সমস্যা জীবনের একটি অংশ। আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনই হয়তো আমরা নিজেদের কোন না কোন সমস্যা সমাধান করে এগিয়ে যাই। আর সমস্যা সমাধানের দক্ষতার ভিত্তির উপর মানুষের সফলতাও নির্ভর করে। একই সাথে সমস্যা সমাধান দক্ষতার অভাবে থাকা মানুষের মাঝে হতাশা ও বিষণ্ণতাও দেখা দেয়। এমনটাই বলছে বিহেইভিয়ার রিসার্চ এন্ড থেরাপির ২০১০ সালের একটি গবেষণা। ওই গবেষণায় ছোট থেকেই শিশুদের সমস্যা সমাধান দক্ষতা বাড়ানোর কথাও উল্লেখ করা হয়।
স্বভাবতই আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, শিশুরা কী এমন সমস্যায় পড়ে! মজার বিষয় হচ্ছে, এই গবেষণা বলছে, বড়দের তুলনায় প্রতিদিন শিশুরাই বেশি ছোট ছোট সমস্যার মুখোমুখি হয়। কিন্তু শিশুদের সমস্যাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা সমাধান করে দেয় বলে তার আমাদের চোখে তেমন একটা পড়ে না। চলুন আজকে জেনে নিবো আপনার সন্তানের মাঝে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কীভাবে বাড়াবেন?
সমস্যা সমাধান দক্ষতা বাড়ানো কেন জরুরী?
পৃথিবীর শুরু থেকে এই পর্যন্ত সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতা এগিয়ে গেছে। আর বর্তমান সময়ে সমস্যা সমাধান দক্ষতাকেই একজন মানুষের অন্যতম সেরা দক্ষতা ধরা হয়। আমাদেরকে প্রতিনিয়তই নিজেদের কোন না কোন সমস্যা সমাধান করতেই হয়। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, চাকরি, ব্যবসা কিংবা জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে সফলতার জন্য সমস্যা সমাধান দক্ষতা লাগবেই। তবে সমস্যা সমাধানের বড় পরিসর চোখে পড়বে প্রতিবছর নোবেল পুরস্কারের দিকে লক্ষ্য করলে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বড় বড় সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যই মূলত নোবেল দেয়া হয়।
সমস্যা সমাধানে দক্ষ করার ধাপ সমূহ
সমস্যা চিহ্নিত করা
সমস্যা সমাধানের জন্য দরকার একটা নির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করা। গবেষণা বলছে, শিশুরা সাধারণত সমস্যার কথা বাবা-মার কাছে বলে কম। এটার একটা মূল কারন বকাঝকা। আপনার সন্তান আপনার কাছে কোন সমস্যা নিয়ে আসলেই আপনি যদি তাকে বকাঝকা করেন, গুরুত্ব না দেন তাহলে সে সমস্যা নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দিবে। হোমওয়ার্ক, পড়ালেখা, বুলিং কিংবা যেকোন ইস্যুতে সে চুপ থাকবে, হতাশা ও বিষণ্ণতায় ভুগবে। ফলে আপনাকে শুরুতেই শিশুদের সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, সমস্যাটা যত ছেলেমানুষিই হোক না কেন। অথবা সন্তানকে চুপচাপ, বিষণ্ন দেখলে কিংবা যদি বুঝতে পারেন সে কোন সমস্যায় ভুগছে তাহলে সন্তানকে জিজ্ঞেস করতেও পারেন।
সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কথা বলা
যেকোন সমস্যার বেশ কয়েকটি সমাধান থাকে। সন্তানের সমস্যা শুনে তার বেশ কয়েকটি সমাধান বের করার চেষ্টা করুন। ধরুন, সে কোন একটি হোমওয়ার্কের জন্য আপনার সাহায্য চেয়েছে। শুরুতেই নিজে নিজে তা সমাধান করে দিবেন না। একই ধরণের কোন পড়া স্যার আগে পড়িয়েছে কি না? পড়ালে কীভাবে পড়িয়েছে? স্যারের সেই নিয়ম অনুযায়ী সে সমাধান করতে পারবে কি না? স্যারের নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করতে না পারলে বইয়ের একই ধরণের কোন উদাহরণ আছে কি না? ইত্যাদি বিষয়গুলো তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে বলুন। স্কুলে সে বুলিং-এর শিকার হচ্ছে! সমাধানের শুরুতেই থাকতে পারে তার বন্ধুকে সে যেন বুঝিয়ে বলে, এরপর ক্লাস টিচারকে জানাতে পারে। এরপর আপনি গিয়েও স্যারের সাথে কথা বলে সমাধান করে দিয়ে আসতে পারেন।
