৭ বছর বয়সি রাতুলের মা ঠিক করে দেন রাতুল কোন দিন কোন কাপড় পরবে। সপ্তম শ্রেণীর বিথীর আব্বু বিথীর হোমওয়ার্ক করার সময় পাশে বসে থাকেন, মাঝে মাঝে নিজেই করে দেন বিথীর স্কুলের প্রজেক্ট। রাহাত মাঠে খেলতে গেলে সাথে আম্মুও চলে যান, আম্মুর এই কাজটি রাহাতকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়, রাহাত মনোযোগ দিয়ে খেলতে পারে না। আদনান স্কুলে গিয়ে প্রথম প্রথম কাঁদলেও ৫ মাস যাবত কাঁদে না, তবুও আম্মু প্রতিদিনি স্কুলের বাইরে আদনানের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। পরিচিত লাগছে ঘটনাগুলো? আমরা আমাদের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা কিংবা সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা থেকে এই কাজগুলো করে থাকি। মানে সন্তানকে নিজে নিজে কিছু করতে দেই না। সবসময় নিরাপত্তা প্রহরীর মতো সন্তানকে চোখে চোখে রাখি। এই ধরণের প্যারেন্টিং-ই মূলত ওভার প্যারেন্টিং যাকে হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংও বলে।
সন্তানের প্রতি সতর্কতা দোষের কিছু না। সব বাবা-মাই সন্তানের নিরাপত্তার জন্য সন্তানের দিকে একটু বেশিই খেয়াল রাখেন। কিন্তু কখনো কখনো একদম অপ্রয়োজনীয় বাড়তি সতর্কতা সন্তানকে পরিণত হতে দেয় না, নিজের দায়িত্ব নিতে শেখায় না, নিজে নিজে কিছু করার সাহস সন্তানের মাঝে তৈরি হয় না। অভিভাবকেরা কেন হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং করেন, এর অসুবিধা বা প্রতিক্রিয়া ও কীভাবে হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং বন্ধ করা যায়; বিজ্ঞানবাক্স ব্লগে আমরা তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবো। গত পর্বে আমরা জেনেছি হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং এর অসুবিধাগুলো বা সন্তানের উপর হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং-এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। আজকের পর্বে আমরা জানবো কীভাবে ওভার প্যারেন্টিং বা হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং দূর করে সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা যায়।
সন্তানের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা রাখুন
শুরুর দিকে হয়তো আপনি সন্তানের জুতার ফিতা বেঁধে দিতেন, সে পারতো না বলে! কিন্তু একটা সময়তো সে শিখে ফেলবে! তারপর ধরুন স্কুলের শুরুর দিকে আপনাকে বাইরে না দেখলে সে কান্নাকাটি করতো। ৬ মাস বা ১ বছর পরে তার এই ভয়টা কেটে গিয়ে কিন্তু সে স্বাভাবিকভাবে স্কুলে থাকবে, উপভোগও করবে। এভাবে তার প্রতিটা লাইফ স্কিল সম্পর্কে ধারণা রাখুন। যেটা সে নিজে নিজে করতে পারবে বা শিখে যাবে সেই কাজটিতে আর আপনার হস্তক্ষেপের দরকার নেই। সেটা তাকে স্বাধীনভাবে করতে দিন।
খেলার মাঠে দূর থেকে দেখুন
সন্তানের জন্য জন্য চিন্তাতো হবেই। কিন্তু চিন্তার পাশাপাশি তাকে স্বাধীনভাবে বড় হতেও দিতে হবে। খেলার মাঠে সরাসরি তাকে ফলো করার দরকার নাই। মাঝে মাঝে দূর থেকে দেখুন। সে কেমন আচরণ করে? সবার সাথে মিশতে পারে কি না? শারিরিক ক্ষমতার উন্নতি কতটুকু হয়েছে। এরপর যখন আপনার মধ্যে একটা বিশ্বাস আসবে যে, সন্তান সবার সাথে মিশে খেলতে পারছে আর তেমন কোন ভয় নাই। তখন ধীরে ধীরে অনুসরণ করা বাদ দিয়ে তার মতো করে খেলতে দিন।
সন্তানকে ব্যর্থ হতে দিন
ওভার প্যারেন্টিং এর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে সন্তানের অক্ষমতাকে সরাসরি নিজের হাতে সমাধান করে দেয়া। সরাসরি সমাধান না করে সন্তানকে চেষ্টা করতে দিতে হবে। সন্তানকে সংগ্রাম করতে দিন, ব্যার্থ হতে দিন, আবার উঠে দাঁড়াতে দিন। হাঁটা থেকে শুরু করে দৌঁড়ানো, হোমওয়ার্ক কিংবা জীবনের বড় কোন শিক্ষায় শুরুতেই তাকে সাহায্য করতে হবে না। তার সক্ষমতা কতটুকু আগে তা দেখে নিন। এরপর যদি তাকে সাহায্য করা প্রয়োজন মনে করেন তখনই সাহায্য করুন। এতে সন্তানের নিজের সমস্যা নিজে নিজে সমাধান করার দক্ষতা অনেক বাড়বে।
সারাদিনের কাজের পরিকল্পনা করে নিন
সকালে বেশ ব্যস্ততা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে কোথাও বের হচ্ছেন। কিন্তু তখনই বাবুর স্কুলে যাওয়ার সময়, তাড়াহুড়ো করেই ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছেন, টাই বেঁধে দিচ্ছেন কিংবা টিফিন বক্স ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন! একটু পরিকল্পনা করলে এই তাড়াহুড়ো কিন্তু করা লাগবে না। বাবু ধীরে ধীরে এইসব কাজ নিজে নিজে করার সক্ষমতা অর্জন করলে তাকেই বলুন তার কালকের ছোট খাটো কাজগুলো নিজে নিজে করে নিতে। সন্তান নিজে নিজে করতে পারলো, আত্মবিশ্বাস বাড়লো, নিজের দায়িত্ব নেয়াও শিখলো।
ওভার প্যারেন্টিং নয়, নিজেকে মেন্টর হিসেবে ভাবুন
ওভার প্যারেন্টিং বন্ধ করা মানে সন্তানকে একদম দূরে ঠেলে দেয়া বা তাকে একদম একা করে দেয়া নয়। সন্তানকে ধীরে ধীরে বড় করা ও তার ভেতরে আত্মবিশ্বাস জন্মানোর ক্ষেত্রেও ওভার প্যারেন্টিং বন্ধ করা জরুরী। নিজেকে মেন্টর হিসেবে ভাবুন, সন্তান যে কাজগুলো পারে, যে দায়িত্বগুলো নিতে পারে সেগুলো তাকেই করতে দিন। যেগুলো পারে না, সেগুলো শিখতে, নিজেকে মেলে ধরতে সাহায্য করুন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,687 total views, 1 views today