Show Categories

সাইবার বুলিং (Cyber Bullying)-একটি সামাজিক ব্যাধি, সতর্ক হোন! (২য় পর্ব)

মৌ মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া মৌ অনেকটা সময়ই অনলাইনে কাটায়। একদিন ফেসবুকে লগ ইন করার পর, প্রিন্স জন নামক একটি আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পায়। প্রোফাইল’টা দেখে ভাল মনে হওয়ায় বন্ধু বানায়। আস্তে আস্তে অচেনা মানুষটার সাথে ওর প্রায়দিনই কথা চলতে থাকে।

একসময় মৌয়ের অজানা বন্ধু তাকে তার সাথে একা দেখা করতে বললো। মৌ রাজী না হওয়ায়, তার ভাল বন্ধুর আসল রূপ বেড়িয়ে পড়লো। এরপর থেকেই ফেসবুকের ইনবক্স ভারী হতে থাকলো, কুরুচিপূর্ণ কথা আর ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমে।

এদিকে মৌ স্কুলে যেতেও ভয় পাচ্ছিল। কারণ ও কোন স্কুলে, কোন ক্লাসে পড়ে সেটাও লোকটার সাথে শেয়ার করেছিল। বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে মৌ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো। হঠাৎ করে উচ্ছল মেয়েটি সারাক্ষণ মন খারাপ করে চুপচাপ একাকী বসে থাকে। স্কুলে যেতে না চাওয়া, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করা ইত্যাদি বিষয় মায়ের চোখ এড়ালো না।

তিনি মেয়ের সাথে কথা বলে এই আচরণের কারণ’টা বের করতে চেষ্টা করলেন। আর মৌও ভয়ে ভয়ে মাকে সব খুলে বললো। তিনি মেয়ের সব কথা গুরুত্বের সাথে শুনলেন। এক্ষেত্রে ভীত মেয়েকে সাহস দিলেন এবং ওর ভুলগুলো সম্পর্কে বুঝিয়ে বললেন।

তারপর এ ব্যাপারে মৌয়ের আম্মু আব্বু তাদের বন্ধু পুলিশ অফিসার সিরাজ আহমেদের সাহায্য নিলেন। পুলিশ মৌকে মানসিকভাবে হয়রানি করার অভিযোগে প্রিন্স জন ওরফে বদরুলকে গ্রেপ্তার করলো। এবং পুলিশি তদন্তে বের হলো বদরুল ফেসবুকে অল্প বয়সী কিশোর-কিশোরীদেরকে বন্ধু বানিয়ে, তাদের নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে!

আমাদের সমাজে বদরুলের মত বিকৃত মন মানসিকতার মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়! আর তাদের হাত থেকে আপনার সন্তানকে নিরাপদে রাখতে সতর্ক হতে হবে আপনাদেরকেই।

আপনি কি জানেন আপনার সন্তান সাইবার বুলিংয়ের শিকার কিনা? এক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখুন।

সাইবার বুলিং (Cyber Bullying)

ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করাকে সাইবার বুলিং (Cyber Bullying) বলে। ভিকটিম অনেক সময় সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্ল্যাকমেলিং ও কিডন্যাপের ঘটনাও ঘটে থাকে। মূলত সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বেশী ঘটে থাকে।

বুলিংকারীরা মূলত শিশু-কিশোরদের টার্গেট করে থাকে। যার ফলাফল শুরুতে বন্ধুসুলুভ আচরণ করে। এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে। সাধারণত বুলিংকারীরা মানসিক অত্যাচার করে থাকে। তবে তা মাঝে মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পথেও ধাবিত হতে পারে।

অবুঝ ছেলেমেয়েরা অনলাইনের অন্তরালের বন্ধুকে আপন মনে করে। এবং নির্দ্বিধায় সব ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে বসে। ফলে যখন অন্য পাশের মানুষটার আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে, তখন তারা ভীত হয়ে পড়ে। এবং ভয়ে কারো কাছে এ ব্যাপারে কিছু শেয়ার করতে চায়না এবং সর্বদা আতঙ্কে থাকে।

Bullying বা হয়রানি আপনার শিশুর কতটা ক্ষতি করছে? জেনে নিন এবং সতর্ক হোন (পর্ব-১)