সমাধানের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করে সঠিক সমাধান খুঁজে বের করা
যেকোন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে সন্তানের সাথে আলোচনা করতে পারেন। অথবা তাকেই সুবিধা-অসুবিধা খুঁজে বের করার কথা বলতে পারেন। সন্তান যদি কোন ভুল করে কিংবা মজার কোন সমাধান নিয়ে কথা বলে তাহলে তাকে হেয় করবেন না। বরং আড্ডার ছলেই তাকে তা বুঝিয়ে বলুন ও উৎসাহিত করুন। প্রয়োজনে একই সাথে সঠিক সমাধানটি খুঁজে বের করুন। তবে সমাধান নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত সন্তানকেই নিতে দেন।
ভুল থেকে শিক্ষা নিতে বলুন
সন্তান যদি কোন একটি কাজ নিজে নিজে করতে গিয়ে ভুল করে বসে তাহলে তা সহজে গ্রহণ করুন। সেই ভুল থেকে শেখানোর চেষ্টা করুন। ভুলটি কেন হলো? কোথায় হলো? কীভাবে করলে ভুল হতো না? কিংবা আগের ভুলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে নতুন সমাধানে যাওয়া যায়; ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে সন্তানের সাথে আলোচনা করুন। কোন সমস্যার ক্ষেত্রে ভুল যে মূলত ওই সমস্যার নতুন কোন সমাধানের পথ খুলে দেয় এই বিষয়টি সন্তানকে বুঝয়ে বলুন। ও সেটা বাস্তবে করে দেখানোর চেষ্টা করুন।
সমস্যা সমাধান দক্ষতা বাড়াতে কার্যকরী হতে পারে সৃজনশীল খেলনা
পাজেল, রুবিক্স কিউব, ট্যানগ্রাম এমন অনেক ক্রিয়েটিভ খেলনা রয়েছে যেগুলো খেলার ফলে শুধু শিশুদের না, যে কারোরই সমস্যা সমাধান দক্ষতা বাড়ে। একই সাথে বাড়ে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও। সমস্যা সমাধান দক্ষতা বাড়ানোর জন্য দাবা খেলাও শেখাতে পারেন সন্তানকে। দাবা দারুণ এক বুদ্ধিমত্তার খেলা। দিতে পারেন বিজ্ঞানের কনসেপ্ট সম্ভলিত বিভিন্ন রকম সায়েন্স কিটও। সায়েন্স কিটগুলো শিশুদেরকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও থিওরি কাজে লাগিয়ে নিজে নিজে সম্পূর্ণ নতুন কিছু একটা বানাতে শেখায়।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
অতি অভিভাবকত্ব বন্ধ করতে হবে
সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অতি অভিভাবকত্ব বলতে শুরুতেই সন্তানের সব সমস্যা নিজে নিজে সমাধান করে দেয়াকে বোঝায়। পড়ালেখা, হোমওয়ার্ক, স্কুলের কোন সমস্যা, খেলনা হারিয়ে ফেলা, বাসায় প্রতিদিনের অনেক ছোটখাটো সমস্যা যদি প্রতিবার আপনি হাতে ধরে সমাধান করে দেন তাহলে সন্তান সেই সমস্যাটি চিহ্নিতই করতে পারবে না। ফলে সমাধানের ধরণটাও সে বুঝতে পারবে না। শিশুর সব ধরণের সমস্যা প্রতিবার বাবা-মা সমাধান করে না দিয়ে সন্তানের পাশে ছায়া হিসেবে থাকতে পরামর্শ দেন গবেষকরা।
এই কাজগুলো কী আসলে সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তুলতে পারবে কাউকে?
সমস্যা সমাধান মূলত অনুশীলনের ব্যাপার। উপরের ধাপগুলো খেয়াল করলে দেখবেন, সমস্যা সমাধানের একটি প্রক্রিয়া বা প্যাটার্নই মূলত ফুটে উঠেছে। নিজের হোমওয়ার্কের মতো ছোট সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার সন্তান সমস্যা সমাধানের ধাপগুলোর সাথে পরিচিত হবে। ধীরে ধীরে বড় হবে, ধীরে ধীরে সামনে কঠিন সমস্যা আসবে। সেগুলো সমাধান করবে। জীবনে সফলতা পাবে। কে জানে, হয়তো এভাবেই একদিন আপনার সন্তান বড় কোন সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া বের করে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আরেক ধাপ।
1,146 total views, 1 views today