পঞ্চম শ্রেনির ছাত্রী ক্ষুদে বিজ্ঞানী নাবিলা এই করোনা সময়ে একদম বসে নেই। স্কুল বন্ধের এই সময়েও তার অবসর নেই বললেই চলে। স্কুলের পড়াশোনা তো চলছেই আবার তার মধ্যেই মেতে আছে বিজ্ঞানবাক্সের নানা এক্সপেরিমেন্ট করে। এখন সে ব্যাস্ত পঞ্চম শ্রেনির বিজ্ঞানবাক্স নিয়ে। কারণ এই বক্সের মাধ্যমে সে তার বিজ্ঞান বইয়ের পড়াশোনা একদম ঝালিয়ে নিচ্ছে। গতকালকেই সে করে ফেলল রংধনু ফুলের এক্সপেরিমেন্টটি।
আলোর ঝলক, চুম্বকের চমক, রসায়ন রহস্য, তড়িৎ তাণ্ডব, অদ্ভুত মাপজোখ, শব্দ কল্প এবং একদম নতুন পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্স সহ সবগুলো বিজ্ঞানবাক্সে রয়েছে ২০০+ এক্সপেরিমেন্ট। আমরা ঠিক করেছি এই এক্সাইটিং এক্সপেরিমেন্ট গুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে এখানে বিস্তারিত জানাব। আজ রইল তার ৪র্থ পর্ব।
চুম্বকের চমকের বলরেখা-
আমরা প্রথমে জানবো চুম্বক সম্পর্কে। আমরা জানি চুম্বক একটি লোহার পেরেক কে আকর্ষণ করতে পারে। আবার একটা চুম্বক আরেকটা চুম্বককেও আকর্ষণ করতে পারে তবে সেটা হয় কেবল বিপরীত মেরুর বেলায়। একটি চুম্বকের দক্ষিন মেরু অন্য আরেকটি চুম্বকের উত্তর মেরুকে আকর্ষণ করতে পারে। আর যদি সমমেরু হয় তাহলে এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে অর্থাৎ দূরে ঠেলে দিতে চায়। এই ব্যাপার গুলো চুম্বক বলরেখা দিয়ে খুব চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
এই বলরেখা পরীক্ষাটা করার জন্য আমাদের লাগবে একটি দণ্ড চুম্বক এবং কিছু লোহার গুড়ো। যেগুলো চুম্বকের চমক বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া আছে। আমরা এই দণ্ড চুম্বকটাকে যদি একটি সাদা কাগজের নিচে রাখি এবং তার উপরে খুব ধীরে ধীরে যদি কিছু লোহার গুঁড়ো ছিটিয়ে দেই তাহলে বলরেখা গুলো আমাদের সামনে দৃশ্যমান হবে।
তাহলে আমরা এখন খুব ধীরে ধীরে লোহার গুঁড়োগুলো কাগজের উপর ছিটিয়ে দিব। এবং খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে লোহার গুড়া গুলো এই কাগজের উপর ছিটিয়ে দেয়ার সাথে সাথে এরা কিছু রেখা বা লাইন তৈরি করছে। যদি খুব ভালো করে খেয়াল করো তাহলে এই ব্যাপারটাও বুঝতে পারবে যে এই রেখা গুলো চুম্বকের এক মাথা থেকে বের হয়ে অন্য মাথায় এসে ডুকে যাচ্ছে। এবং তার সাথে আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে এই চুম্বকের দুই মাথায় কিন্তু রেখা গুলোর ঘনত্ব অনেক বেশি। তো এই যে রেখা গুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি এইগুলোই হচ্ছে চুম্বকের আসল বলরেখা। এবং যে দুই মাথায় আমরা দেখতে পাচ্ছি রেখার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, এরাই হচ্ছে চুম্বকের দুই মেরু। এবং দেখেই কিন্তু মনে হচ্ছে এই দুই মেরুতে চুম্বকের শক্তি অনেক বেশি। ব্যাপার সত্যিই কিন্তু তাই।
আমরা যদি একটি দণ্ড চুম্বক নেই এবং তার এক প্রান্তে এই লোহার পেরেকটা ধরি তাহলে খুব সহজেই এই চুম্বকটা এই লোহার পেরেকটাকে ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু আমরা যদি লোহার পেরেকটা চুম্বকের মাঝামাঝি দেই তাহলে চুম্বক লোহার পেরেকটাকে ধরে রাখতে পারবে না। তারমানে মাঝখানে চুম্বকের শক্তি কম এবং পেরেকটাকে আকর্ষণ করতে পারে না। তাহলে বুঝলেতো চুম্বকের বলরেখা কেমন।
শব্দ কল্পের স্টেথোস্কোপ-
এবার আমরা জানবো শব্দ কল্প বিজ্ঞানবাক্সের স্টেথোস্কোপ এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে। তোমরা নিশ্চয় দেখেছো ডাক্তাররা কানের মধ্যে একটি জিনিস জুড়ে দিয়ে সেটার মাধ্যমে হার্টবিট কিংবা ফুসফুসের শব্দ পরীক্ষা করে। আমরা এখন ঠিক এরকমই একটা স্টেথোস্কোপ তৈরি করার চেষ্টা করব। শুধু পার্থক্যটা এই ডাক্তারদের স্টেথোস্কোপে দুই কানে একসাথে শুনতে পাওয়া যায় আর আমাদের স্টেথোস্কোপে এক কানে শুনতে হবে।
