Show Categories

প্রাকৃতিক দুর্যোগ- বন্যা, বিজ্ঞানের ভাষায় বন্যা নিয়ে কিছু কথা

 

আচ্ছা, বর্ষার সময় যখন প্রতিদিনই এত এত বৃষ্টি হয়, তখন তোমরা আর কী কী করো? বৃষ্টিতে ফুটবল নিয়ে খেলতে নেমে যাও? নাকি ছাদে আব্বু আম্মুর সাথে ভিজতে বায়না ধরো?

যাই করো না কেন, বৃষ্টি কিন্তু খুবই মজার একটি বিষয়। তবে এই বৃষ্টিই যদি খুব বেশি পরিমাণে হতে থাকে তাহলে কিন্তু এটি আর মজার থাকে না। এটি হয়ে যায় ভয়ের ও অনেক কষ্টের। হ্যাঁ, তুমি এ বিষয়টি ঠিকই ধরেছ। ঢাকায় একটু ভারি বর্ষণ হলে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যায়। তাহলে এখন ভেবে দেখ যে, কয়েকদিন যদি একটানা ভারি বর্ষণ হয়, তাহলে কি ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে?

আর ভারি বর্ষণের ফলে এই ভয়াবহ অবস্থাটিকেই বলে বন্যা। তবে মনে রাখবে, বন্যাও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠিক যেমনটি গত ব্লগে জেনেছো খরা নিয়ে। এবং এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি শুধু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জন্যই যে হয় তা কিন্তু নয়, আরও কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য বন্যা হতে পারে।

তাহলে চলো আমরা বন্যার ভেতরের বিজ্ঞানটি সহজ ভাবে জেনে নেই।

বন্যা কী? 

বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে, বন্যা হচ্ছে অনেক পরিমাণ পানি যখন আমাদের চারপাশ ডুবিয়ে দিয়ে যায় সে অবস্থাটা,  ঠিক যেমনটি বৃষ্টি হলে আশপাশের রাস্তা ডুবে যেতে দেখা যায়। আসল বিষয়টি কিন্তু এর চেয়ে অনেক ভয়াবহ। কারণ, আগেই তো বলেছিলাম যে, এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

বন্যা হচ্ছে এমন একটি অবস্থা, যেখানে আমাদের চারপাশের সবকিছু হঠাৎই অনেক অনেক পানি দিয়ে ভরে যায়। তবে তোমার শহরের রাস্তার হাঁটু-পানি দেখে আবার বন্যাকে হালকা ভাবে নিও না যেন। কারণ বন্যার পানি তুলনামুলকভাবে অনেক গভীর হয়। এমনকি মাঝে মাঝে এত গভীর হয় যে বাড়িঘর পর্যন্ত ডুবে যায়।

বন্যা কতটুকু বিপদজনক?

প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বন্যা আসলে অনেক বিপদজনক। বন্যার স্রোত অনেক সময় ভারি ভারি গাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায় আবার বড় বড় গাছপালাও ভেঙে পরে।

ঠিক কী কী কারণে বন্যা হতে পারে?

যে সকল কারণে বন্যা হয়ে থাকে, সেগুলো হলো,

– একটানা ভারী বর্ষণ।

– নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্থলভাগে উপচিয়ে পরলে।

– সুনামি হলে।

– হারিকেনের সৃষ্টি হলে।

– বরফ অঞ্চলের বরফ গলার কারণে।

– নদ-নদীর পানি আটকে রাখার জন্য যে বাধ দেয়া হয়, তা ভেঙ্গে গেলে।

ইত্যাদি।

বন্যা কত প্রকারের হতে পারে?

প্রধানত, বন্যা তিন প্রকারের হয়ে থাকে।

. মৌসুমি বন্যা বা Monsoon Flood

২. জোয়ার-সৃষ্ট বন্যা বা Tidal Flood

৩. আকস্মিক বন্যা বা Flash Flood

১. মৌসুমি বন্যা (Moonsoon Flood)

একে অনেকে On-set-flood বা স্থির বন্যাও বলে থাকে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার এই প্রকারটি অনেকটা ধীরে ধীরেই ঘটে। সাধারণত এক দিন থেকে এক সপ্তাহ সময় দরকার হয় এই বন্যা সৃষ্টি হওয়ার জন্য। সুতরাং যে এলাকা বা লোকালয়ে এই রকম বন্যার সৃষ্টি হয় সে এলাকার মানুষও তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোন রকম ক্ষয় ক্ষতি ছাড়াই বন্যা কবলিত এলাকা ছাড়তে পারে।

২. জোয়ার-সৃষ্ট বন্যা বা Tidal Flood

জোয়ার-সৃষ্ট বন্যার ধরন অনেকটা মৌসুমি বন্যার মতই। শুধুমাত্র, মৌসুমি বন্যা থেকে অপেক্ষাকৃত দ্রুত আসে। আর এ জন্যেই একে অনেকে Rapid-on-set-flood ও বলে থাকে।

তোমরা নদী বা সমুদ্রে জোয়ার ভাটার কথা নিশ্চয় শুনেছ? হ্যাঁ ঠিক, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে নদী বা সাগরের পানি বৃদ্ধি পায় আবার কমে যায়, -এক কথায় একে জোয়ার-ভাটা বলে। তো, বর্ষা মৌসুমে অনেক সময় জোয়ারের পানি এত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে তাতে নদ-নদীর আশেপাশের গ্রাম-এলাকা পর্যন্ত বন্যার পানি চলে আসে। আর তখনই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি ঘটে।

এই বন্যাটি সৃষ্টি হতে সাধারণত এক-দুই দিন সময় প্রয়োজন হয়। আর তাই, সতর্ক থাকলে এই বন্যাও আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না।

৩. আকস্মিক বন্যা বা Flash Flood

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার এই প্রকারটি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। কারণ, এই বন্যাটি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সৃষ্টি হয়। যেমন, ২-৬ ঘণ্টার মধ্যে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ টি হয়ে থাকে এমনকি মাঝে মাঝে ১ মিনিটের মধ্যেও হতে পারে। আর এজন্যেই একে বলা হয় আকস্মিক বন্যা। সুতরাং বুঝতেই পারছ, এই বন্যা যেসকল গ্রাম বা এলাকায় হয়, সেসকল এলাকার মানুষ কোনরকম আগাম সতর্কতা পায় না। মুহূর্তের মধ্যে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি এসে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যায়।

কিন্তু বন্ধুরা, এখনই এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, আমরা আগে থেকেই এমন কিছু করতে পারি যেগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা থেকে আমাদের রক্ষা করবে। আচ্ছা, বলতো সেগুলি কি কি হতে পারে? বাহ, তোমরা ত খুব ভালই জানো দেখছি! হ্যাঁ, প্রথমে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। কারণ, গাছের শিকড় মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে আর তা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখে। ফলে যখন বন্যা হয় তখন বন্যার ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হয়। ফলে মানুষের ঘরবাড়ি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বোনাস:

–  তোমরা জানো কি, যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা মরুভূমিতেও হতে পারে! প্রাচীন মিশরে নীল-নদের জোয়ারের পানি থেকে বন্যা হতো। পরে বন্যা শেষ হয়ে গেলে সে স্থানের লোকেরা সেই উর্বর স্থানে জমি চাষ করতো।

আরো পড়তে পারো- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ খরা, এসো জানি খরার বিজ্ঞান

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 

 

 1,118 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment