উন্নত দেশগুলোতে বাচ্চা-কাচ্চা হওয়ার আগে হবু বাবা-মায়েরা নানাভাবে নিজেদের প্রশিক্ষিত করেন। বই থেকে, ইন্টারনেট থেকে, এমনকি এখন কোর্সও আছে বাচ্চা লালনপালন বিষয়ে। আমাদের দেশে সেই ব্যাপারগুলো পরিচিত নয় তেমন একটা। আমাদের সমাজে বাচ্চাদের শিখনোর দায়িত্ব পরিবার আর সমাজের মুরুব্বীরাই নিয়ে থাকেন। এর যেমন ভাল দিক আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে। যিনি বাচ্চাকে শেখাচ্ছেন বা বাচ্চারা যারটা দেখে শিখছে তিনি যদি নেতিবাচক মন-মানসিকতার হন তাহলেও শিশুরাও তাই হবে। আমরা শিশুদের সাথে যেভাবে কথা বলি তার উপর শিশুদের ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠা ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। কারণ শিশুরা চায় এপ্রুভাল, আপনি তার কোন কাজ দেখে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন তার প্রভাব অনেক সময় সারাজীবন থাকে।

যাদের সাইকোলজির ব্যাপারে টুকটাক জানাশোনা আছে,তারা অনেকেই জানেন যে আধুনিক কালের গবেষকরা মানসিক গঠনকে দুইভাগে ভাগ করেন-খোলা মানসিকতা (গ্রোথ মাইন্ডসেট) ও বদ্ধ মানসিকতা( ফিক্সড মাইণ্ডসেট)। যে কোন মানুষের জীবনে ধারাবাহিক উন্নতির জন্য লাগে খোলা মানসিকতা।  এই রকম মানুষ বিশ্বাস করে যা আছে তাই চুড়ান্ত নয়, যে কোন কিছুতে উন্নতি সম্ভব। যে কোন ব্যাপারে আরো দক্ষ হওয়া সম্ভব। আর বদ্ধ মানসিকতার মানুষ মনে করে পরিস্থিতির উপর কারো হাত নেই। মানুষের যোগ্যতা যা আছে তা ভাগ্যের জোরে বা জন্মসুত্রে প্রাপ্ত এটা বাড়ানোর চেষ্টা করে লাভ নেই।

সুখের ব্যাপার হচ্ছে বাবা-মায়ের পক্ষে এই গ্রোথ মাইন্ডসেট শিশুদের মধ্যে তৈরি করে দেয়া সম্ভব এবং সেটা সম্ভব শুধুমাত্র কথাবার্তার মাধ্যমেই।

উদাহরণ হিসেবে আমরা একই পরিস্থিতির দুই রকমের মুল্যায়নের নমুনা দেখতে পারি। যখন আপনি আপনার শিশুর সাথে কথা বলেন বা তার কাজের মূল্যায়ন করেন তখন কি ধরনের কথা কিরকম মানসিকতার পরিচয় বহন করে তার উদাহরণ-

পরিস্থিতি ১: ধরুন আপনার শিশু আপনাকে কিছু পড়ে শোনাচ্ছে-

বদ্ধ মানসিকতাঃ “বাহ,তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান”

খোলা মানসিকতাঃ “তুমি অনেক চেষ্টা করেছ বোঝা যাচ্ছে, এই কারণে এত সুন্দর করে পড়তে পারছ।”

আরো পড়তে পারেন – শিশুর যত্নে টডলার পার্সোনালিটি

পরিস্থিতি ২: যখন আপনার শিশু কোন পাজল বা ধাঁধা মিলিয়ে ফেলবে-

বদ্ধ মানসিকতাঃ “বাহ,তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান”

খোলা মানসিকতাঃ এটা তো সহজ পাজল, তোমাকে আরো কঠিন পাজল দিচ্ছি,আশা করি চেষ্টা করলে পারবে”

 

পরিস্থিতি ৩: যখন আপনার শিশু পরীক্ষায় ভাল করবে

বদ্ধ মানসিকতাঃ “খুব ভাল রেজাল্ট করেছ”

খোলা মানসিকতাঃ “আরো একটু ভাল রেজাল্ট তুমি চাইলেই করতে পারবে।”

বুঝলেন তো আমরা যেমন অনেক সময় বাইরের মেহমানের সামনে বাচ্চা খুব চালাক, স্মার্ট ইত্যাদির গদগদ প্রশংসা করি সেটা অনেক সময় বাচ্চাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে। উপরের উদাহরনে আমরা দেখতে পাচ্ছি খোলা মানসিকতার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের মেধার চেয়ে তার চেষ্টা বা অধ্যবসায়ে জোর দেয়া হচ্ছে।

এই দুই ধরনের যোগাযোগের দুই রকম প্রভাব পরে বাচ্চাদের মনে। আপনি যখন বাচ্চার মেধার পাশাপাশি তার চেষ্টা করার ক্ষমতাকে ফোকাস করেন তখন সেটা তাদের মনে করিয়ে দেয় যে তারা যা অর্জন করেছে বা ভবিষ্যতে করবে সেটা শুধুমাত্র মেধার জোরে হবে না, চেষ্টা লাগবে, ধৈর্য্য লাগবে। যখন তারা কোন কিছুতে ব্যর্থ হবে তখন নিজেকে ছোট মনে করবে না, কারণ সে তো জানে যে আরেকটু ভালভাবে চেষ্টা করলেই সে সফল হবে।

পাশ্চাত্যে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে যারা বদ্ধ মানসিকতার তাদের আপাতদৃষ্টিতে বেশি চালাক মনে হলেও তারা সর্বদা নতুন কিছুর মুখোমুখি হতে ভয় পায়, ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়ে। তাদের প্রধান চিন্তা থাকে নিজেদের চালাক।বুদ্ধিমান ইমেজ রক্ষা করা। অন্য দিকে যারা খোলা মানসিকতার তারা সহজভাবেই ব্যর্থতা নিতে পারে, সব পরিস্থিতিতে তাদের টার্গেট থাকে নতুন কিছু শেখা।

স্কুলের পরীক্ষার রেজাল্ট এর ক্ষেত্রে দুই রকম শিশুদের  খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও ভবিষ্যত জীবনে খোলা মানসিকতার শিশুটি জীবনের কঠিন পরিস্থিতে সহজে মানিয়ে নিতে পারে, ফলে অন্যদের চেয়ে সফল ও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা তার বেড়ে যায়। তাই মা-বাবাদের উচিত ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থেই এইসব ব্যাপারে সচেতন হওয়া।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 3,015 total views,  2 views today

What People Are Saying

Facebook Comment