আকিব-রাকিব দুই ভাই। প্রায় কাছাকাছি বয়সের। আকিবের বয়স তিন বছর আর রাকিবের দুই। তাদের আছে অনেক অনেক খেলনা। কিন্তু তারা খেলতে বসলেই লেগে যায় বিপত্তি। কেউই কাউকে নিজেদের খেলনা ধরতে দেয় না। একজনের খেলনা আরেকজন ধরলেই হুলস্থুল কান্ড লেগে যায়। একজনের খেলনা আরেকজন নিলেই দুজনের মাঝে কাড়াকাড়ি লাগে ও সেটা হাউমাউ করে কান্নাকাটি পর্যন্ত গড়ায়। অন্য দিকে আহনাফ আর রায়হান দু-জনই নিজেদের খেলনা ও অন্যান্য জিনিস একজন আরেকজনের সাথে শেয়ার করে। এমন কী তাদের কাজিনদের সাথেও খেলনা শেয়ার করে। একজনের খেলনা দিয়ে আরেকজন খেলে। তাদের মাঝে বন্ধনটাও অনেক দৃঢ়।
আকিব আর রাকিবের মতো অনেক বাচ্চারাই আছে, যারা নিজেদের কোন কিছু অন্যজনের সাথে শেয়ার করতে চায় না। কিন্তু শিশু বয়স থেকেই শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে তোলা জরুরী। আমরা বাচ্চাদের শেয়ার করার উপকারিতা ও কিভাবে বাচ্চাদের মাঝে শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে তা সম্পর্কে জানবো।
শেয়ার করা কেন জরুরী
শেয়ার করতে না চাওয়া বাচ্চাদের মাঝে অন্যদের সাথে সাংঘর্ষিক অনেক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। অন্য দিকে, যাদের শেয়ার করার অভ্যাস থাকে, তারা অনেকের সাথে মিশতে পারে। ফলে তারা অনেক সৃজনশীল ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে। শেয়ার করার মানসিকতা বাচ্চাদের মাঝে ছোট থেকেই দলবদ্ধ হয়ে কাজ করা, অন্যকে সহযোগিতা করা ও সামাজিকতার পাঠ গড়ে তোলার মতো অসাধারণ কিছু মানবিক গুণাবলী গড়ে তোলে। যা শিশুর পরবর্তী জীবনে তাকে একজন সফল ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
শিশুর মাঝে শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে তোলার কার্যকর কিছু উপায়
শিশুর সামনে উদাহরণ হতে হবে ও পরিবার থেকে শিক্ষা দিতে হবে
শিশুরা তাদের অনেক আচরণই পরিবারের মানুষদেরকে দেখে শেখে। সেজন্য পরিবারকেই তার সামনে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত হতে হবে। পরিবারের মাঝে যদি শেয়ারিংয়ের মানসিকতা থাকে তাহলে শিশু সেখান থেকেই শিখবে। ধরুন, বিকেলের নাস্তার সময় পাশের বাসার কাউকে আমন্ত্রণ করলেন, একসাথে চা খেলেন, বিকেলের চা খাওয়ার সময়টা কিছু আনন্দে কাটলো সবার। বাসার বাচ্চাদের জন্য চকলেট এনে শিশুকে দিয়ে বন্টন করানো যেতে পারে। কিংবা বাসার সবাইকে একটা করে ফল দেয়ার কাজটা তাকে দিয়ে করানো যেতে পারে। কারো জন্য উপহার আনলে শিশুকে দিয়ে সেটা দেয়া যেতে পারে। এটা দেখার ফলে শিশু শেয়ারিংয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করবে ও শেয়ার করার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
একটা বিশেষ পরিকল্পনা
দুই সন্তানের মাঝে খেলনা শেয়ার করা নিয়ে অনীহা থাকলে একটা বিশেষ পরিকল্পনা করা যেতে পারে । টসের মাধ্যমে যেকোন এক বাচ্চাকে আগে খেলতে দিন এবং একটা নির্দিষ্ট টাইম ঠিক করে দিন। অন্য বাচ্চাকে বলুন, ঠিক ১০ মিনিট পরে তার খেলার সুযোগ আসবে। এভাবে নিয়মিত করলে একটা সময় পরে আপনা আপনিই শিশুদের মাঝে শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে উঠবে।
