নবজাতকের ত্বক স্পর্শকাতর হওয়ায় তাদের ত্বকে অনেক সহজেই বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। বাচ্চাদের অ্যালার্জি তাদের জন্য বেশ যন্ত্রণাদায়ক। অ্যালার্জির ফলে বাচ্চাদেরকে গায়ে ফোঁসকা পড়া, ত্বক জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এজন্য বাচ্চাদের অ্যালার্জি হলে তা দ্রুত নিরাময় করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের অ্যালার্জি প্রতিরোধ সম্ভব। আমরা আজকে বাচ্চাদের সাধারণ কিছু অ্যালার্জি, লক্ষণ, প্রতিরোধ সম্পর্কে জানব। এবং বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন সম্পর্কে জানব।
১। একজিমা
৪-৬ মাস বয়সী বাচ্চাদের মাঝে একজিমা হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায় বেশি। সাধারণত একজিমা শরীরের যেকোন স্থানে হতে পারে। বিশেষ করে গালে, কনুইতে, হাতের আঙ্গুলের মাঝে বেশি দেখা যায়। অতিরিক্ত ডায়াপার নির্ভর হওয়ার কারণে শিশুর কুঁচকিতেও একজিমা দেখা যায়। একজিমা হলে কখনও কখনও ত্বক ফেটে যাওয়ার মতো দেখায়।
কারণ
জেনেটিক কারণে অনেক সময় একজিমা হয়ে থাকে। পরিবারের কারো আগে থেকে একজিমা, আমবাত ও অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে নবজাতকও একজিমা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। শিশুকে স্তন প্রদানকারী মা যদি অ্যালার্জির উপাদান সমৃদ্ধ খাবার (যেমন-চিংড়ি মাছ, চীনাবাদাম, আনারস ইত্যাদি) খান তাহলে শিশুর একজিমা হতে পারে। তাছাড়া আঁটসাঁট জামা কাপড় পরানো, শিশু ঘেমে গেলে তা দ্রুত না মোছা, অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়াও শিশুর একজিমার জন্য দায়ী।
লক্ষণ
শরীরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে হাতের আঙুল, কুঁচকি, কনুই, গাল ইত্যাদিতে ছোট ছোট লাল ফোসকা বা র্যাশ দেখা যায়। এইসব ফোসকার মধ্যে হলুদাভ তরল থাকে। একটু চাপে সে তরল বের হয়ে পড়ে ও মাঝে মাঝে জ্বালাপোড়া করে।
প্রতিরোধ
শিশুকে সবসময় পরিষ্কার ও ঢিলেঢালা কাপড় পড়াতে হবে। শিশুকে সবসময় পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে। ঘেমে গেলে বা অন্যকোনভাবে ভিজে গেলে যদি অনেকক্ষণ ধরে তা মোছা না হয় তাহলে ত্বকে ঘামাছি থেকে ধীরে ধীরে একজিমা হতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ায় শিশুর ত্বকে ময়েশ্চেরাইজার ব্যবহার করলেও একজিমা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ডায়াপারের ব্যবহার কমালেও একজিমা প্রতিরোধ করা যায়।
২। বাগ বাইট বা পোকার কামড়
বাগ বাইট সাধারণত মশা, ছাড়পোকার মতো কিছু পোকামাকড়ের কামড়ের কারণে হয়ে থাকে। মুখে, হাতে ও ঘাড়ে বাগ বাইট দেখা যায়। বাগ বাইট পরবর্তীতে আমবাতে রূপান্তরিত হতে পারে।
কারণ
এটা সাধারণ পোকার কামড়েই হয়ে থাকে। মশা, ছাড়পোকা, শুঁয়োপোকা, পিঁপড়া ইত্যাদির কামড়ের ফলে শিশুদের ত্বকে এই সমস্যা দেখা যায়।
লক্ষণ
পোকা কামড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে কামড়ের স্থানে ছোট পাঁচড়ার মতো হয়। এরপর ধীরে ধীরে একটু বড় হয়ে বাদামি রং ধারণ করে। পোকায় কামড়ের ফলে হওয়া এইসব র্যাশ বেশ বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে।
প্রতিরোধ
এটা খুবই সাধারণ ধরণের অ্যালার্জি। সাধারণত বেশি গুরুতর হলে ডাক্তাররা এক ধরণের ক্রিম দিয়ে থাকে যা ব্যবহার করলে বাগ বাইট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। প্রতিরোধের জন্য বাসায় মশারী ব্যবহার করতে হবে ও বাসা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেন বাসায় পোকা জন্ম নিতে না পারে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৩। হিট র্যাশ বা ঘামাচি
কারণ
