খুলনা শহরে এসে রাতুল ভর্তি হয়েছে পঞ্চম শ্রেণিতে। রাতুলরা আগে ঢাকায় থাকতো। ঢাকার একটা স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো রাতুল। রাতুলের বাবা সরকারি বড় কর্মকর্তা। চাকরিতে বদলি হওয়ার কারণে রাতুল পুরো পরিবারসহ খুলনা চলে এসেছে। কিন্তু খুলনায় নতুন বাসায় রাতুলের একেবারেই ঘুম হচ্ছে না। সে ভাবছিলো দু-একদিন গেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিন দিন রাতুলের ঘুমের সমস্যা আরো বেড়ে যাচ্ছে। এখন প্রায়ই রাতে তার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে, একবার ভেঙ্গে গেলে আর ঘুম আসে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে রাতুলের একটা অসুখ হয়েছে। এই অসুখের নাম নিদ্রাহীনতা। নিদ্রাহীনতা যে কারো যেকোন সময় হতে পারে। কিন্তু একটা গবেষণা বলছে প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু-কিশোরের স্বল্প মেয়াদে ঘুম না হওয়ার সমস্যা থাকে। আসুন আজকে আমরা জেনে নিবো নিদ্রাহীনতা কী? কেন হয়? প্রতিকার কী?
নিদ্রাহীনতা কী?
মাঝে মাঝে বিভিন্ন সমস্যার কারণে মানুষের ঘুম কম হতেই পারে। আবার কখনো কখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গেও যেতে পারে। কখনো কখনো অনেকক্ষণ ঘুমের উদ্দেশ্যে বিছানায় শুয়ে থাকলেও ঘুম নাও আসতে পারে। এই সমস্যাগুলো যদি দু-একদিনের জন্য হয় তাহলে এটাকে নিদ্রাহীনতা ধরা হয় না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই একই সমস্যাগুলো একটা লম্বা সময় ধরে কাউকে ভোগালে বুঝে নিতে হবে সে নিদ্রাহীনতায় ভুগছে। প্রাপ্তবয়স্কদের নিদ্রাহীনতাকে গবেষকরা ইনসোমনিয়া নামে একটা রোগে সংজ্ঞায়িত করেন। কিন্তু শিশু-কিশোরদের সমস্যাটা এতটা গুরুতর না। শিশু-কিশোরদেরও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। শিশু-কিশোরদের নিদ্রাহীনতা হলে কিছু পদক্ষেপে তা দ্রুত নিরাময় করা যায়। তবে কারো ঘুমের সমস্যা অস্বাভাবিক হলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
শিশু-কিশোরদের নিদ্রাহীনতা কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে নিদ্রাহীনতা হতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা নিদ্রাহীনতার কারণ হিসেবে মানসিক সমস্যাকে বেশি দায়ী করেন। কিন্তু শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নিদ্রাহীনতা কিছু স্বাভাবিক কারণে হতে পারে। এবং এই কারণগুলো প্রায় সব শিশু-কিশোরের ক্ষেত্রে একই রকম। আমরা এখন শিশু-কিশোরদের নিদ্রাহীনতা হওয়ার কারণ সম্পর্কে জেনে নিবো।
• অতিরিক্ত চাপ শিশুদের অনিদ্রা সমস্যা বয়ে আনতে পারে। স্কুলের পড়ার চাপ, বাসার টিচারের চাপ, বাসার পরিবেশ বিশৃঙ্খল হলে।
• স্কুল বুলিংয়ের শিকার শিশুদের অনিদ্রা হতে পারে।
• নতুন কোন জায়গায় গেলে কিংবা বাসা পরিবর্তন করলে।
• অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খেলে।
• কোন চিকিৎসার ঔষধ চলাকালীন সময়ে ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য অনিদ্রা হতে পারে।
শিশু-কিশোরদের ঠিকভাবে ঘুম না হলে যে সকল সমস্যা হতে পারে।
ঘুম মানুষের মস্তিষ্কের বিশ্রাম। সেজন্য ঠিকঠাক ঘুম না হলে মানুষের মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে ও মানুষের স্বাভাবিক জীবন এলোমেলো করে দেয়। শিশু-কিশোরদের ঠিকভাবে ঘুম না হলে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো হলো-
• মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। • স্কুলে ও বাসায় পড়ালেখাসহ অন্যান্য কাজে অমনোযোগী হয়ে উঠে।
• খুবই সাধারন কাজেও ভুল করে।
• খাওয়া-দাওয়ায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, খেতে চায় না।
• স্মৃতিশক্তি কমে যায়, প্রয়োজনীয় কাজের কথা ভুলে যায়।
জেনে নিন-সন্তান দুঃস্বপ্ন দেখলে কি করবেন?
বাবা-মার কিছু পদক্ষেপ ও জীবনধারণে কিছুটা পরিবর্তন খুব সহজেই শিশুর নিদ্রাহীনতা দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আগামী পর্বে আমরা শিশুর নিদ্রাহীনতা দূর করার কিছু টিপস সম্পর্কে জানবো। ততক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞানবাক্স ব্লগের সাথে থাকুন।
তথ্যসূত্র- momjunction, parenting
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,764 total views, 1 views today