এই শুক্রবারে একটু আগে আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়লো মাহিন। তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা লাগে নি! এই দেখে মাহিনের মা-বাবা দুজনই খুশি। তবে মাহিনের এই আগে আগে ঘুম থেকে উঠার পেছনে কারণ আছে। কারণটি হল বাবার সাথে ছুটির দিনে যাদুঘরে ঘুরতে যাওয়া। মাহিনের বাবা মাহিনকে নিয়ে প্রতি ছুটির দিনে জাদুঘরে যাওয়ার যেই পরিকলল্পনা করেছিল,ছুটি পেলেই মাহিন ও তার বাবা-মা সেটিকে বাস্তবায়ন করছেন। মাহিনের বাবা মাহিনকে নিয়ে কোন কোন জাদুঘরে যাবেন তাঁর একটা লিস্ট ও করেছিলেন। প্রথম পর্বে আমরা তেমনই ৫ টি জাদুঘরের কথা জেনেছিলাম। স্কুলপড়ুয়া মাহিনের জন্য যে সব জাদুঘরে যাওয়া উচিৎ, আজ আমরা সেরকম আরো পাচটি সম্পর্কে জানবো।
গত পর্বে আমরা যেই পাঁচটি জাদুঘরের কথা জেনেছিলাম, তার মধ্যে ছিল জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এবং সামরিক জাদুঘর। এই পর্বে আমরা যেই জাদুঘরগুলোর কথা জানবো, সেগুলোতে গেলে মনে হবে যেন ইতিহাসের পাখায় চড়ে চলে গিয়েছি আরো শত বছর আগে।
লালবাগ কেল্লা জাদুঘর
লাল বাগ কেল্লা জাদুঘরে রয়েছে সুবেদার শায়েস্তা খাঁর বাসভবন এবং দরবারহল। লালবাগ কেল্লার মূল ফটক থেকে সোজা হেঁটে সামনের দিকে গেলে দেখতে পাওয়া যায় শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরীবিবির কবর। এই দুটি জায়গা লাওল্বাগ কেল্লার জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। জাদুঘরটিতে রয়েছে শায়েস্তা খাঁর ব্যবহৃত দৈনন্দিন জিনিষপত্র। এছাড়াও তৎকালীন রাজা ও শাসকদের ব্যবহৃত মুদ্রাও এখানে সংরক্ষিত করা আছে। এসব মুদ্রা দেখতে বর্গাকার বা গোলাকার। ১৭-১৯ শতকের রাজা বাদশাহদের কিছু অস্ত্র এবং শিলালিপিও রয়েছে এই জাদুঘরে। রবিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলো লালবাগ কেল্লা খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত। (শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা)। টিকেট মূল্য ১০ টাকা।
সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর
সোনারগাঁও বাংলার প্রাচীন রাজধানী। বাংলা বা বাঙালি শিল্প সংস্কৃতি ইতহাস বানিজ্যের মিলনমেলা ছিল এই অঞ্চল। অর্থাৎ এই স্থানটিতে রয়েছে বাঙালি ইতহাস এবং ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন এখনো বর্তমান। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সরকারী সহায়তায় তৎকালীন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সোনারগাঁয়ে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং জাদুঘর। কারু শিল্প, জামদানী, নকশীকাঁথা, নৌকা, গ্রামীণ জীবনের প্রতিরূপ, পটচিত্র, তৈজসপত্র, যানবাহন এরকম অনেক নিদর্শন রয়েছে এই লোকশিল্প জাদুঘরে। সন্তানকে নিয়ে ঢাকার এক এক প্রান্তে অবস্থিত এই লোকশিল্প জাদুঘর ঘুরে আসতে পারেন। এতে করে আপনার সন্তান তাঁর জাতীয়তা এবং দেশজ শিল্প সম্পর্কে ধারণা পাবে।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহিজান মঞ্জিল মূলত ঢাকার নবাব পরিবারের আবাসস্থল এবং সরকারী অফিস ছিল। এখন এই ভবনটিকে জাদুঘর হিসেবে সাজানো হয়েছে। বর্তমানে আহসান মঞ্জিলের মূল প্রাসাদে ২৩ টি গ্যালারি রয়েছে। তৎকালীন নবাবদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রায় সমস্ত সামগ্রী (যেগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে) এসব গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। নবাবদের ব্যবহৃত বর্ম, তাদের ব্যবহৃত আলমারি, তৈজস, অলংকার, ফানুস; নবাবদের ডাইইং রুম,নবাবদের ছবি এবং আরো কিছু শতবর্ষ পুরোনো সন নিদর্শন। বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে গুরে দেখাযাবে ১০ টাকার টিকেটের বিনিময়ে।
ঢাকার নগর জাদুঘর
ঢাকার ইতিহাস,ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য প্রতিষ্ঠা হয় ঢাকা নগর জাদুঘর । ১৯৮৭ সালে গ্রিন রোডে সবার প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হলেও ১৯৯৬ সালে ঢাকার নগর ভবনের ষষ্ঠ তলায় জাদুঘরটি স্থানান্তরিত করা হয় এবং সরকার এই জাদুঘরের যাবতীয় সবকিছু পরিচালনা করে থাকে। ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের ছবি, পোষ্টার এবং নিদর্শন সহ জাদুঘরে ঢাকার উপরে কয়েকটি গবেষণাপত্র। এছাড়াও মোঘল আমলের কিছু দলিল, গ্রন্থ এবং ছবি রয়েছে জাদুঘরটিতে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আন্দোলন তথা ৫২, ৬৬, ৬৯, ৭১ এবং ৮৯ সালের বেশ কিছু ছবি এবং নথি রয়েছে এই জাদুঘরে।
ডাক জাদুঘর
যদিও ডাক যাদুঘরের শুরু ষাটের দশকে তবে ১৯৮৫ সালে প্রথম এই ডাক জাদুঘর প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সেই সময়ে ডাক বিভাগের পরিচালক ফরিদ আহমেদ এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। জিপিও এর ভেতর ডাক ভবনের তৃতীয় তলায় এই জাদুঘরটি অবস্থিত। যাদুঘরটির দুইটি কক্ষ আছে। প্রথমে একটি ছোট কক্ষে রয়েছে আন্তর্জাতিক পোস্টাল ইউনিয়নভুক্ত ১৯১ টি দেশ থেকে সংগ্রহীত ডাকটিকেট। আর বড় কক্ষে রয়েছে ডাক বিভাগের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত সব ডাকটিকেট এবং সংশ্লিষ্ট অনুষঙ্গ। নানা আকৃতির ডাকবাক্সও রয়েছে এই জাদুঘরে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ব্যক্তি কর্তৃক উদ্বোধন করা ডাকটিকেটের সংগ্রহশালা। প্রতিটি ডাকটিকেটে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে ডাক জাদুঘর এবং এতে প্রবেশের জন্য কোন টিকেট দরকার হয় না।
প্রতিটি জাদুঘরই সন্তানের জন্য শিক্ষামূলক একটি যায়গা। সন্তানের দ্রুত বিকাশ এবং জ্ঞান লাভের জন্য জাদুঘর অন্যতম কার্যকরী একটি জায়গা। এছাড়াও জাদুঘর একটি দেশের ঐতিহ্যগত সকল সাক্ষ্য বহন করে। সন্তানকে নিজের দেশের ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতির সঠিক ধারণা দিতে জাদুঘরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর এই লক্ষ্যেই মাহিনের বাবা মাহিনকে নিয়ে প্রতি ছুটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জাদুঘরে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,978 total views, 1 views today