সাইবার বুলিংয়ের ক্ষতিকর প্রভাব 

সাইবার বুলিংয়ের (Cyber Bullying) প্রভাবে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকে। অনেকসময় বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয় এবং হতাশায় ডুবে যায়। এমনকি পড়ালেখায়ও মনোযোগ দিতে পারেনা, যার ফলে পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ে। এছাড়াও সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকার ফলে, একসময় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। সবথেকে বড় সমস্যা হল অনেকই এই সাইবার বুলিংয়ের চাপ নিতে না পেরে, আত্মহত্যার পথেও পা বাড়াতে পারে।

সুতরাং সময় থাকতে সতর্ক হোন! সন্তানের হাতে ল্যাপটপ, ট্যাব, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার উন্মুক্ত করে দেয়ার আগে অন্তত একবার ভাবুন! এগুলো আপনার সন্তানের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ হয়ে এসেছে। আধুনিক প্রযুক্তির ভাল দিক গ্রহণ এবং মন্দদিক বর্জন করতে হবে। আপনার সন্তান যেন তা ভালভাবে বুঝতে পারে সেই চেষ্টা করুন।

আপনার সন্তান যখন মোবাইল গেমসে (Mobile Games) আসক্ত! কী করবেন তখন?

আপনার সন্তানকে সাইবার বুলিং (Cyber Bullying) সম্পর্কে সতর্ক করুন!

আপনার সন্তানকে সাইবার বুলিংয়ের কুফল সম্পর্কে সতর্ক করুন। তাকে বোঝান যে, অপরিচিত কোন মানুষের কাছে কখনোই নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া যাবেনা। অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ভার্চুয়াল জগত মানেই নিরাপদ নয়। আর ভার্চুয়াল বন্ধুও সবসময় ভাল হয়না।

আপনার সন্তান অপরিচিত কারো সাথে কথা বলছে কি না এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিন। তার সাথে বন্ধুর মত মিশে সব কিছু জানুন। এবং তার নিরাপত্তার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। তবে টিনেজ ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি স্পর্শকাতর এবং আবেগী হয়ে থাকে। আর তাইতো এসব বিষয়ে তাদের সাথে সতর্কতার সাথে কথা বলুন। যাতে সে যেন ঘুণাক্ষরেও না ভাবে, যে আপনি তার প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করছেন।

সাইবার বুলিং নিয়ে সচেতনতামূলক জরিপ! 

সাইবার বুলিং (Cyber Bullying) নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। টেলিনর গ্রুপ ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস ২০১৭’-তে সাইবার বুলিং নিয়ে পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। সেখানে ৭৯-শতাংশ অভিভাবক জানিয়েছেন, ‘তাদের সন্তান ও পরিচিত শিশুরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনলাইন গেমস খেলার সময় শারীরিকভাবে আক্রান্ত ও হুমকির শিকার হয়েছে।’ এছাড়াও আরও ৪১-শতাংশ জানিয়েছেন, ‘শিশুরা অনলাইনে যে সব আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে গালাগালি, বর্ণবাদ ও যৌনতা বিষয়ক মন্তব্য।’

সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনের সহায়তা নিন!

আপনার আপনজন কেউ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে, অবশ্যই আইনের সহায়তা নিন। যদি ভিকটিম মুখ বুজে সব সহ্য করে! তবে দেখা যাবে অপরাধী আরও অপরাধ করতে উৎসাহবোধ করবে। আর সেক্ষেত্রে ক্ষতিটা কিন্তু আপনাদেরই হবে। আর তাইতো সময় থাকতেই আইনের শরণাপন্ন হোন।

সাইবার বুলিংয়ের শিকার যে কেউ সরাসরি বিটিআরসিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। বিটিআরসি ফোনে ও ইমেইলে দুই মাধ্যমেই অভিযোগ গ্রহণ করে। বিটিআরসির “কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্স রেসপন্স টিম”-এ ধরনের সমস্যায় দ্রুত সহায়তা করে থাকে। বিটিআরসিতে হয়রানির অভিযোগ জানাতে কল করতে পারেন (০২)৭১৬২২৭৭ নম্বরে বা ইমেইল পাঠাতে পারেন-contact@csirt.gov.bd এছাড়াও “মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের” হটলাইন ১০৯২১ নম্বরে ফোন করলেও, গোপনীয়তা রক্ষা করে এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা হয়।

সাইবার বুলিং (Cyber Bullying) সম্পর্কে নিজে সতর্ক হোন এবং অন্যকেও সচেতন করুন। আপনার একটি সঠিক পদক্ষেপ, অনেক নিস্পাপ জীবন বাঁচিয়ে দিবে। সুতরাং সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

তথ্যসুত্রঃ

১। http://www.mowca.gov.bd/

https://www.telenor.com/

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,733 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment