আজ শুক্রবার, মানে ছুটির দিন। ফাহিমের স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই। তারপরেও ফাহিম অন্যান্য দিনের মত সকাল সকালই ঘুম থেকে উঠেছে। সকাল থেকেই সে তার জামাকাপড় ইত্যাদি আরও অনেক প্রয়োজনীয় সামগ্রী গুছিয়ে রাখছে। কারন, সামনের সপ্তাহে সে তার বাবা-মায়ের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে। তাই সে এ ব্যাপারে অনেক অনেক বেশি এক্সাইটেড আর উদ্বিগ্ন। তবে তার থেকেও বেশি উদ্বিগ্ন তার বাবা-মা। কারন, ফাহিম গাড়িতে উঠলেই বমি করে আর অসুস্থ হয়ে যায়। অর্থাৎ তার গতি অসুস্থতা (Motion Sickness) আছে।
গতি অসুস্থতা ঠেকাতে আমরা অনেক কিছু করলেও অনেকেরই হয়ত এক কারনটি অজানা। তাহলে আজ জেনে নেয়া যাক গাড়িতে উঠলে কেন আমরা অসুস্থ অনুভব করি এবং শিশুদের গতি অসুস্থতা দুর করতে সহজ ঘরোয়া কিছু সমাধান। অর্থাৎ শুধু ফার্মেসির কিছু ঔষধের উপর ভরসা না করে আমরা কিভাবে সহজেই ঘরে বসেই ঔষধ তৈরি করে বাচ্চাদের গতি অসুস্থতা ঠেকাতে পারি।
চলুন তাহলে এবার জেনে নেই গতি অসুস্থতার কারণ ও ঘরোয়া টিপস :
সাধারনভাবে গতি অসুস্থতা গাড়ি, লঞ্চ, প্লেন যেকোন যানবাহনেই হতে পারে। এখানে অনেক বাবা-মাই বলে থাকেন যে, তার সন্তানের বাসে বমি হলে লঞ্চে হয় না বা প্লেন ভ্রমনে সে অসুস্থ হয় না ইত্যাদি। তবে সত্যটা হচ্ছে ঠিক যে বিষয়টির জন্য এই অসুস্থতা হয় তা যেকোন যানবাহনেই হতে পারে।
আপনার সন্তানকে নিয়ে যখন গাড়িতে চড়েন এবং গাড়ি চলতে শুরু করে তখন এ ব্যাপারে তার মস্তিস্কের নিকট দুটি ভিন্ন বার্তা যায়। একটি হলো সে গাড়িতে সিট বেল্ট লাগিয়ে শান্ত সোনামনির মত বসে আছে। আরেকটি হল সে বসে নেই, চলাচল করছে। এই বিপরীত দুই বার্তায় শিশুর মস্তিস্ক দ্বিধান্বিত হয়ে যায় এবং তার স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। মস্তিস্ক মানুষের শরীরের নিয়ন্ত্রক কক্ষের কাজ করে বিধায় এ সময়ে সে ভুলভাবে শরীরের নিয়ন্ত্রনের কাজ করা শুরু করে আর আপনার শিশু তখন অসুস্থ বোধ করে।
উল্লেখ্য, ভ্রমনের সময় মস্তিস্কের দ্বারাই যে আমরা অসুস্থ হয়ে পরি বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে সবাই একমত নন। মস্তিস্ককে এরকম ধাঁধার মাঝে পরে যাওয়ার বিষয়টিকে বলে মিস ম্যাচ সেন্সরি সিগন্যাল । আমরা বই বা ফেসবুকে অনেক স্থির চিত্র দেখতে পাই যেগুলো দেখে চলমান মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো স্থির মনে হয় স্থির। নিচের ছবিটি দ্রষ্টব্য:
এবার আরো গভীরে গিয়ে দেখে নেই কীভাবে পুরো বিষয়টি ঘটে-
গাড়ি চলছে, আর আপনার শিশু গাড়িতে বসে আছে। শিশুর চোখ বলছে সে স্থির কিন্তু কান বলছে স্থির নয়। চোখ তো ঠিকই বলছে, এখন জেনে নেয়া যাক কেন কান এরকম তথ্য দিচ্ছে !