সাধারণত অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া ও শিশুদের ঘেমে যাওয়া হিট র্যাশের জন্য দায়ী। শিশুদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকার কারণে অতিরিক্ত গরমে ঘামাচি হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত ডায়াপার নির্ভরতা, আঁটসাঁট কাপড় পরিধানের কারণেও শিশুরা হিট র্যাশে আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণ
সংখ্যায় অনেক কিন্তু ক্ষুদ্র র্যাশ দেখা যায় সারা শরীরে। শরীরের আবৃত স্থানগুলোতে অনেক বেশি র্যাশ দেখা যায়।
প্রতিরোধ
শিশুকে শুকনো ও ঠান্ডা রাখা, ঘেমে গেলে তাড়াতাড়ি শরীর মুছে দেয়া, আরামদায়ক পোশাক পরানোর মাধ্যমে হিট র্যাশ এড়ানো যায়। অনেকে ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ঘামাচি পাউডার ব্যবহারে শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় বিধায় পাউডার ব্যবহার কম করাই উত্তম।
৪। দাদ
আমরা সবাই মোটামুটি দাদ-এর সাথে পরিচিত ।দাদ একধরণের ফাংগাল ইনফেকশন। এটা মাথার খুলি, পা ও মানব দেহের গোপন স্থানে হয়ে থাকে।
কারণ
সাধারণত ঘাম ও ভেঁজা কিছুর সংস্পর্শে অনেকক্ষণ ধরে থাকার ফলে শিশু দাদে আক্রান্ত হতে পারে। দাদ ছোঁয়াচেও বটে। পরিবারে কারো দাদ থাকলে সে লোকের দাদের সংস্পর্শে, তার ব্যবহার করা জামা কাপড়, গামছা বা তোয়ালের মাধ্যমেও শিশু দাদ-এ আক্রান্ত হতে পারে।
প্রতিকার
এন্টি ফাংগাল ক্রিম ব্যবহারে দাদ দূর করা সম্ভব। আক্রান্ত স্থান ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে তারপর ক্রিম লাগাতে হবে। বেশিক্ষণ ভেজা কাপড়ে শিশুকে রাখা যাবে না।
বাচ্চাদের অ্যালার্জি প্রতিরোধে ত্বকের যত্ন
বাচ্চাদের অ্যালার্জি জনিত সব রোগই ত্বকের অযত্নের কারণে হয়ে থাকে। বাচ্চাদের অ্যালার্জি জাতীয় রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য ত্বকের সঠিক পরিচর্যার যথেষ্ট।
• শিশুকে প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল না করানোই উত্তম। সাবানের ক্ষার শিশুর ত্বকে প্রাকৃতিক তেলের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে ত্বকে সমস্যা হতে পারে। আর সেই সমস্যা থেকে হতে পারে অ্যালার্জি।
• শিশুর ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য শিশুকে গোসল করানোর পর তার শরীরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বক শুষ্ক থাকবে।
• পোকামাকড়ের কামড় থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। নিয়মিত মশারী ব্যবহার করতে হবে, বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিশুর রুম নিয়মিত বিরতিতে পরিষ্কার পরিষ্কার করতে হবে।
• ত্বকে অ্যালার্জির অন্যতম কারণ শিশুর অতিরিক্ত ঘাম হওয়া। শিশুর শরীরে ঘাম হওয়া এড়াতে তাকে আঁটসাঁট কাপড় না পরিয়ে সুঁতি ও আরামদায়ক কাপড় পড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
• অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভবনা থাকে এমন কোন খাবার শিশুকে খাওয়ানো যাবে না ও দুধ খাওয়ানো অবস্থায় মাকে এইসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
• শিশুর রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খুব বেশি গরম কিংবা খুব বেশি ঠান্ডা রাখা যাবে না।
• শিশুর নখ ছোট রাখতে হবে ও ধারালো রাখা যাবে না। নখের আঁচড়েও অনেক সময় ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে।
বাচ্চাদের অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ত্বকের যত্ন নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ত্বকের সঠিক যত্ন নেয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের অ্যলার্জি প্রতিরোধ করা যায়।
তথ্যসূত্র-webmd
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
5,865 total views, 1 views today