বর্তমান করোনা সময়ে আমাদের ক্ষুদে বিজ্ঞানী নাজমুলের স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না। তাই বলে সে একদম বসে নেই। স্কুলের পড়া এগিয়ে রাখার পাশাপাশি সে নিজেকে আরও তীক্ষ্ণ করে ঝালিয়ে রাখছে বিজ্ঞানবাক্সের এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে। বাসায় বসেই এই অলস সময়কে কাজে লাগাচ্ছে বিজ্ঞানবাক্সের দারুণ সব এক্সপেরিমেন্ট করে করে।
আলোর ঝলক, চুম্বকের চমক, রসায়ন রহস্য, তড়িৎ তাণ্ডব, অদ্ভুত মাপঝোখ, শব্দ কল্প এবং একদম নতুন পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্স সহ সবগুলো বিজ্ঞানবাক্সে রয়েছে ২০০+ এক্সপেরিমেন্ট। আমরা ঠিক করেছি এই এক্সাইটিং এক্সপেরিমেন্ট গুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে এখানে বিস্তারিত জানাব। আজ রইল তার প্রথম পর্ব।
রসায়ন রহস্যের লাভা ল্যাম্প-
রসায়ন নিয়ে যদি কোন মজার ও এক্সসাইটিং ঘটনা দেখতে চাই সেক্ষেত্রে লাভা ল্যাম্প হতে পারে একটা দারুণ এক্সপেরিমেন্ট। এই এক্সপেরিমেন্ট করতে প্রয়োজন হবে একটা বিকার অথবা কাঁচের স্বচ্ছ গ্লাস জাতীয় কোন পাত্র।
এই পাত্রে প্রথমে পরিমাণ মত পানি ঢেলে নিতে হবে। তারপর পানির উপরে সয়াবিন তেল দিতে হবে। আমরা জানি পানি আর তেল কখনো একসাথে মেশে না। তাই সয়াবিন তেল পানিতে দেয়ার সাথে সাথে নিচে নেমে গেলেও তেলটা ধীরে ধীরে ওপরে উঠে আসবে। এর কারণ তেলের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম। তাই তেলটা পানির উপরে উঠে আসবে। এখন তেলের উপর কিছু ফুড কালার মিশিয়ে দিতে হবে। ফুড কালার মিশিয়ে দেয়ার সাথে সাথে কী ঘটে সেটা খেয়াল করতে হবে। দেখা যাবে ফুড কালার টা তেলের ভিতর দিয়ে গিয়ে ঠিক পানির উপর জমা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে তেল আসলে অপোলার যৌগ। তাই তেলের সাথে ফুড কালার মিশে যাচ্ছে না।
কিন্তু পানি পোলার যৌগ তাই একটু পরে দেখা যাবে পানির সাথে ফুড কালার মিশে যাচ্ছে। তারপর বক্সে থাকা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট পাত্রে ছেড়ে দিতে হবে। ট্যাবলেট ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে খেয়াল করতে হবে কি ঘটছে। দেখা যাবে এই ট্যাবলেট থেকে ধীরে ধীরে বুদবুদ বের হচ্ছে। সেই বুদবুদের কারনে ফুড কালার গুলো পানি থেকে তেলের ভিতর দিয়ে উপরে উঠে আসবে। আবার উপর থেকে রঙ গুলো নিচে নেমে আসবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখনো কিন্তু তেলের সাথে পানি মিশবে না।
এই ওঠা নামা যতক্ষন পর্যন্ত ট্যাবলেট থেকে বুদবুদ বের হবে ততক্ষন পর্যন্ত চলতে থাকবে। তো এভাবেই তৈরি করা যায় খুব মজার লাভা ল্যাম্প।
তড়িৎ তাণ্ডবের ম্যাজিক মোটর-
ম্যাজিক মোটর তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সের খুব মজার একটি এক্সপেরিমেন্ট। মোটর সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই জানি। মোটর তড়িৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত করে। মোটরে কারেন্ট দিলে মোটর সেই শক্তিকে ঘূর্ণন গতি শক্তিতে পরিণত করে। আমরা এখানে মোটর কিভাবে তৈরি করা যায় সেই এক্সপেরিমেন্টটি করবো।
এটি তৈরি করতে আমাদের লাগবে একটা রিং ম্যাগনেট, অন্তরিত তারের তৈরি একটি কয়েল, দুটি ক্রোকোডাইল ক্লিপ, ব্যাটারি এবং ব্যাটারি কেসিং। যার সবই তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সে আছে।
কয়েলের দুই প্রান্তের আবরণ উঠিয়ে নিতে হবে যাতে এর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এটি বসানোর জন্য দুটি পেপার ক্লিপকে লম্বা লম্বি করে দাঁড় করাতে হবে। এবার ব্যাটারি থেকে এই দুই ক্লিপে কানেকশন দিতে হবে যার ফলে এর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে শুরু করবে। আমাদের নিশ্চয় জানা আছে এই সলিনয়েড বা কয়েলের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এটা তড়িৎ চুম্বকে পরিণত হবে। কানেকশন দেয়ার পর কয়েলের এক প্রান্ত হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দিলেই মোটরটি ঘুরতে শুরু করবে এবং যতক্ষণ এর ভিতর দিয়ে কারেন্ট যাবে ততক্ষণ এটি ঘুরতে থাকবে।
আর এভাবেই অনেক বড় বড় কলকারখানায় অনেক বড়বড় মোটর দিয়ে যন্ত্রপাতি চালানো হয়।
আলোর ঝলকের পেরিস্কোপ-
পেরিস্কোপ ব্যবহৃত হয় মূলত সাবমেরিনে। সমুদ্রের গভীরের জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ দেখার জন্যে এই শক্তিশালী যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। পেরিস্কোপ কিনতে পাওয়া যায় এমন দোকান বাংলাদেশে নেই। কিন্তু চাইলেই ঘরে বসে পেরিস্কোপ তৈরি করা যায় শুধুমাত্র কাগজ আর আয়না দিয়েই!
