সন্তানকে নতুন স্কুলে ভর্তি করালেন। মাস খানেক পরে সন্তানের মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। সন্তানের নতুন স্কুল এর প্রতি অনিহা, ফলাফল খারাপ, পড়ালেখায় অমনোযোগ, বিষণ্ণতা। সন্তানকে বকাঝকা করলেন। ভাবলেন, পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলা কিংবা ফলাফল খারাপের সব দায় সন্তানেরই। ভাবলেন, ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে। স্কুল পরিবর্তন করার পরে এমন ঘটনা প্রায় অনেকের সাথেই ঘটে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের সন্তানের কাছে এর কারণটা জানতে চাই না। জানতে চাই কেবল পড়ালেখা আর ফলাফল। স্কুলে যেতে না চাইলে জোর করে, চোখ রাঙিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দেই। জানতে চাই না, সে কেন যেতে চায় না স্কুলে? কেউ সমস্যা কাটিয়ে ওঠে, কেউ আর কাটিয়ে ওঠতে পারে না। আটকে যায় ফলাফল খারাপ হওয়া ও বিষণ্ণতার বৃত্তে। এক্ষেত্রে আপনি যদি নতুন স্কুলের শুরুর দিকেই নতুন স্কুল নিয়ে সন্তানের সাথে গল্প করেন তাহলে নতুন স্কুলে তার সমস্যাগুলো জানতে পারবেন ও সমাধান করতে পারবেন। আজকে আমরা এমন ৫ টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো, যে ৫ টি প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি সন্তানের নতুন স্কুল সম্পর্কে ও তার ভালো-লাগা মন্দ লাগা সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমেরিকান আর্লি চাইল্ডহুড এডেকেশন স্পেশালিস্ট চেরিস নেলসন এই ৫ টি প্রশ্নকে এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের সাথে তুলনা করেছেন। সেটা কীভাবে ব্লগটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। প্রশ্নে যাওয়ার আগে পড়ে নিতে পারেন সন্তানকে নতুন স্কুলে মানিয়ে নিতে সাহায্য করার কিছু টিপস।
স্কুলে আজকের দিনের সেরা সময় কোনটি ছিলো?
এই প্রশ্নে আপনি সন্তানের স্কুলের পুরো দিন সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন প্রশ্ন যেন ওপেন এন্ডেড হয়। মানে সন্তান যেন প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত ভাবে দেয়। তাহলে স্কুলে তার ভালোলাগা, মন্দ লাগা জানতে পারবেন। কোন কিছু ভালো না লাগলে সেটা কেন ভালো লাগেনি তাও জিজ্ঞেস করুন। স্কুল শুরুর প্রথম কয়েকদিন এই প্রশ্ন করলে, আপনি তার প্রতিদিনের স্কুলে ভালো সময় খারাপ সময় সম্পর্কে মোটামুটি একটা স্পষ্ট ধারণা পাবেন। এরপর আপনি সে সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর কোন সমাধানেও যেতে পারবেন। সন্তানকে আরো একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন। তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, আজকের দিনের কোন বিষয়টি সে পরিবর্তন করতে চায়। ভালো দিনেরও অল্প কিছু খারাপ লাগা থাকে। এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে আপনি আপনার সন্তানের বিরক্তির বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এবং সেটি পরিবর্তন করার ব্যাপারে তাকে বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
স্কুলে তুমি কোন কোন বন্ধুদের সাথে বেশি খেলো গল্প করো?
আপনার সন্তান স্কুলে কাদের সাথে বেশি মিশছে তা জানা আপনার জন্য জরুরী, একই সাথে স্কুলে তার বন্ধু গড়ে উঠছে কি না তা জানাও। সন্তানের নতুন স্কুল-এ দ্রুত বন্ধু তৈরি হয়ে গেলে সে স্কুলের সাথে মানিয়েও নিবে দ্রুত। একই সাথে তার বন্ধু ও বন্ধুদের সাথে কাটানো ভালো ও মন্দ সময়গুলো সম্পর্কেও জানতে পারবেন। একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বন্ধুদের সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করতে পারেন। কিংবা সন্তানের বন্ধুদের সাথে আপনিও পরিচিত হতে পারেন। এতে আপনি আপনার সন্তানের ভালো সঙ্গ, খারাপ সঙ্গ সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
আজকে নতুন কী শিখলে?
শুধু একাডেমিক পড়ালেখা না, একাডেমিক পড়ালেখার বাইরের শিক্ষা সম্পর্কেও সন্তানের কাছে জানতে চাইতে পারেন। সাধারণত বাচ্চারা কোন কিছু শিখলে আবার ভুলেও যায়। ফলে এই প্রশ্ন তাকে একাডেমিক পড়ালেখার ক্ষেত্রে নতুন কিছু শেখাকে আরো একবার ঝালিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তাছাড়া সন্তানের নতুন স্কুল এর শেখার পরিবেশ সম্পর্কেও জানতে পারবেন। জানতে পারবেন, স্কুলের পরিবেশ আপনার সন্তানের মাঝে জানার আগ্রহ কতটা বাড়িয়েছে বা আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে কি না! আর এইসব প্রশ্নের ফাঁকে সন্তানের সাথে জমিয়ে গল্পও হয়ে যাবে। এই প্রশ্নের ফলে সন্তানের মাঝে নতুন কোন শেখা বা তথ্যকে গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে সচেতনও করবে।
আজকে ভালো কোন কাজ করে কাউকে খুশী করতে পেরেছো?
আমার প্রাইমারি স্কুলের একজন স্যার একটা নিয়ম চালু করেছিলেন। পড়া না পারলে উনি আমাদের শাস্তি দিতেন না। কিন্তু সাথে একটি শর্ত জুড়ে দিতেন। একদিন পড়া না পারলে পরের দিনের পড়া পারতে হবে, সাথে ১ টি ভালো কাজ করতে হবে; তবেই শাস্তি মাফ। এতে এক সাথে দুটো লাভ হলো। আমরা প্রতিদিনে স্কুলে অনেক আনন্দের সাথে সবাই ভালো কাজ নিয়ে আলোচনা করতাম। কে কয়টা ভালো কাজ করেছিলাম তা নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো আমাদের মাঝে। আর স্কুলের প্রতি আগ্রহ তো বেড়ে গেলো অনেকগুণ।
কাউকে খুশি করার মানবিক গুণটি সম্পর্কে যদি আপনি আপনার সন্তানকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে তার মধ্যে মানবিকতা তো গড়ে উঠবেই। একই সাথে কাউকে খুশি করার আনন্দটাও সে পেতে শুরু করবে। ফলে স্কুলের প্রতি তার আগ্রহও বাড়বে
তোমার স্কুলের কোন বিষয়টি তুমি পরিবর্তন করতে চাও?
আপনার সন্তানের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও চিন্তার করার ধরণে উন্নতি নিয়ে আসতে পারবেন এই প্রশ্নের মাধ্যমে। একই সাথে জানতে পারবেন স্কুলের কোন বিষয়টি তার ভালো লাগে না। সেসব বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা করে যদি যুক্তিসহ তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন তাহলে তার ভেতরের খারাপ লাগাটা কিন্তু চলে যাবে। কীভাবে পরিবর্তন করতে চায় তা নিয়েও কিন্তু ঘরোয়া আড্ডা দিতে পারেন। একটু হাসি মজা হলো। স্কুলের প্রতি কিছুটা বিরক্তিবোধ থাকলেও তা চলে যাবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,663 total views, 1 views today