৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে তো বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো হয় না। শিশু সব ধরণের পুষ্টি উপাদান মায়ের বুকের দুধ থেকেই পেয়ে থাকে, এবং একই সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর স্বাস্থ্যগত কিছু জটিলতার জন্যও বুকের দুধই কিন্তু দায়ী! সেটা কীভাবে? মূলত বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের ডায়েটের ওপরেই শিশুর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য জটিলতাটি নির্ভর করে। আপনি যদি এমন কিছু খান, যেটার সাথে শিশুর স্বাস্থ্য ঠিক মানিয়ে নিতে পারে না তাহলেই শিশুর সমস্যা হতে পারে। আজকে আমরা এমন বেশ কিছু ধরণের খাবার নিয়ে কথা বলবো, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। তবে বেশ চিন্তার কিছু নেই, আমেরিকান চাইল্ডবার্থ এডুকেটর লিন্ডলে শিপ্লে বলেছেন, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের জন্য একদম নিষিদ্ধ কোন খাবার নেই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে শিশুর স্বাস্থ্যগত জটিলতা এড়াতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা বা পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার কথা বলেন এই গবেষক।
কফি, চকলেট, চা
অনেকেই বলে, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কফিকে এড়িয়ে চলতে। তবে গবেষকরা বলছেন, বুকের দুধ খাওয়ানো মা যদি কফি, চা কিংবা চকলেট খায় তাহলে শিশুর স্বাস্থ্যে সেটা খুব একটা জটিলতা তৈরি করে না। তবে, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ৩ কাপের বেশি কফি বা চা না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন গবেষকরা। একই সাথে শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পরে খেলেও তেমন সমস্যা হয় না। চকলেটে খুব অল্প পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় ইচ্ছে হলে আপনি সীমিত পরিমাণে চকলেট খেতেই পারেন।। তবে যদি দেখেন যে, এই খাবারগুলো খাওয়ার পরেই শিশুর স্বাস্থ্যে কোন ধরণের জটিলতা (বিশেষ করে শিশুর ঘুমে সমস্যা, অস্থিরতা বা পেটে সমস্যা) দেখা দেয় তাহলে অন্তত ২-৩ সপ্তাহ আপনার ডায়েট লিস্ট থেকে এই খাবারগুলো বাদ দিন।
মাছ
মাছে মার্কারি নামে এক ধরণের হালকা নিউরোটক্সিন থাকে বলে ধারণা করা হয়, বুকের দুধ খাওয়ানো মা মাছ খেলে শিশুর স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলা উত্তম। কারণ সামুদ্রিক মাছেই মার্কারির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। কিন্তু কিছু মাছের পুষ্টিগুণও কম না। এবং এইসব মাছের পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন মার্কারির স্বাস্থ্য জটিলতাকে হ্রাস করতে পারে। বিশেষ করে দেশী মাছ যেমন-রুই, মাগুর মাছ, চিংড়ি এই মাছগুলো আপনি সপ্তাহে অন্তত ২ বার খেতে পারেন। তাছাড়া এইসব মাছে মার্কারির পরিমাণও বেশ কম থাকে।
পুঁদিনা, ধনিয়া পাতা ও সুগন্ধি শাক সবজি
পুঁদিনা, ধনিয়া পাতা ও বিভিন্ন অতি সুগন্ধি শাককে বলা হয় এন্টিগেলাকটোগোসিস। অনেকক্ষেত্রে এগুলো বেশি পরিমাণে খেলে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের বুকের দুধের উৎপাদন কমে যায়। তবে এই জটিলতা সব মায়েদের ক্ষেত্রে তৈরি হয় না। অনেকে পুঁদিনা পাতার চা খায়। অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো খাওয়ার পর যদি খেয়াল করেন যে, আসলেই আপনার বুকের দুধের পরিমাণ কমে আসতেছে তবে এই ধরণের খাবার ডায়েট চার্ট থেকে একদম পাকাপাকিভাবে বাদ দেয়াই উত্তম।
ঝাল খাবার
