গ্রামীণ খেলার প্রথম পর্ব পড়ে আপনি নিশ্চয়ই এক মুহূর্তের জন্য হলেও আপনার ছোট বেলায় ফেরত গিয়েছিলেন। বিজ্ঞানবাক্স টিম তাই আপনার ভালো লাগার জায়গাটা বুঝে ২য় পর্ব লিখতে একদম দেরি করে নি। আজ আমরা আরো কিছু গ্রামীণ খেলা সম্পর্কে জানবো।
(১) ওপেন টি বাইস্কোপ–
গ্রামীণ খেলার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এই খেলা। মূলত এটি একটি সহায়ক খেলা। মূল খেলার দল বাছাইয়ের জন্য এটি খেলা হয়। তবে অনেক সময় এই খেলাকেই মূল খেলা হিসাবে খেলা হয়। খেলায় দুজন দলপতি থাকবে। তারা দুজনে সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে তাদের দুহাত একসাথে উঁচিয়ে ধরে একটা তোরণের মত তৈরি করবে। বাকি খেলোয়াড়েরা এক জনের কাধেঁ একজন হাত দিয়ে লম্বা একটা ট্রেনের মত লাইন তৈরি করবে। এবার ঐ ট্রেনটা তোরণের নিচ দিয়ে যাবে, যাওয়ার সময় তোরণটা মাঝে মাঝে ট্রেনটাকে আটকিয়ে দিবে।ঐ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে সে কোন দলে যেতে চায়। এভাবে নতুন কোন এক খেলার জন্য দল ভাগ করার জন্য ওপেন টু বাইস্কোপের জুড়ি মেলেনা। এই খেলায় বেশ মজার একটা ছড়া আছে।
ওপেন টি বাইস্কোপ
নাইন টেন তেইশ কোপ
সুলতানা বিবিয়ানা
সাহেব বাবুর বৈঠকখানসাহেব বলেছে যেতে
পান সুপারি খেতে
পানের আগায় মরিচ বাটা
স্প্রিংএর চাবি আঁটা
যার নাম মনিমালা
তাকে দেবো মুক্তার মালা।
(২)গোল্লাছুট
এ খেলা দুই দলে ভাগ হয়ে বাড়ির বড়সড় উঠানে বা, খোলা মাঠে খেলতে হয়। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ইরি ধান কাটার পর স্কুল থেকে ফিরে খালি মাঠে খেলা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। মাঠের একপাশে একটি লাঠি পুঁতে আন্যপাশে আর একটি নিশানা বা সীমানা ঠিক করা হয়। যে দল প্রথমে সুযোগ পাবে তারা একজনের সাথে অন্যজন হাত ধরে লম্বা একটা শেকল তৈরি করবে। গোড়ার দিকে যে থাকবে সে লাঠিটাকে আকড়ে ধরে ঘুরতে থাকবে। এরমধ্যে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা যে যার সুবিধামত জায়গায় অবস্থান নিবে, যেন অন্য দলের কেউ হাত ছাড়লেই তাকে মেরে দিতে পারে। মেরে দেওয়া মানে ছুঁয়ে দেয়া, অর্থাৎ সে এই দানে (পর্বে) খেলতে পারবে না। আর এই দলের খেলোয়াড়দের চেষ্টা থাকে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্যপাশের সীমানা অতিক্রম করা। সীমানা অতিক্রম করতে পারলে তাকে পাক্কি বলা হয়। কেউ সীমানা অতিক্রম করতে না পারলে বিপক্ষ দল খেলা পাবে।
(৩)টোপাভাতি
এটিকে একটি কাল্পনিক খেলা বলা যায়। এই খেলায় সবাই মিলে একটি পরিবার তৈরি করে কল্পনায়। পরিবারে একজন কর্তা, একজন কর্ত্রী এবং অন্যান্য সদস্য থাকবে। সবাই মিলে একটা ছোট ঘর তৈরি করবে। বাজারে কেউ একজন কাল্পনিক দোকানে হরেক পণ্য সাজিয়ে বসে থাকবে। কর্তা বা অন্য কেউ একজন কাল্পনিক বাজারে যেয়ে বাজার করে এনে দিবে। বাজারে খরচের জন্য টাকা হিসাবে কাঁঠালের পাতা ব্যবহার করা হত। শাকসবজি হিসাবে গাছের পাতা, মাছ/মাংস হিসাবে কলাপাতার ডাটি, হলুদ হিসাবে ইটের গুড়া, মরিচ হিসাবে বুনো বিভিন্ন গাছের ফল, চাল হিসাবে বালি/ধূলো ইত্যাদি। রান্নার জন্য খেলনা হাড়ি-পাতিল ব্যবহার করা হত। কর্ত্রী রান্না শেষে সবাই কে খেতে দিবে। খাবার প্লেট হিসাবে বড় কোন পাতা যেমন-কলা পাতা, কচু পাতা ব্যবহৃত হত। এই খেলা থেকে বাচ্চারা ছোট থেকে পরিবারের ধারণা পেতো। টোপা মানে হচ্ছে হাঁড়ি বা, রান্নার পাত্র আর ভাতি মানে হচ্ছে ভাত রান্না। এভাবেই এই খেলার নাম হয়েছে টোপাভাতি।
(৪) ফুলটোকা
এটি বেশ মজার খেলা। খেলায় দুইটি দলে দুইজন দলপতি থাকবে। দুই দলে সমান সংখ্যক খেলোয়াড় থাকবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের একটা করে বিশেষ নাম থাকবে যা শুধুমাত্র ঐ দলের দলপতি এবং ঐ খেলোয়াড় ছাড়া আর কেউ জানবে না। দুই দলের সবাই মাঠের দুপাশে লাইন দিয়ে বসবে। এবার একদলের দলপতি অন্য দলে গিয়ে হাত দিয়ে যেকোন একজনের চোখ আটকে ধরে বিশেষ নামে তার দলের কোন একজনকে ডাকবে। সে এসে কোন শব্দ না করে চোখ বাঁধা খেলোয়াড়ের কপালে আলতো করে টোকা দিয়ে পুনরায় তার জায়গায় এসে বসবে। চোখ খুলে তার কাজ হবে কে টোকা দিয়েছে তা সনাক্ত করা। বলতে পারলে সে সামনের দিকে একটা লাফ দেওয়ার সুযোগ পাবে। না পারলে যে টোকা দিয়েছিল সে লাফ দিবে। এভাবে চলতে থাকে খেলা। মাঝে মাঝে বিশেষ নামগুলে পরিবর্তন করে দিতে হয়। নামগুলো সাধারণত ফুল বা, ফলের নামে রাখা হয়। যে দলের সবাই লাফিয়ে প্রথম সীমানা স্পর্শ করতে পারবে তারা জয়ী হবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
866 total views, 1 views today