প্রায় সব শিশুদের খারাপ অভ্যাস থাকে। যে অভ্যাসগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও একই সাথে বিরক্তিকরও বটে। দাঁত দিয়ে নখ কাটা, নাক খোঁচানো, ঠোঁট চোষা, আঙুল চোষার মত এমন অনেক অভ্যাস রয়েছে যা বাবা-মার জন্য বিরক্তিকর ও শিশুর জন্যও ক্ষতিকর। শিশুদের খারাপ অভ্যাস গুলো দূর করার জন্য আজকের ব্লগে থাকছে কিছু টিপস।
দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো
অনেক শিশুর মাঝেই দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানোর অভ্যাস দেখা যায়। বিশেষ করে বাচ্চারা কোন কারণে চিন্তিত থাকলে, বিরক্তিবোধ করলে ও টিভি দেখা বা পড়ার মতো কোন কাজে ব্যস্ত থাকার সময় নখ কামড়াতে দেখা যায়। দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। হাত দিয়ে সারাদিন নানান কিছু স্পর্শ করার কারণে নখের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। মুখ দিয়ে দাঁত কামড়ানোর ফলে এইসব জীবাণু পেটে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানোর ফলে নখের চারপাশ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। ও আঙ্গুলের চামড়ার আর্দ্রতার অভাব হয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধ
এই সমস্যা দূর করার জন্য শিশুর সাথে কোন নেতিবাচক আচরণ করা, তাকে ধমক দেয়া বা শক্ত কোন পদক্ষেপ না দেয়াই উত্তম। এতে শিশুর প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নিয়মিত শিশুর নখ কাটতে হবে, নখের আশেপাশে ময়েশ্চারইজার ব্যবহার করলে শুষ্ক ভাব দূর হবে। শিশুকে নিয়মিত হাত ধোয়া ও জীবাণু বহনকারী কোন কিছুর সংস্পর্শে না আসার দিকে নজর দিতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে শিশুকে দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানোর ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে জানাতে হবে।
ঠোঁট চোষা
শীতকালে এই অভ্যাস ছোট বড় অনেকের মাঝেই দেখা যায়। শীতে ঠোঁট বেশি বেশি শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে ঠোঁট চোষা ধীরে ধীরে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়। ঠোঁট চোষার কারণে ঠোঁটের আর্দ্রতা আরো বেশি পরিমাণ হারাতে পারে। ঠোঁট ফেটে গিয়ে যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এতে ঠোঁটে ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা থেকে যায়।
প্রতিরোধ
ঠোঁটে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। শিশুরা রাতে ঘুমের মধ্যেও ঠোঁট চোষে, সেজন্য রাতে ঘুমানোর সময়ও ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে ঠোঁটে আর্দ্রতা বজায় থাকবে ফলে শিশু নিজে থেকেই ঠোঁট চোষা বন্ধ করে দিবে।
নাক খোঁচানো
নাক খোঁচানো বাচ্চাদের অনেক নিয়মিত ও সাধারণ খারাপ অভ্যাস। যেকোন বয়সী শিশুর মাঝেই এই অভ্যাস দেখা যায়। নাক খোঁচানোর ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, নখের আঘাতে নাকে ইনফেকশন হওয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকতে পারে। নাক খোঁচানোর ফলে নখের জীবাণু বা ভাইরাস নাকে প্রবেশ করতে পারে।
প্রতিরোধ
কারও সামনে অকারণে নাক খোঁচানো একটা লজ্জাজনক বিষয়, এই বিষয়টা নরমভাবে সন্তানকে বোঝাতে হবে। যদি কোন কারণে নাক পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় সে যেন টিস্যু অথবা অন্য কোন নরম কাপড় ব্যবহার করে। টিস্যু ও নরম কাপড় ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুললে এমন বিরক্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আঙ্গুল চোষা
আঙ্গুল চোষার অভ্যাস ৪ বছর বয়সের মধ্যে অনেক শিশুর মাঝেই দেখা যায়। কারও কারও অভ্যাস দূর হয়ে যায় এই সময়টাতেই । কিন্তু কারও কারও অভ্যাসটা দীর্ঘসময় ধরে থেকে যায়। সাধারণত ক্ষুধা লাগার পর শিশুকে দুধ খাওয়াতে দেরি হলে ছোট বয়স থেকেই শিশুর আঙ্গুল চোষার অভ্যাস দেখা যায়। অনেক দিন যাবত চোষার ফলে শিশুর আঙ্গুলে ক্ষত সৃষ্টি হয় ও আঙ্গুল বিবর্ণ হয়ে যায়।
প্রতিরোধ
এ অভ্যাস দূর করার জন্য শিশুকে লজ্জা দেয়া যাবে না। অনেকেই এই কাজটা করে থাকে। সোজা কথা কোন নেতিবাচক প্রভাব শিশুর উপর পড়তে দেয়া যাবে না। শিশুর ক্ষুধা লাগার সাথে সাথে তাকে দুধ খাওয়ালে এই অভ্যাস গড়ে ওঠে না। তারপর যদি কারও এমন অভ্যাস থাকে, তাহলে একদম ছোট থাকতেই এই অভ্যাস দূর করতে হয়। শিশুকে সবসময় খেলনা বা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। শিশুকে আঙ্গুল চোষার নেতিবাচক দিক বোঝানো যেতে পারে। হাতে জীবাণু মুক্ত ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে যদি তাকে ২-৩ দিন এই অভ্যাস থেকে বিরত রাখা যায় তাহলে অভ্যাসটা অনেকাংশেই চলে যায়।
ঘুমের মধ্যে দাঁত কাটা
এই অভ্যাসটা অনেক শিশুর মাঝেই দেখা যায়। তারা ঘুমের মধ্যে উপর ও নিচের পাটির দাঁত একটার সাথে একটাকে চেপে ধরে কাটে। ঘুমের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে শিশুদেরকে এটা করতে দেখা যায়। ঘুমের মধ্যে দাঁত কাটার যদিও নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। তবে ধারণা করা হয় মানসিক চাপ ও দুঃস্বপ্ন দেখার কারণে এমনটা হতে পারে।
প্রতিরোধ
শিশু ঘুমের মধ্যে দাঁত কাটলে অনেকেই তাকে জাগিয়ে ফেলেন। এই কাজটা করা যাবে না।কারণ, শিশু নিজের অজান্তেই এই কাজটা করে। শিশুকে চাপ কমিয়ে দিন। কোন কারণে দুঃস্বপ্ন দেখলে তা প্রতিরোধ করুন। দুঃস্বপ্ন প্রতিরোধের জন্য এই ব্লগটা পড়তে পারেন। দাঁতের কোন সমস্যা হচ্ছে কি না সেজন্য নিয়মিত দাঁত চেক আপ করুন।
শিশুদের খারাপ অভ্যাস‘গুলো দূর করার জন্য উপরের নিয়মগুলো মেনে শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিলেই শিশুদের খারাপ অভ্যাস দূর করা সম্ভব।
শিশুকে বিজ্ঞানবাক্স উপহার দিন তাকে সৃজনশীল করে তুলুন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,733 total views, 1 views today