প্রতিদিন আমরা কি পরিমাণ ময়লা আবর্জনা বাইরে ফেলে আসি কখনো ভেবে দেখেছি? যদি প্রতিদিনের হিসেব বাদ দিয়ে মাসের হিসেবে আসি তাহলে সেটা কি পরিমাণ হতে পারে? আর বছরের হিসেব তো বাদই দিলাম। এই যে আমরা এই পরিমাণ বর্জ্য বাইরে ফেলে আসি এটার শেষ পর্যন্ত গন্তব্য কোথায় কখনো ভেবেছি আমরা?
আমাদের ব্যবহৃত এই বর্জ্য থেকে যাচ্ছে এই পৃথিবীতে। এই বর্জ্যের মধ্যে কিছু পচে যায় এবং অনেক বেশি পরিমাণে রয়ে যায় পৃথিবীতে। যার ফলে পৃথিবী হয়ে উঠছে দূষিত, বিষাক্ত এবং বসবাসের অযোগ্য।
বর্জ্য সমস্যা-
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ একদিনে গড়ে ১.২ কেজি বর্জ্য তৈরি করে থাকে। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশ গুলো থেকে উন্নত দেশ গুলো বর্জ্য তৈরিতে বেশি এগিয়ে।
কিন্তু আশংকাজনক হলেও সত্য পৃথিবীতে প্রতিদিন জনসংখ্যার হার বাড়ছে এবং পরিসংখ্যান বলছে ২০২৫ এর মধ্যে এই বর্জ্যের পরিমাণ ৩ গুন পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে কারন, ২০২৫ এর মধ্যে মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ১.৪ বিলিয়নে। যা পৃথিবীর জন্য বড় একটি দুঃসংবাদ।
তাহলে একবার ভেবে দেখুন এই অল্প সময়ের মধ্যে কি পরিমাণ বর্জ্য তৈরি করছি। আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি কিভাবে এই অবস্থা সামাল দিব। এই অবস্থা সামাল দিতে আমাদের এখন থেকেই বর্জ্য তৈরি কমাতে হবে। আমাদের প্রতিদিনের লাইফ স্টাইলে ‘জিরো ওয়েস্ট’ নীতি মানিয়ে নিতে হবে।
কিভাবে ‘জিরো ওয়েস্ট’ এর সাথে মানিয়ে নিবেন-
অনেকে হয়তো ভাববেন জিরো ওয়েস্ট লাইফ স্টাইলে নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু ধাপে ধাপে যদি এই লাইফ স্টাইলের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন তাহলে আপনি হয়ে উঠবেন পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ মানুষ। সেক্ষেত্রে আপনাকে ৫ টি ধাপ মেনে চলতে হবে।
চলুন জেনে আসি জিরো ওয়েস্ট এর ৫ টি ধাপ সম্পর্কে-
১। রিফিউজ বা প্রত্যাখ্যান করা-
এমন কিছু ব্যবহার করবেন না বা নিবেন না যেটা আপনার প্রয়োজন নেই। অথবা আপনাকে এমন কিছু দেয়া হল যেটা আপনার প্রয়োজন নেই এবং আপনি সেটা প্রত্যাখ্যান করুন বিনয়ের সাথে। এমন অনেক প্রোগ্রামে আপনি অংশগ্রহন করে যেখানে কিছু গিফট দেয়া হয় যা আপনার প্রয়োজন নেই কিংবা আপনার আছে সেগুলো আপনি প্রত্যাখ্যান করুন।
২। রিডিউস বা ব্যবহার কমানো-
আপনি আজই আপনার বাসায় খুঁজে দেখুন এমন অনেক জিনিস পাবেন যেটি আপনি ব্যবহার করেন না কিন্তু জমিয়ে রেখেছেন অনেক দিন যাবত। তাই যেটা প্রয়োজন নেই সেটার ব্যবহার কমিয়ে দিন। বাসায় জমিয়ে রাখা অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র যার প্রয়োজন তাকে দিয়ে দিন অথবা বিক্রি করে দিন। এতে করে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারবেন এবং আপনিও সুখে থাকবেন।
৩। রিইউজ বা পুনরায় ব্যবহার (এবং মেরামত)-
রিইউজ বা পুনরায় ব্যবহার জিরো ওয়েস্ট লাইফ স্টাইলের আরেকটি অন্যতম ধাপ। দৈনন্দিন কাজে আমরা এমন কিছু জিনিস ব্যবহার করি যেটা একবার ব্যবহার করে আমরা আর ব্যবহার করি না। যেমন জুতার একটি অংশ ছিঁড়ে গেলে আমরা আর সেটা ব্যবহার করি না। কিন্তু চাইলেই আমরা সেটা মেরামত করে আবার ব্যবহার করতে পারি। আবার যেমন বাজারে গেলে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার না করে যদি পাটের ব্যাগ ব্যবহার করি তাহলে এই ব্যাগ বারবার ব্যবহার করা যায়।
৪। রিসাইকেল-
রিসাইকেল আরেকটা দারুন স্টেপ জিরো ওয়েস্ট লাইফ স্টাইলের জন্য। ভেবে চিন্তে এমন জিনিস ব্যবহারের জন্য কিনুন যেটা আবার রিসাইকেল করা যায়। যেমন প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য বা দ্রব্য ব্যবহার থেকে নিজেকে একদম বিরত রাখুন। কারন এটি রিসাইকেল করা যায় না এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপদজনক।
৫। পচনশীল দ্রব্য ব্যবহার-
আপনার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে পচনশীল দ্রব্য ব্যবহার করুন। এমন জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন যেটি পচে না। পচনশীল দ্রব্য ব্যবহারের ফলে এটি যেখানেই ফেলুন না কেন নিজে নিজে পচে গিয়ে সার উৎপাদন করবে এবং পৃথিবীর জন্য নতুন কিছু তৈরি করবে।
আসুন সবাই মিলে গড়ি সুন্দর পৃথিবী।
আরো পড়তে পারেন- সন্তানের মাঝে বিজ্ঞানের ভিত্তি ঠিক কখন গড়বেন?
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,456 total views, 1 views today