লাবিব ক্লাস ফাইভে পড়ে। তার বয়স ১১ বছর। স্কুলে সে একদমই মনোযোগী না। পড়ালেখা ছাড়া যত ধরণের দুষ্টামি আছে সব কিছুতে তার ব্যাপক উৎসাহ। ক্লাস চলাকালীন সময়েও সে অন্যদের সাথে দুষ্টামি করে। ক্লাসে ঠিকমতো বসতেই চায় না। খেলতে গেলে নিজের মতো করে নিয়ম তৈরি করে এবং তার নিয়ম মানতে অন্যদের চাপ প্রয়োগ করে। তার এমন আচরণের কারণে বন্ধুরা তার সাথে মিশতে চায় না। বাড়িতেও সে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অগ্রহণযোগ্য আচরণ করে প্রায়ই। মাঝে মাঝে বাড়ির জিনিসপত্র ভাংচুরও করে। লাবিব মনে করে সে যা করছে তা ঠিক। কিন্তু সে যে ভুল কাজ করছে এটা সে বুঝতে পারে না। লাবিবের মতো অনেক বাচ্চাদের মাঝে এমন আচরণ লক্ষ করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সন্তানের মাঝে এমন লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে সে এডিএইচডি (ADHD) বা এটেনশন ডেসিফিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি-তে ভুগছে।
এডিএইচডি (ADHD) কেন হয়?
চিকিৎসকরা এখনো এডিএইচডি’র নির্দিষ্ট কোন কারণ সনাক্ত করতে পারেন নি। তবে ধারণা করা হয় নিউরোট্রান্সমিটারের সক্রিয়তা কম থাকার কারণে মস্তিষ্ক সঠিক সংবাদ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে বাচ্চারা বুঝতে পারে না কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল। যার ফলে তার ব্যবহার ও আচরণ দৃষ্টিকটু হয়। এছাড়াও আরও কিছু কারণ চিকিৎসকরা সনাক্ত করেছেন।
জেনেটিক কারণ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে ৮০ শতাংশ শিশুদের এই সমস্যার পেছনে জেনেটিক কারণ দায়ী। পরিবারের নিকটের কারও আগে থেকে মানসিক কোন সমস্যা থাকলে শিশুর এমন সমস্যা হতে পারে।
দূষণ জনিত কারণ
গর্ভাবস্থায় মা ধূমপান করলে কিংবা মাদক সেবন করলে অনাগত সন্তানের এডিএইচডি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মানসিক কারণ
যে সব শিশুরা বাবা-মার পর্যাপ্ত মনোযোগ পায় না, যারা পারিবারিক কলহের মধ্যে বেড়ে উঠে, যত্ন কিংবা অবহেলার শিকার হয় সেওব শিশুদের মাঝে এডিএইচডি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এডিএইচডির লক্ষণ
• শিশুর মাঝে সবসময় চঞ্চলতা লক্ষ করা যায়। কোথাও স্থির হয়ে বসতে চায় না।
• ক্লাসে শিক্ষক থাকার পরও অন্যদের সাথে দুষ্টামি করে ও বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
• পড়াশোনায় ইচ্ছা করে অমোযোগী থাকে। শিক্ষকের কথায় মনোযোগ না দেয়ার কারণে পড়োশোনা বুঝতে পারে না।
• খাতা, বই, পেন্সিলসহ সহ নিজের প্রয়োজনীয় বস্তু সবসময় অগোছানো রাখে। কোন জিনিসের প্রতি যত্ন নেয় না।
• রুটিন অনুযায়ী কাজ করতে পছন্দ করে না। রুটিনের বাইরে যাওয়াতেই তার যত আগ্রহ।
• খুবই ছোটখাটো বিষয়ে ও কখনো কখনো কোন কারণ ছাড়াই চিৎকার চেঁচামেচি করে।
• খেলাধুলায় নিজের মন মতো করে নিয়ম তৈরি করে। সে নিয়ম মানতে অন্যদের বাধ্য করে। কেউ মানতে না চাইলে মারামারি করে।
• বেশি কথা বলে, কাউকে কথা বলার সুযোগ দেয় না।
• সহজেই প্রবলভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে অতিমাত্রায় কান্নাকাটি ও রাগারাগি করে।
সাধারণ মানসিক সমস্যাগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন শারীরীক পরিক্ষা নিরীক্ষা করা হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ধরণ ও রোগের পর্যায় দেখে চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এডিএইচডির চিকিৎসা
এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসকরা থেরাপি, কাউন্সেলিং, বিহেভিয়ার ও রেমিডিয়াল ট্রেনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। রোগীর ধরণ বুঝে অনেক বিশেষজ্ঞ ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকেন। তবে সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT)। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে মূলত আক্রান্ত শিশুর চারপাশের পরিবেশকে তার অনুকূলে নিয়ে শিশুকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে বাবা-মা ও শিক্ষকদের বিশেষ ভূমিকা থাকে। চিকিৎসকরা বাবা-মা ও শিক্ষকদেরকে কিছু পদ্ধতি শিখিয়ে থাকেন যার মাধ্যমে শিশুদের সাথে পজিটিভ আচরণ করে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে।
এডিএইচডি (ADHD) অনেক শিশুর মাঝেই দেখা যায়। মূলত চিকিৎসার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে কিছু যত্ন শিশুকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। আমরা আগামী পর্বে এডিএইচডি (ADHD) থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করার জন্য পরিবারের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
2,041 total views, 1 views today