বস্তুত শ্রবণ বাদে কানের আরো একটি খুব গুরুত্বপুর্ন কাজ আছে, যেটা সে তার খুব ছোট্ট একটি অংশের দ্বারা সম্পন্ন করে থাকে। কানের ভেতরের এ অংশটির নাম ভেসটিবুলার সিস্টেম। এখন, এই ছোট্ট অংশটির আবার টিউবের মত তিনটি অংশ আছে যেগুলো তরল পদার্থ দিয়ে পূর্ণ থাকে। আর প্রত্যেকটা টিউবের মধ্যে চুলের মত চিকন আকারের দন্ডায়মান সুতা থাকে। কানের তরল ভর্তি এই টিউবগুলো পুরো শরীরের নড়াচড়ার বিষয়টি বুঝতে পারে। আপনি আপনার শরীর বা মাথা যখন চালনা করেন তখন টিউবগুলোর ভেতরে থাকা চুলগুলোও নড়ে উঠে। যেদিকে আপনার শরীরের গতি যায়, সেদিকেই টিউবের তরল বেকে যায়। নিচের ছবিটি দেখুন:
আর তখনই কান আপনার মস্তিস্কের কাছে বার্তা পাঠায় যে আপনি নড়াচড়া করছেন। কানের এই ভেসটিবুলার সিস্টেম শুধু নড়াচড়ার বার্তাই নয় আপনি লম্বা হয়ে আছেন নাকি সমান্তরাল ভাবে, এ বিষয়টিও সে মস্তিস্ককে যথা সময়ে অবগত করে। সাথে সাথে আপনি কোন দিকে যাচ্ছেন অর্থাৎ সামনে বা পেছনে এসব বিষয়ও সে মস্তিস্ককে জানিয়ে দেয়। যদিও আপনার চোখ সেটা বলতে পারে না বিশেষ করে যখন আপনি গাড়ি চলন্ত অবস্থায় বই পড়েন বা মোবাইল চালান।
কিন্তু এর ঠিক বিপরীত জিনিসটিও ঘটতে পারে। অর্থাৎ চোখ মস্তিস্ককে বলছে আপনি নড়াচড়া করছেন কিন্তু আপনার কান বলছে স্থির। যেমন ধরুন, আপনি থিয়েটারে বসে মুভি দেখছেন। থিয়েটারের বিশাল পর্দা মুহূর্তে মুহূর্তে আপনার সামনে তার চিত্রকে এদিক সেদিক করছে। আর স্বভাবতই আপনার চোখ মস্তিস্ককে আপনার চলাচলের বার্তা দিচ্ছে। যেখানে কান তার ভেস্টিবুলার সিস্টেমের মাধ্যমে জানাচ্ছে যে আপনি স্থির।
যেহেতু বিজ্ঞানীদের গবেষনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারে নি তবে অনেকে এর একটি বিবর্তনবাদ মুলক ব্যাক্ষা দিয়েছেন। যেমন, মানুষ সভ্যতায় আধুনিক যন্ত্র-চাকা ও ভিডিও রেকর্ডিং এর আবির্ভাব ঘটে শেষ কয়েক শতক ধরে। যন্ত্র চাকায় ভর করে মানুষের জীবনযাত্রায় এক অভিনব গতিময়তার পরিবর্তন আসে। কিন্ত ,মানুষের ইতিহাসের বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে চাকা বা ভিডিও বিহীন মন্থর গতিময়। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা গতির এই হঠাৎ পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়াতে পারছে না ফলে আমরা অসুস্থ হচ্ছি।
আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক মেকানিজম হচ্ছে শরীরের জন্য যা ক্ষতিকর তা নির্ধারন করা এবং যেকোন অপ্রিতিকর উপায়ে তা শরীর থেকে বের করে দেয়া। যেমন আমাদের বমি বা পাতলা পায়খানা হয় পচা-বাসি বা বিষাক্ত কিছু গ্রহণ করলে। এই বিষয়টি আমাদের জন্য একেবারেই স্বাভাবিক হলেও এর কারন এখনও অজানা। যেমন টি অজানা ভ্রমনে ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি গতি অসুস্থতায় পরে আবার চালকের থেকে যাত্রী বেশি এ সমস্যার সম্মুখীন হয়।
শিশুদের গতি অসুস্থতার কারণ ও নিরাময়ের আজ এ পর্যন্তই। আগামী ব্লগে আমরা শিশুদের গতি অসুস্থতা দূরীকরণে ঘরোয়া সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো।
দেখে নিন বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স কিট বিজ্ঞানবাক্স অনলাইনে কেনার উপায়
বিজ্ঞানবাক্স সংক্রান্ত যেকোন জিজ্ঞাসায় ফোন করুন 01847103102 নাম্বারে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
982 total views, 1 views today