যে ছেলেটি কেবল প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়েছে, যার জীবন বলতে ক্রিকেট, বাবা-মা আর তিন গোয়েন্দা, জগতের কুৎসিত বাস্তব যাকে এখনো স্পর্শ করে নি, তার কি মন খারাপ হয় না? হ্যাঁ, হতেই পারে। বাবা-মার কাছে বকা খেলে, অথবা ক্লাশ টেস্টে ভালো না করলে এমন হতেই পারে। কিন্তু মৃত্যুচিন্তা! বিষণ্ণতা! এমনও হয় নাকি সে বেলায়? হয়। বিরল, কিন্তু হয়। আর এর ফল হতে পারে মারাত্মক। ঠিকমত টেক কেয়ার না করলে তার ভবিষ্যৎ জীবনে এটা গভীর ছাপ রাখতে পারে। হ্রাস্ব পেতে পারে তার দক্ষতা এবং উদ্যম। তাই সচেতন অভিভাবক মাত্রই শিশুদের বিষণ্ণতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা উচিত।
যেভাবে বুঝবেন সে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত-
১। দীর্ঘদিন ধরে মন খারাপ থাকবে।
২। লুকিয়ে কাঁদবে।
৩। পড়ালেখা এবং অন্যান্য কাজে অনাগ্রহ সৃষ্টি হবে।
৪। একা থাকতে চাইবে।
৫। সমবয়সীদের এড়িয়ে চলবে।
আরও পড়তে পারেন- শিশু কিভাবে পরিশ্রমী হয়ে বেড়ে উঠবে? জেনে নিন গবেষণা কী বলছে
৬। ঘুম বা রুচির পরিবর্তন হবে।
৭। ক্লান্তি অনুভব করবে।
৮। অবুঝের মত আচরণ করবে।
৯। কথাবার্তার মধ্যে হতাশা প্রকাশ পাবে।
১০। মৃত্যু এবং আত্মহত্যার কথা বলবে বা চিন্তা করবে।
সবগুলো উপসর্গ থাকতে হবে তা নয়, তিন-চারটি উপসর্গ একসঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে থাকলেই জানবেন তার কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার কারন-
কেন তারা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হচ্ছে? এর পেছনে আমাদের কিছু আচরণগত ত্রুটি, সামাজিক রীতি এবং স্বাস্থ্যগত ব্যাপারও আছে। যেমন-
১। বেশি প্রত্যাশা
মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা শিশুদের মনোজগতে ভীষণ চুরমার অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। আজকাল আধুনিক বাবা-মায়েরা শিশুকে অলরাউন্ডার হিসেবে দেখতে চান। পড়াশোনায় ভালো তো করতে হবেই, এছাড়া গান, নাচ, সাঁতার, খেলা কোনটাই বাদ যাবে না। এত প্রত্যাশার ভার বইতে না পারলে শিশুরা হতাশায় ভোগে। এমন কী আত্মহত্যা প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
আরও পড়তে পারেন- শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় ৫টি মজার টিভি সিরিজ
২। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ
শিশুদের জীবনে বাবা মা’ই সব। তারা তাদের কাছে ঈশ্বরের মত। তাই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ সন্তানের জন্য অনেক বড় একটি আঘাত। এই আঘাত তাদের জীবনযাপন, আচার-আচরণ সবকিছুতেই বিরূপ প্রভাব ফেলে। ডিভোর্সি বাবা-মায়ের সন্তানদের অবসাদগ্রস্থ হওয়া এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
৩। খেলাধুলা কম করা
খেলাধুলা করলে শরীর তো পোক্ত হয়ই, মনটাও ভালো থাকে। মেধার বিকাশ, এবং সৃজনশক্তি বৃদ্ধিতেও তা সাহায্য করে। যেসব শিশু খেলাধুলা কম করে তারা দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো সমস্যা সমাধানেও বহুক্ষেত্রে কম দক্ষ হয়। বিষয়টি তাদের একসময় হতাশাগ্রস্ত করে আর হতাশা ডেকে আনে বিষাদ।
৪। প্রযুক্তি নির্ভরতা
খেলাধুলা এবং কায়িক শ্রমের অভাবে শিশুরা প্রযুক্তির মাঝে বিনোদন খুঁজে নেয়। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে তারা সামান্য ২+২= ? অংক করতেও প্রযুক্তির সাহায্য নেয়। কমতে থাকে তাদের সৃজনী এবং আত্মবিশ্বাস। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি গেম খেলে, তারা অবসাদগ্রস্তও হয় বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি গেম খেললে শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ সংকুচিত হতে শুরু করে।
আরও পড়তে পারেন- অতি শাসন কেন ক্ষতিকর? জেনে নিন ৭টি কারণ এবং করণীয়
৫। মিষ্টি খাবার বেশি খাওয়া
ব্রিটিশ মনস্তত্ত্ববিদ ম্যালকম পিট গবেষণা করে দেখেছেন বেশি চিনি, কেক, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং কার্বোনেটেড পানীয় পান করার অভ্যাসও অনেক সময় শিশুদের অবসাদগ্রস্ত করে। চিনি বেশি খেলে মস্তিষ্কে বৃদ্ধি হরমোনের কার্যক্রমেও সমস্যা তৈরি করে।
প্রতিকারের উপায়-
১। বকাঝকা করবেন না
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত শিশুরা তাদের দুঃসময়ের জন্যে সবচেয়ে বেশি ভরসা করে থাকে বাবা-মায়ের ওপর। তারা চায় আশ্রয়, নির্ভরতা। এমন অবস্থায় যদি সে সাহায্য না পেয়ে উল্টো বকাঝকার শিকার হয়, তাহলে তার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
২। মনোযোগ দিন
শিশুর প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ না দিলে শিশু প্রত্যাখ্যাত বোধ করে এবং বিষণ্ণ হয়। তাই শিশুর ইতিবাচক আচরণের দিকে মনোযোগ দিন।
আরও পড়তে পারেন- Mom, you need to know these common childhood illness
৩। ভালোবাসা প্রকাশ করুন
সন্তানের প্রতি ভালোবাসার যে অনুভূতি, তার কোন তুলনা হয় না। তবে অনেকেই সেভাবে তা প্রকাশ করেন না। হয়তো ব্যস্ততা, হয়তো ক্লান্তির কারণে। কিন্তু একজন বিষাদ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুর জন্যে একটু বেশি আদর, একটু মনোযোগ, চুমু, আলিঙ্গন অনেক বেশি কিছু। তাকে কাছে টেনে নিন, তার সমস্যার ভার আপনার কাঁধে নিন।
৪। সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োগ করুন
ঘর-স্কুল-ঘর, এই আবদ্ধতায় আটকে থেকে অনেক শিশুই হাঁসফাঁস করতে থাকে। তাদের চাই মুক্ত বাতাস। তাকে ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে আসুন। কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করুন। এর ফলে জীবন সম্পর্কে তার মনোভাব বদলে যাবে। সে হয়ে উঠবে উৎফুল্ল এবং দক্ষ। তার মনের গুমোট ভাব অনেকটাই কেটে যাবে।
৫। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
বাবা-মার বুকে সন্তানের জন্যে অঢেল ভালোবাসা থাকলেও সমস্যার গতি-প্রকৃতি বুঝে করণীয় বিষয় বেছে নেবার মত জ্ঞান তাদের নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।
আরও পড়তে পারেন- আপনার সন্তান পড়া মনে রাখতে পারছে না? একটু খেয়াল করুন!
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,083 total views, 1 views today