বুকের দুধ খাওয়ানো মা ঝাল খাবার খেলে সাধারণত শিশুদের কিছুটা সমস্যা হয়। তবে সেটা সব শিশুর ক্ষেত্রে না। আপনি যদি শুরু থেকেই ঝাল খাবারে অভ্যস্ত থাকেন এবং গর্ভাবস্থায় ঝাল খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শিশু ঝাল খাবারের স্বাদে কিছুটা অভ্যস্ত হবে। তবে বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় স্বাভাবিকের বেশি ঝাল খাবার না খাওয়াই উত্তম। আবার যদি দেখেন যে আপনার ঝাল খাবার খাওয়ার ফলে শিশু পেট ব্যথা, অস্বস্তি ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছে তাহলে আপনার ডায়েট থেকে ঝাল খাবার সরিয়ে ফেলতে হবে।
ডিম, বাদাম, চিনাবাদাম
শিশুর অ্যালার্জির জন্য যদিও এই তিনটি খাবারকে কিছুটা দায়ী ভাবা হয়। তবে, কোন মায়ের যদি বংশগত অ্যালার্জি থাকে তাহলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে শিশুর অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি মায়ের অ্যালার্জি না থাকে কিন্তু মায়ের এইসব খাবার খাওয়ার পর শিশুর অ্যালার্জি বা অ্যাকজিমা র্যাশ দেখা দেয় তাহলে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উত্তম।
চিনি জাতীয় পানীয়
বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তৃষ্ণা লাগে। এক্ষেত্রে পেডিয়াট্রিকরা শুধু সাধারণ পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় মাকে চিনি জাতীয় পানীয় খাবার না খাওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন পেডিয়াট্রিকরা।
গ্যাসের ঝুঁকি বাড়ায় এমন খাবার
ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি; বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় শিশুর গ্যাসের সমস্যার জন্যও এইসব খাবারকে দায়ী করা হয়। ক্ষণস্থায়ী গ্যাস, স্বাভাবিক বমি ইত্যাদি উপস্বর্গগুলোকে সাধারণ শিশুর স্বাভাবিক শরীরিবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হিসেবেই ধরা হয়। তবে পেটেব্যথা সহ এই সমস্যাগুলো অস্বাভাবিক আকারে দেখা দিলে এই ধরণের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। লেবু জাতীয় খাবারও শিশুর গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় মায়েদের দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলেও শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। বিশেষ করে গরুর দুধের সাথে অনেক শিশুই মানিয়ে নিতে পারে না। সেজন্য দেখবেন, ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানর শুরুর দিকে অনেক শিশু অ্যালার্জিতে ভোগে।
বুকের দুধ খাওয়ানো মা উপরোক্ত খাবারগুলো খেলে শিশুর কী কী ধরণের সমস্যা হতে পারে।
উপরোক্ত খাবারগুলোর সাথে যদি শিশু শরীর মানিয়ে নিতে না পারে তাহলে ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
- গ্যাস
- পেটব্যথা
- অতিরিক্ত কাঁদা
- রক্তাক্ত ও অস্বাভাবিক বর্ণের মল
- র্যাশ
- অ্যাকজিমা, অ্যালার্জি
- অতিরিক্ত থু থু হওয়া ও বমি বমি ভাব
- সর্দি, শ্বাসকষ্ট, কাশি
- ঘুমের সমস্যা
এইসকল লক্ষণকে সাধারণত শিশুর ফুড অ্যালার্জি হিসেবেই দেখা হয়। তবে পারিবারিকভাবে যদি মায়ের অ্যালার্জি থেকে থাকে তাহলে এই সকল খাওয়ার না খেলেও শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। যদি হুট করে শিশুর এই সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে অন্তত ২-৩ সপ্তাহ ডায়েট চার্ট থেকে খাবারগুলো বাদ দিয়ে দেখতে পারেন। বাদ দেয়ার পর যদি সেরে যায় তাহলে এই ধরণের খাবার আর ডায়েটে রাখবেন না। যদি বন্ধ করার পরও না সারে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
3,994 total views, 2 views today