এটি তৈরি করতে তোমরা বিজ্ঞানবাক্স থেকে স্টেথোস্কোপ হেড নিবে এবং তার সাথে দেয়া পাইপটা নিতে হবে। এরপর খুব সহজ একটা কাজ করতে হবে। সেটা হল স্টেথোস্কোপের হেডের সাথে পাইপের এক প্রান্ত খুব সাবধানে জুড়ে দিব। হেডের সাথে পাইপটা খুব টাইট করে জুড়ে দিলেই তোমার স্টেথোস্কোপ তৈরি হয়ে গেল। এবার তুমি যদি স্টেথোস্কোপের হেডটা বুকে চেপে দিয়ে অন্যপ্রান্ত কানে দাও তাহলে তোমার হার্টবিট শুনতে পাবে। এরকম করে চাইলে তুমি অন্য শব্দও শুনতে পাবে।
তুমি যদি চাও স্টেথোস্কোপ হেডের অপর প্রান্তে চিকন চিকন আরও দুটি পাইপ লাগিয়ে দুই কানেও শোনার ব্যবস্থা করতে পারো। আবার যদি তুমি হার্টবিট আরও জোরে শুনতে চাও তাহলে একটা কাজ করতে পারো। সেটা হল তুমি কিংবা তোমার বন্ধুকে বল কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করে আসতে কিংবা সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করে আসতে। দৌড়াদৌড়ি করলে কিংবা সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করলে অর্থাৎ পরিশ্রম করলে হার্টবিটের শব্দ জোরালো ভাবে শোনা যায়।
চাইলে তোমরা আরও একটা পরীক্ষা করে দেখতে পারো। সেটা হচ্ছে দরজার অপর পাশে কেউ কথা বলতে থাকলে দরজায় স্টেথোস্কোপের হেডের প্রান্ত চেপে ধরে অন্য প্রান্ত কানে দিয়ে দেখতে পারো কোন শব্দ শুনতে পাওয়া যায় কিনা।
পঞ্চম শ্রেনির সোলার প্যানেল
আচ্ছা তোমরা কি জানো আমরা শক্তি পাই কোথায় থেকে? আমরা শক্তি পাই সূর্য থেকে। তাহলে সূর্য থেকে যদি সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তি পেতে চাই তাহলে কি লাগবে আমাদের? আমাদের লাগবে সোলার প্যানেল। আমরা এখন জানবো কিভাবে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়।
এখন এই এক্সপেরিমেন্ট করতে আমাদের পঞ্চম শ্রেনির বিজ্ঞানবাক্স থেকে সোলার প্যানেল, হোয়াইট এল ই ডি মডিউল এবং রেড এল ই ডি মডিউল নিতে হবে। প্রথমে এই মডিউলে লাইটের কানেকশন দিতে হবে। এবার আমাদের একটি এল ই ডির সাথে সোলার প্যানেলের কানেকশন দিতে হবে। তবে খেয়াল করলে দেখা যাবে কানেকশন দেয়ার সাথে সাথে কিন্তু লাইট জ্বলবে না। তার মানে এখানে এখনো কোন বিদ্যুৎ নেই। এবার আমাদের ছোট্ট একটি কাজ করতে হবে। আর সেটা হল সোলার প্যানেলের উপরের অংশে কোন লাইট বা সূর্যের আলো ফেলতে হবে। এবার দেখা যাবে ঠিকই এল ই ডি টা জ্বলে উঠলো।
যেহেতু আমাদের সোলার প্যানেলটা অনেক ছোট তাই এলইডি টাও জলবে অনেক কম। আবার তোমরা একটা বিষয় খেয়াল করবে যে সোলার প্যানেল টা যদি উলটে দাও তাহলে সাথে সাথে লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। তারমানে সোলার প্যানেলে যদি আলো পরে তবেই কিন্তু আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব।
যদি আমরা আরও বড় একটা সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে কিন্তু আমরা অনেক বেশি কারেন্ট ব্যবহার করতে পারতাম। তখন আমরা বড় বড় বাতি জ্বালাতে পারতাম। আমরা ফ্যান ঘুরাতে পারতাম। তো এই সোলার প্যানেল যত দিন বিদ্যুৎ পাবে ততদিন আমাদের কারেন্ট দিয়ে যেতে পারবে। এর জন্য কিন্তু আর কোন বাড়তি খরচ হবে না। এজন্যে এটাকে আমরা বলি নবায়ন যোগ্য শক্তি।
তাহলে আর দেরি না করে ঝটপট করে ফেলো এই এক্সপেরিমেন্ট টা।
আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে আরও আরও কিছু মজার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে আমরা হাজির হব। ততক্ষনে এই এক্সপেরিমেন্টগুলো মনোযোগ দিয়ে করা যাক।
সবগুলি বিজ্ঞানবাক্স দেখে নাও এখান থেকে।
766 total views, 1 views today