“প্রজাপতি ! প্রজাপতি !! কোথায় পেলে ভাই এমনও রঙিন পাখা… লা লা লা…!
কেমন আছো বন্ধুরা! আজ সকাল থেকেই আমার এ গানটি শুনতে খুব ইচ্ছে করছে। কারণ সকালেই দেখি বারান্দার টবের ফুলের উপর খুব সুন্দর দুটি প্রজাপতি বসে আছে। প্রজাপতি দেখতে খুবই সুন্দর, তাই না?
আচ্ছা, প্রজাপতি কোথায় থাকে? এত সুন্দর সুন্দর রঙ সে কোথায় পায়? সব প্রজাপতি দেখতে একরকম নয় কেন? প্রায়ই এরকম হাজারও প্রশ্ন নিশ্চয়ই তোমাদের মনে আসে। আসলে, প্রজাপতির এসমস্ত বিষয় গুলোকে এককথায় বলে প্রজাপতির জীবনচক্র। তাহলে এসো, আজ আমরা প্রজাপতির জীবনচক্র সম্পর্কে জেনে নেই।
প্রজাপতি জীবন প্রধানত ডিম, শুঁয়োপোকা বা লার্ভা, পিউপা এবং পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি এই চারটি ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ এই চারটি ধাপে প্রজাপতির জীবন চক্র শেষ হয়। এই লাইফ সাইকেলটি মেটামরফোসিস (Metamorphosis) নামে পরিচিত।
১. ডিম
প্রজাপতির জীবনের প্রথম ধাপটি শুরু হয় প্রথমে একদম ছোট ছোট ডিমের মধ্যে। প্রজাপতির ডিম হতে পারে অনেক আকৃতি ও রঙের। তবে এখানে মজার বিষয় কি জানো? প্রজাপতির ডিম দেখে মনে করতে পার যে এটি খুব সহজেই হয়ত ভেঙ্গে যাবে। প্রজাপতির ডিম হাস-মুরগির ডিমের মত শক্ত খোলস দিয়ে ঢাকা থাকে না এবং উপরের অংশ অনেক নরম ও তুলতুলে। তবে প্রজাপতির ডিমের উপরের আবরণ খুব জটিল এক প্রক্রিয়ায় তৈরি যা সহজে ভেঙ্গে বা ফেটে যাবার নয়।
প্রজাপতির ডিমের একেবারে উপরে মাইক্রো-পাইল নামে রয়েছে ছোট একটি ছিদ্র। এই ছিদ্রটি দিয়ে ডিমের ভেতরে বাতাস এবং পানি প্রবেশ করে। ডিমের এ ধাপটি ৬-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।
২. লার্ভা বা শুঁয়োপোকা
আচ্ছা, তোমরা কি জানো প্রজাপতির ডিমের ভেতর কি থাকে? হ্যাঁ, প্রজাপতির ডিমের ভেতর প্রজাপতির বাচ্চা থাকে তবে সেটি দেখতে একদম প্রজাপতির মত নয়। দেখে মনে হবে এটি কোন বিষাক্ত পোকা। আর এটিই হচ্ছে প্রজাপতির জীবন চক্র ‘এর ২য় ধাপ। এ ধাপে ডিম থেকে লার্ভা বা শুঁয়োপোকা বের হয়। এখানে একটি মজার জিনিস হচ্ছে, ডিম থেকে বের হয়ে বেশির ভাগ শুঁয়োপোকা ডিমের উপরের অংশটি খেয়ে ফেলে। এটি তাদের প্রথম খাবার হিসেবে ধরা হয়। তারপর তাদের ডিমগুলো যে পাতার উপরে ছিল, তারা সেই পাতা খেতে শুরু করে। আর এটাই অর্থাৎ গাছের পাতাই শুঁয়োপোকাদের প্রধান খাবার।
৩. পিউপা
তোমরা কি জানো যে, শুঁয়োপোকারা ভীষণ মাত্রার খাদক হয়। মানে, তারা সব সময়ই খাওয়ার মধ্যে ব্যস্ত থাকে আর খুব দ্রুত বড় হয়। ২ থেকে ৫ সপ্তাহের মধ্যে শুঁয়োপোকা তার বেড়ে ওঠার ধাপটি শেষ করে। আর যখন একটি শুঁয়োপোকা তার পূর্ণ বয়সে পৌঁছে যায়, তখন সে এমন একটি জায়গা খুঁজতে থাকে যেখানে সে তার পরের ধাপটি তে প্রবেশ করতে পারবে। বন্ধুরা, মনে আছে, প্রজাপতির জীবন চক্রের ৩য় ধাপটি কি? হ্যাঁ, ঠিক বলেছ, ৩য় ধাপটি হল পিউপা।
এ ধাপে শুঁয়োপোকা তার শরীরের উপর পাতলা আবরণের একটি জাল বুনতে থাকে। অনেক টা পিরামিডের মমির গায়ে যেমনটি থাকে। অথবা মাকড়সা যখন তার জালে কোন পোকামাকড় পেলে সেটির উপর দিয়ে যেভাবে জাল বুনে। তোমরা যখন বিকেলে বাগানে বা পার্কে হাটতে বের হবে, তখন গাছের ডাল, পাতা বা পাতার ডগার দিকে একটু খেয়াল করলেই পিউপা দেখতে পাবে। পিউপার উপরে যে একে প্রতিরক্ষার জন্য একটি আবরণ থাকে, এর নাম ক্রাইসলিস।
৪. পূর্নাঙ্গ প্রজাপতি
প্রজাপতির জীবন চক্র তে পিউপার সময় সীমা ১ থেকে ২ সপ্তাহ। এই সময়টুকু পরেই রঙ বেরঙের পাখা নিয়ে বের হয়ে আসে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি। একটি প্রজাপতি কতদিন বেঁচে থাকে, অনুমান করে বলতে পারবে? আমি বলে দিচ্ছি, সাধারণত একটি প্রজাপতি ২০ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে।
আরো কিছু মজার তথ্য:
> তোমরা কি জানো যে, প্রজাপতি তাদের পায়ের মাধ্যমে স্বাদ গ্রহণ করে !
> আবার তোমরা কি কখনো লক্ষ করেছ, যখন প্রজাপতি ফুলের উপর বসে তখন সে শুধুমাত্র ফুলের উপরেই বসে। ফুলের পাপড়ি বা পাতার উপরে নয়। কারণ তারা, ফুলের উপর বসে ফুলের মধু খেয়ে থাকে, তাই।
> পুরো পৃথিবীতে ১৭ হাজার ৫০০ শ প্রজাতির মানে, রকমের প্রজাপতি রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫০ টিই আমেরিকায় পাওয়া যায়।
> প্রজাপতি যখন উড়ে তখন একে দেখতে অনেকটা ইংরেজি সংখ্যা আট 8 এর মত দেখায়।
তাহলে বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই। তবে শেষ করার আগে তোমাদের জন্য একটি কুইজ,
“প্রজাপতির জীবন চক্র কয় ভাগে বিভক্ত এবং কী কী?”
আরো পড়তে পারো- ডাইনোসর সংক্রান্ত কিছু ভ্রান্ত ধারণা, এবং প্রকৃত সত্য
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
3,330 total views, 1 views today