২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৪০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু নিহত হয়েছে ৫৩৯ জন। ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় ৪২ শতাংশই পথচারী। এই তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় গাড়িতে না চড়েও একটা বিশাল অংকের মানুষ সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হন। শিশুদেরকে রাস্তা পার হওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ধারণা না দিলে শিশুরা সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হতে পারে। সেজন্য শিশুদেরকে সড়ক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ছোট থেকেই ধারণা দিতে হবে। আসুন জেনে নিই ৮ টি নিয়ম, যা শিশুদের সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে অবশ্যই জানতে হবে।
থামুন, ভালোভাবে দেখুন, চলুন
রাস্তা পারাপারে এটাকে বলে গোল্ডেন রুল। প্রতিদিনই কোন না কোন কাজে আমাদের রাস্তা পার হতেই হয়। শিশুদেরও রাস্তা পার হতে হয়। রাস্তা পার হতে হলে, প্রথমে থামতে হবে এরপর রাস্তার দু-দিকে ভালোভাবে দেখতে হবে, কোন গাড়ী আসছে কি না? ভালোভাবে দেখে নিশ্চিত হয়ে রাস্তা পার হতে হবে। সন্তানকে নিয়ে বের হলে যদি বাবা-মা এই নিয়ম অনুসরণ করে তাহলে সন্তানের অনুশীলনও হবে, সে অভ্যস্তও হয়ে যাবে।
ওভার ব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহী করতে হবে
রাস্তা পার হওয়ার সময় ওভার ব্রিজ ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে আপনার সন্তানকে অবগত করতে হবে। ওভার ব্রিজ ব্যবহারে নিরাপত্তার পাশাপাশি একটু শারীরিক ব্যায়ামও কিন্তু হয়ে যায়। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটা শহরেই কিছুদূর পর পর ওভার ব্রিজ আছে। ওভার ব্রিজ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সন্তানকে নিয়ে বাইরে বের হলে অবশ্যই ওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন। বাবা-মাকে নিয়মিত ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে দেখলে সন্তানও ওভার ব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহ পাবে।
জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে
যদি কোথাও ফুট ওভার ব্রিজ না থাকে, সেক্ষেত্রে রাস্তা পারাপারের সময় জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে হবে। জেব্রা ক্রসিংয়ের সংকেত সম্পর্কে সন্তানকে আগে থেকে ধারণা দিয়ে রাখতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারেও রাস্তা পারাপারের গোল্ডেন রুল “থামুন, দেখুন, চলুন” মানতে হবে। তবে আশেপাশে অল্প দূরত্বেও যদি ফুট ওভার ব্রিজ থাকে সেক্ষেত্রে একটু হেঁটে হলেও ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে বলতে হবে।
দৌড়ে রাস্তা পার হওয়া যাবে না
শিশু বয়সে অনেকেই খোলা জায়গা, খেলার মাঠ ও রাস্তার তফাৎ বুঝতে পারে না। খেলার মাঠে চাইলে দৌড়ানো যায় কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে দৌড়ালে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দৌড়ে রাস্তা পার হলে গাড়ির ড্রাইভাররা ভাবে গাড়ির গতি না কমালেও পথচারী চলে যেতে পারবে। কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে এক সেকেন্ডের ব্যবধানে ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেজন্য ধীরে সুস্থে কোন ধরণের তাড়াহুড়ো ছাড়াই রাস্তা পার হতে হবে।
আরো জানুন-শিশুদের ৭ টি সাধারণ দূর্ঘটনা ও প্রাথমিক চিকিৎসা।
রাস্তায় আরো মনোযোগী হতে হবে
জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা ভালোভাবে দু-পাশ দেখার পরও রাস্তা পার হওয়ার সময়ে অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে। কারণ হুট করে কোন গাড়ি চলে আসতে পারে। গাড়ির হর্ন বা ইঞ্জিনের আওয়াজ শোনার সাথে সাথে থেমে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এরপর গাড়ি ভালোভাবে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হর্ন শুনে কখনই হুট করে দৌড় দেয়া যাবে না। দৌড় দিলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ফুটপাত ব্যবহারে আগ্রহী করতে হবে
রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে অবশ্যই ফুটপাত ব্যবহার করতে হবে। ঢাকা কিংবা অন্য যেকোন শহরের রাস্তার পাশ ধরে অন্যান্য গাড়ির সাথে অনেক গতিতে মোটর সাইকেল চলতে দেখা যায়। ফুটপাতে না হেঁটে যদি রাস্তার পাশে হাঁটে তাহলে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। রাস্তা ফাঁকা না কি ব্যস্ত? সেটা গুরুত্বপূর্ণ না, রাস্তায় হাঁটার সময় ফুটপাত ব্যবহার করাটাই গুরুত্বপুর্ণ।
মোড়ের কাছাকাছি রাস্তা পার হওয়া যাবে না
রাস্তা পারাপারের সময় মোড় এড়িয়ে চলতে হবে। মোড় বাঁকানো হওয়ার ফলে চলন্ত গাড়ি দেখা যায় না। কিংবা হুট করে গাড়ি চলে আসতে পারে। রাস্তা না দেখার কারণে সামনে কোন পথচারী পড়লেও ড্রাইভার হুট করে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সেজন্য মোড়ের কাছাকাছি স্থান দিয়ে রাস্তা পার না হয়ে মোড় থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে রাস্তা পার হতে হবে।
জ্যামের মাঝ দিয়ে রাস্তা পার হওয়া যাবে না
রাস্তায় জ্যামে আটকে থাকা গাড়ির মাঝ দিয়ে রাস্তা পার না হওয়াই উত্তম। জ্যামে গাড়িগুলো একটা আরেকটার সাথে প্রায় ঘেঁষে দাড়ায়। ফলে এই স্বল্প জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে পড়ে গিয়ে শিশুরা ব্যথা পেতে পারে। আবার বাস ট্রাক গুলো অনেক উচু হওয়ায় একেবারে সামনের কোন পথচারীকে ড্রাইভার নাও দেখতে পারে। না দেখার ফলে ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিয়ে দিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘ্টার সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়তে পারেন-সন্তানকে অপহরণের হাত থেকে রক্ষা করার পরামর্শ।
সন্তানকে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে শিশুদেরকে সড়ক ব্যবহারের নিয়মগুলো আগে থেকে শিখিয়ে রাখা উচিত। প্রয়োজনে শিশুদেরকে নিয়ে রাস্তার বের হলে এই নিয়মগুলো সম্পর্কে অনুশীলন করা যেতে পারে। আগামী পর্বে আমরা বাস, মোটর সাইকেল, কার সহ বিভিন্ন যানবাহনে শিশুদের সেফটি সংক্রান্ত কিছু নিয়ম সম্পর্কে জানবো। ততক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞানবাক্সের সাথেই থাকুন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র-safety4kids, betterhealth
1,849 total views, 1 views today