[emaillocker]
ফারহানা রশিদ ও সাবরিনা আলমের সন্তানেরা একই স্কুলে পড়ে। বাচ্চাদেরকে স্কুলে নিয়ে আসার সুবাদে উনাদের দুজনের মাঝে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। উনারা দুজন প্রায় সন্তানদের বেড়ে উঠা নিয়ে আলোচনা করেন। গত কয়েকদিন ধরে দুজনই তাদের সন্তানদের মাঝে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করছেন। এইসব আচরণের কারণ খুঁজতে গিয়ে দুজনই খেয়াল করলেন যে, উনাদের সন্তানদের ইদানিং কার্টুন আসক্তি বেড়ে গেছে। উনারা দুজনই শিশুর কার্টুন আসক্তি, শিশুর উপর কার্টুনের প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জেনে নিলেন। চলুন আমরাও আজকে শিশুর কার্টুন আসক্তি’র প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানবো।
শিশুর ওপর কার্টুনের নেতিবাচক প্রভাব
সহিংস আচরণে উৎসাহিত করে
কার্টুন দেখার ফলে শিশুদের মনে ধারণা জন্মে, আঘাত করতে কেউ ব্যথা পায় না। অনেক কার্টুনে দেখা যায়, কার্টুনের চরিত্রগুলো আঘাত পেয়েও সাথে সাথে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কার্টুনের চরিত্রকে সহিংস আচরণ করতেও দেখা যায়। এইসব দেখার ফলে শিশুদের মাঝে সসিংস আচরণ জন্ম নেয়।
আক্রমণাত্মক আচরণ গড়ে তোলে
অনেক কার্টুনের চরিত্রগুলো আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। এইসব কার্টুন দেখার ফলে শিশুদের মাঝে আক্রমণাত্মক আচরণ গড়ে উঠতে পারে। অনেক বাচ্চারা সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে, গবেষণা বলছে আক্রমণাত্মক কার্টুন দেখার ফলে এমনটা হয়।
অপ্রীতিকর ভাষা শেখে
অনেক কার্টুনের ভাষা শিশুদের উপযোগী হয় না। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, কার্টুন থেকে শেখা খারাপ শব্দগুলো তারা অনেক সময় বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা শুরু করে। তাছাড়া কার্টুনে স্বাভাবিক বিষয়েও উচ্চ শব্দে ও রাগান্বিত স্বরে ভাষা ব্যবহার করা হয়, যা শিশুদের মাঝেও প্রভাব ফেলে।
অসামাজিক আচরণ গড়ে তোলে
কার্টুনের সাধারণ বিষয়ে মারামারি ও আক্রমণাত্মক আচরণ শিশুদেরকে অসামাজিক করে তোলে। অনেক সময় বাচ্চারা স্কুল বুলিংয়ের মতো আচরণ কার্টুন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করে থাকে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়
শিশুরা ঘন্টার পর ঘন্টা টিভির সামনে বসে কার্টুন দেখার ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। এইসব সমস্যার মধ্যে চোখের সমস্যা, স্থুলতা, অনিয়মিত খাওয়ার অভ্যাসের কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টি চাহিদা পূরণ না হওয়া অন্যতম।
খারাপ আইডল বেছে নেয়
শিশুরা তাদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রকে মাথায় রেখে তার মতো হতে চায়। যা অনেক সময় বাচ্চাদের মাঝে খারাপ অভ্যাস গড়ে তোলে। কার্টুন চরিত্র বাচ্চাদের মনোজগতে প্রভাব ফেলার ফলে বাচ্চারা অযৌক্তিক আচরণ, আবাধ্য আচরণ করে থাকে।
আরো পড়ুন- শিশুর ভাষা ও জ্ঞান উন্নতিতে বাবা-মায়ের ভূমিকা ও ৯ টি পরামর্শ।
কার্টুনের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধে বাবা-মাদের জন্য কিছু টিপস
এখন জানবো কার্টুন দেখা বন্ধ না করেই নেতিবাচক প্রভাবগুলো প্রতিরোধের কিছু প্যারেন্টিং টিপস-
কার্টুন দেখার একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দিন
প্রতিদিন কার্টুন দেখার কিছু নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। শিশুর রুটিনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটা সময় ঠিক করে নিন। হতে পারে দিনে ১ ঘন্টা কিংবা আপনার শিশুর রুটিনের সাথে মিলিয়ে কম-বেশি করা যেতে পারে। তবে ১ ঘন্টার বেশি সময় কার্টুন না দেখাই ভালো। প্রতিদিন ১ ঘন্টাও কার্টুনের জন্য একটু বেশিই সময়!
শিশুর উপযোগী ও শিক্ষনীয় কার্টুন নির্বাচন করুন
সব কার্টুন শিশুদের উপযোগী না। শিশুদের উপযোগী ও শিক্ষনীয় বিষয় আছে এমন কিছু কার্টুন নির্বাচন করুন। শিশুকে নির্বাচিত কার্টুনগুলো দেখতে উৎসাহিত করুন। এতে সে কার্টুন দেখার সাথে সাথে শিখতেও পারবে অনেক কিছু।
শিশুর সাথে একসাথে কার্টুন দেখুন
শিশুর সাথে একসাথে কার্টুন দেখার ফলে শিশুর প্রিয় কার্টুন সম্পর্কে জানা যাবে। কার্টুন দেখার সময় শিশুর প্রতিক্রিয়া দেখে তার জন্য সঠিক কার্টুন নির্বাচন সহজ হবে। এবং শিশুকে কার্টুনের খারাপ ও ভালো দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া যাবে।
শিশুকে কার্টুন ও বাস্তবের মাঝে পার্থক্য বুঝিয়ে বলুন
শিশুকে কার্টুনের সাথে বাস্তবের মিল-অমিল গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিন। কার্টুনের কোন বিষয়টি বাস্তব জীবনে ক্ষতিকর, কোনটি অগ্রহণযোগ্য, কোনটি বাস্তবতা বহির্ভুত এ বিষয়গুলো তাকে ব্যাখ্যা করুন। এতে সে বুঝতে পারবে এবং ভালো জিনিসগুলো গ্রহণ করতে পারবে।
কার্টুনের যে শুধুই নেতিবাচক প্রভাব আছে এমন না, কার্টুনের কিছু ইতিবাচক প্রভাবও আছে। শিশুর কার্টুন আসক্তি’র ভেবে কার্টুন দেখা বন্ধ করে দিলে শিশুরা ইতিবাচক প্রভাবগুলো থেকে বঞ্চিত হবে।
আপনার সন্তানের জন্য আরো মজার মজার এক্সপেরিমেন্টসহ শীগ্রই আমাদের নতুন বিজ্ঞানবাক্স আসছে। এখন থেকে আমাজনেও বিজ্ঞানবাক্স পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
[/emaillocker]
1,799 total views, 1 views today