শপিং-এ গিয়েছেন বাচ্চার জন্য জামা কিনতে, কিন্তু সে জামা তো কিনলই, সেই সাথে একটা দামী খেলনাও চেয়ে বসল। কিনে দেবেন না বলায় মেঝেতে শুয়ে-বসে এমন কান্না জুড়ে দিল যে, অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস না কিনে সেটাই কিনে দিলেন তাকে। এমন পরিস্থিতিতে বাবা-মা’দের প্রায়ই পড়তে হয়। কী করবেন তাহলে?
১। শিশুকে নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দিন:
শিশুকে প্রতিদিনের কাজ-কর্মের মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দিন। কোন জিনিস তার জন্য উপযুক্ত, কোনটা উপযুক্ত নয় সেটা বুঝতে শেখান।
২। গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া বুঝতে শেখান:
অল্প বয়স থেকেই শিশুকে তার নিছক চাওয়া এবং প্রয়োজনের পার্থক্য বুঝতে শেখান। যে টাকা থেকে তার খেলনা বা জামা কেনা হবে, সেই টাকা থেকেই তার স্কুলের ফিস, টিচারের খরচ দিতে হবে, এগুলো তাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করুন। তাহলে সে নিজে থেকেই সেই বোধ অর্জন করবে।
৩। মাঝে মাঝে পছন্দের জিনিস উপহার দিন:
মাঝে মাঝে নিজ থেকেই তার নানান পছন্দের জিনিস উপহার দিলে আপনার প্রতি তার একটা শ্রদ্ধাবোধ কাজ করবে, সম্পর্কও ভালো হবে। আবদার শিশুর এক ধরণের অধিকারও। তাই সামর্থ্যে থাকলে দিন। হতে পারে, আপনার অসামর্থ্যের সময় সে মেনে নেবে আপনার কথা। ভাববে, পারলে তো দিতই।
৪। যা কিনে দিতে পারবেন না, তার বদলে অন্য কিছু অফার করুন:
হয়তো সে চেয়েছে একটা স্বয়ংক্রিয় খেলনা গাড়ি, কিন্তু এই মূহূর্তে হাতে সেই পরিমাণ টাকা নেই। সেক্ষেত্রে, তাকে অন্য পছন্দের কিছু অফার করুন। সাধারণত, পছন্দের যে কোন কিছুতেই শিশুরা শান্ত হয়।
৫। অর্থের প্রয়োজনীয়তা বোঝান:
শিশুকে সব সময় অর্থের অভাব দেখানো যেমন ঠিক নয়; তেমনি প্রচুর অর্থ আছে, তা দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে এমন কিছুও বুঝতে দেয়া ঠিক নয়। তাকে বোঝান যে, অনেক কিছু কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা আছে, আবার অনেক কিছু কেনার মতো নেই। প্রয়োজনে, অল্প দূরত্বে যাওয়ার সময় রিক্সা ভাড়া না করে ইচ্ছে করেই হেঁটে হেঁটে যান। এমন ছোটখাট অনেক কাজের মাধ্যমে বিলাসীতা করার মানসিকতা থেকে মুক্ত রাখতে পারেন তাকে।
৬। আগে থেকেই ধারণা দিয়ে রাখুন:
শপিং-এ যাওয়ার আগেই তাকে ঠিক করতে বলুন সে কী কিনতে চায়। কিংবা একটার বেশি কিছু কিনে দেবেন না, এমন মানসিক প্রস্তুতির মুখোমুখি করুন। ধরুন, মুদি দোকানে যাচ্ছেন। তাহলে তাকে বলে রাখুন, ঐ দোকানে যা থাকবে তার বাইরে কিছু কেনা হবে না।
৭। ‘এখন নয়, পরে:
তাকে মুখের ওপর ‘না’ না বলে বলতে পারেন, ‘এটা এখন নয়, পরে একসময় কিনব।‘ কিন্তু, তাতে তো তার মন রক্ষা হবে না। মুখ ভার করে থাকবে। সেক্ষেত্রে, ৪ নম্বর পয়েন্ট এপ্লাই করুন, মানে অন্য পছন্দের কিছু কিনতে বলুন।
৮। নরম সুরে বোঝান:
শিশুদের প্রেস্টিজ খুব টনটনে হয়, তাই মারধোর করা বা অন্য লোকের সামনে প্রেস্টিজে লাগে এমন কোন আচরণ তার সঙ্গে না করা উত্তম। তাকে বোঝাতে হলে সুন্দর করে নরম সুরে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে একপাশে ডেকে নিয়ে বোঝাতে হবে। সেক্ষেত্রে, ধৈর্য্যই একমাত্র সম্বল।
৯। সুন্দর করে চাইতে শেখান:
ছোটবেলা থেকেই তাকে কোনকিছু চাইলে সুন্দর করে চাইতে শেখান। কাঁদলে বা লোকজনের সামনে অতিরিক্ত বায়না করলে কিনে দেবেন না, আগেই তা বলে রাখুন। তাকে বলুন যে, সে ভালো ছেলে/মেয়ে; আর যারা ভালো তারা এমন করে না। কোন কিছু বিনয়ীভাবে চাওয়ার অভ্যাস রপ্ত হয়ে গেলে কখনোই আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।
১০। জেদের সময় কৌশল অবলম্বন করুন:
কোন কিছু না পেলে শিশুরা অতিরিক্ত কান্না করে বা মাথা কুটে কেন? তারা বুঝতে চায়, এমন আচরণে বাবা-মা তার চাওয়া পূরণ করেন কিনা। একবার করলে সেটাকে পরবর্তীতে তারা হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে নেয়। এরকম মূহূর্তে অন্য কোন কৌশলে তাকে শান্ত করতে হবে। তবে, মনে রাখতে হবে, মিথ্যে কোন আশ্বাস তাকে দেয়া যাবে না।
১১। শিশুকে একটি ব্যাংক কিনে দিন:
তাকে একটা ছোটখাট ব্যাংক কিনে দিয়ে তাতে টাকা জমানোর কথা বলতে পারেন। এই কাজটা সে খুব উৎসাহী হয়ে করতে পারে। এতে সে সঞ্চয়ীও হবে, আবার নিজের জমানো টাকা থেকেই এটা-ওটা কিনতে চাইবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
777 total views, 2 views today