পেরিস্কোপ বানানোর এক্সপেরিমেন্ট করতে হলে প্রথমে বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া কাগজ ও আয়নাগুলো নিতে হবে। এই কাগজের বিভিন্ন জায়গায় অনেক গুলো টু সাইডেড টেপ দেয়া আছে। তবে ভিতরের দিকে যে জায়গায় টেপ দেয়া আছে সেখানে আয়নাগুলো লাগাতে হবে। এখন কাগজের উপরের দিকে যে টেপ গুলো আছে সেগুলো উঠিয়ে কাগজটা নির্দেশনা অনুযায়ী ভাঁজ করে জোড়া লাগালে লম্বালম্বি একটা বক্স তৈরি হবে। তারপর দুই প্রান্তে নির্দেশনা অনুযায়ী আয়না গুলো জায়গা মত জোড়া দিতে হবে। খেয়াল করে দেখতে হবে পাশ থেকে যেন আয়না দুটি সমান্তরাল থাকে। তৈরি হয়ে গেল মজার পেরিস্কোপ।
এবার আয়নার এক প্রান্তে তাকালেই অন্য প্রান্তের জিনিস দেখা যাবে খুব সহজেই।
পঞ্চম শ্রেণির বাতাসের গাড়ি
পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্সের দারুণ কিছু এক্সপেরিমেন্ট এর মধ্যে রয়েছে আজব গাড়ি যেটি চলে বাতাসের মাধ্যমে। এই আজব গাড়ি কিভাবে তৈরি করা যায় জেনে আসা যাক।
প্রথমে নির্দেশনা অনুযায়ী গাড়ি তৈরির জন্য যে কাগজ গুলো দেয়া আছে সেগুলো ভাঁজ করে নিতে হবে। গাড়ির উপরের অংশ তৈরি হলে নিচের অংশে দেয়ার জন্য যে কাগজ আছে সেখানে কিছু ছিদ্র দেয়া আছে। ছিদ্র গুলোর মাধ্যমে উপরের অংশ জোড়া দিতে হবে। এখন অর্ধেক তৈরি গাড়িটি উল্টালে দেখা যাবে কিছু টু সাইডেড টেপ দেয়া আছে। টেপের উপরের অংশ তুলে আঠার সাথে ভালো করে দুই সাইড জোড়া লাগিয়ে দিতে হবে। এখন গাড়ির মূল অংশ তৈরি হয়ে গেল আর বাকি থাকল গাড়ির চাকা। বক্সে দেয়া কাগজের চাকা গুলো পাইপ ও এক্সেলের মাধ্যমে লাগিয়ে নিতে হবে। হয়ে গেল গাড়ি তৈরি। এবার গাড়ি চালানোর পালা।
গাড়ি চালানোর জন্য বক্সে দেয়া একটি বেলুন স্ট্রয়ের মুখে রেখে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেলুনের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এবার গাড়ির উপরের অংশে থাকা ছিদ্র দিয়ে স্ট্র ঢুকিয়ে দিয়ে নিচের অংশের ছিদ্র দিয়ে বের করে আনতে হবে। এবার আমাদের এই আজব গাড়ি তৈরি করা শেষ। এবার গাড়ি স্টার্ট দেয়ার পালা। স্টার্ট দেয়ার জন্য গাড়িতে দেয়া স্ট্রয়ের মাধ্যমে বেলুনে বাতাস দিতে হবে। যত বেশি বাতাস দেয়া যাবে তত বেশী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলবে এই গাড়ি। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশী বাতাসে যেন আবার বেলুন ফেটে না যায়। এবার গাড়ি ছেড়ে দিলেই চলতে শুরু করবে এই বাতাসের গাড়ি। কি আজব তাই না।
আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে আরও আরও কিছু মজার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে আমরা হাজির হব। ততক্ষনে এই এক্সপেরিমেন্টগুলো মনোযোগ দিয়ে করা যাক।
আরো পড়তে পারো ওরা বিজ্ঞানবাক্স ব্যবহার করে, তুমি কি বিজ্ঞানবাক্স ব্যবহার কর?
সবগুলি বিজ্ঞানবাক্স দেখতে ক্লিক করো এখানে।
717 total views, 1 views today