়-
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আশ্চর্যের মধ্যে চীনের মহাপ্রাচীর অন্যতম। এবং স্থাপত্য শিল্প হিসেবেও এটি শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। অনেক আগেই একজন ইতিহাসবিদ দাবী করেছিলেন যে এই মহাপ্রাচীর নাকি এতটাই বিশাল এবং আশ্চর্যজনক যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়! আসলেই কি তাই?
নাসার মহাকাশযান এই দাবিকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত করেছে। কারণ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের যে কক্ষপথ যেটা পৃথিবী থেকে মাত্র ১৮০ মাইল দূরে অবস্থিত, সেখান থেকেও যথেষ্ট লম্বা হওয়ার পরেও চীনের মহাপ্রাচীরের রংকে এর আশেপাশের অন্যান্য প্রাকৃতিক রং থেকে আলাদা করে বোঝা যায় না। বরং বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দর আর হাইওয়ে সড়ক কিছুটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। তারমানে ব্যাপারটা এখানে একদম পরিষ্কার যে মহাকাশ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু এখনো কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে মহাকাশ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা যায়।
ভাঙা আয়নায় মুখ দেখা-
আমরা সবাই নিশ্চয়ই মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি যে ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখলে চেহারা নষ্ট হয় কিংবা পরিবারের অমঙ্গল হয়। সত্যি কি তাই!
তবে এটি কুসংস্কার হলেও এর পেছনে দারুণ একটা যুক্তি আছে। যেহেতু ভাঙ্গা আয়না ঘরে থাকলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে কিংবা ওই ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখতে গিয়েও যে কেউ যে কোন সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে সেহেতু অনেক আগে থেকেই এই ধরণের কথা প্রচলিত হয়ে আসছে।
আরো পড়তে পারেন- মজায় মজায় রসায়ন শিক্ষা
রাতে ফুল না ছেঁড়া-
মুরুব্বিরা বলে থাকে যে রাতে ফুল ছিঁড়লে বাড়ীর বা পরিবারের অমঙ্গল হয়। আসলেই কি তাই? না, বিজ্ঞান বা যুক্তি মতে এর কোন ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু এর পেছনে দারুণ একটি যুক্তি আছে। রাতের বেলা বাগানে বা ফুলের উপর বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকড় এসে ভিড় করে। তখন যদি এই ফুলের কাছাকাছি কেউ যায় কিংবা ফুল ছিঁড়ে তাহলে বিষাক্ত কোন পোকা মাকড় দ্বারা আক্রমনের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
তাই রাতের বেলায় পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এই ধরণের কথার প্রচলন ঘটে।
এছাড়াও আমাদের সমাজে আরও নানা ধরণের কুসংস্কার কিংবা ভুল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সমৃদ্ধ নানা ধরণের কথা চালু আছে। যেগুলোর কোন রকম ব্যাখ্যা নেই। তবে কিছু কিছু কথার কিন্তু দারুণ ব্যাখ্যাও রয়েছে। এই ব্যাপারেও মানুষের কোন সঠিক ধারনা না থাকায় মানুষ এগুলোকে কুসংস্কার ভেবে ভুল করে।
পরবর্তীতে আমরা এমন আরো কিছু ব্যাপার সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।
আপনার সন্তানকে বিজ্ঞানমুখী করে তুলতে বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স দিতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আরো পড়তে পারেন- সন্তানের ফোকাস বা মনোসংযোগ বাড়ানোর কারিশমা!
1,073 total views, 2 views today