শিশুকে তার মতো শেয়ার করতে দিতে হবে
অনেক সময় দেখা যায় শিশু তার সবচেয়ে পছন্দের বস্তুটি বা খেলনাটি কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না। এক্ষেত্রে তার প্রিয় খেলনাটা শেয়ার করতে না চাইলে ওই খেলনাটা আলাদা করে রাখতে পারেন। তার খেলনাগুলো থেকে অন্য যেকোন খেলনা সে শেয়ার করুক। এভাবে নিজের পছন্দ মতো শেয়ার করার মাধ্যমে এক সময় তার মাঝে পুরোপুরি শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে উঠবে।
শিশুর কাছে জানতে চাইতে হবে
যদি কোন শিশু নিজ থেকে কোন কিছু শেয়ার করতে না চায়। তাহলে তাকে বল প্রয়োগ করা বা জোর করা যাবে না। বরং তাকে জিজ্ঞেস করুন, সে তার খেলনা তার কাজিনের সাথে শেয়ার করতে চায় কি না? যদি উত্তর না হয়, তাহলে তাকে আবার জিজ্ঞেস করুন তার সবচেয়ে পুরোনো খেলনাটা সে শেয়ার করতে চায় কি না? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় প্রশ্নে শিশুরা হ্যাঁ-সূচক জবাব দিবে। এরপর ধীরে ধীরে সে শেয়ার করার আনন্দ বুঝতে পারবে এবং একটা সময় নিজে থেকেই শেয়ার করবে।
শিশুকে অনুপ্রাণিত করতে হবে
কাউকে কোন কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করলে সে একই কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। শিশু যদি নিজ থেকে কোন কিছু কারো সাথে শেয়ার করে সেক্ষেত্রে তাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। সে তার কাজিন বা ভাই-বোনের সাথে কোন কিছু শেয়ার করলে তাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। এতে সে শেয়ার করার ব্যাপারে আরো বেশি উৎসাহ পাবে।
শেয়ারিংয়ের গুরুত্ব বোঝাতে হবে
শিশুকে শেয়ারিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করতে হবে। সে যদি তার খেলনা তার কাজিন কিংবা ভাই-বোনের সাথে শেয়ার করে, তাহলে সেও তার কাজিনদের খেলনা নিয়ে খেলতে পারবে, তাহলে তার নিজের খেলনা ও কাজিনদের খেলনাসহ অনেক খেলনা নিয়ে সবাই একসাথে খেলতে পারবে, শিশুকে এভাবে শেয়ারিংয়ের গুরুত্ব বোঝাতে পারেন। তাহলে সে শেয়ারিংয়ের ব্যাপারে আরো বেশি উৎসাহী হবে।
শিশুর সাথে সময় কাটাতে হবে
শিশুর সাথে একসাথে সময় কাটানোর মাধ্যমেও তাকে শেয়ারিংয়ের ধারণা দেয়া যেতে পারে। শিশু কিছু খাওয়ার সময় তার কাছ থেকে চেয়ে খাওয়া যেতে পারে। শিশু কার্টুন দেখার সময় তার কাছে গিয়ে এক সাথে অন্য চ্যানেলে খবর দেখার জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে। এভাবে একসাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে ছোট ছোট কিছু চর্চা তাকে শেয়ারিংয়ের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে!
শেয়ারিং করা একটু অসাধারণ গুণ। ছোট থেকে শিশুর মাঝে শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে উঠলে বড় হয়ে সে একজন আদর্শ ও সফল মানুষ হবে। তার চারপাশ উপভোগ করতে পারবে।
আরো জানতে পড়ুব- সন্তানকে নিজে নিজে হোমওয়ার্ক করতে দিন, গড়ে তুলুন পাঁচটি গুণাবলী।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র-todaysparent
847 total views, 1 views today