রসায়ন কী? অথবা যদি বলি রসায়ন কেন? এর উত্তর হয়ত আমাদের সবার জানা নেই। এবং রসায়নের আসল মজাটা কোথায় সে ব্যাপারেও আমাদের কোন জানা শোনা নেই বলেই আমরা যেমন রসায়নের ব্যাপারে কোন আগ্রহ বোধ করি না ঠিক তেমনই আমাদের শিশুদের বেলায়ও হয়তো এই আগ্রহটা জাগিয়ে তুলতে পারছি না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বা স্কুলে থাকাকালীন সময়েই যদি আমাদের শিশুদের ভিতর রসায়নের মজাটা ধরিয়ে দিতে পারি তাহলে গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় তার অযথা নষ্ট সময় নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না।
চাইল্ড এডুকেশনে অন্যান্য বিষয়ের মত রসায়নও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ‘রস+আয়ন= রসায়ন’ এটি ছোট বেলায় সবাইকে শেখানো হয় থাকে। কিন্তু এর পরে আর সামনে আগানো যাচ্ছে না কেন? নিশ্চয় রসায়নে বিরক্ত হয়ে পরি। তাহলে ছোটদের জন্য আমরা কিভাবে রসায়ন কে এগিয়ে রাখতে পারি চলুন এই ব্যাপারে একটু জেনে আসা যাক-
সন্তানকে রসায়নের বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখতে দিন-
বর্তমানে ছোটদের জন্য টেলিভিশন, ইউটিউব কিংবা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে খুব সহজে আনন্দের সাথে রসায়ন কিভাবে শেখা যায় এ নিয়ে বিভিন্ন শো বা প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। আপনি সেখান থেকে আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত কোন প্রোগ্রাম বাছাই করে তাকে দেখতে দিতে পারে।
বাচ্চারা দেখা যায় অনেক সময় টেলিভিশন কার্টুন দেখা কিংবা মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলে অযথা সময় নষ্ট করছে। ঠিক তখনই ধীরে ধীরে তাকে ওই সময় যদি এই ধরনের রসায়ন ভিত্তিক প্রোগ্রামের সাথে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন তাহলে সেটি হবে দারুণ একটা ব্যাপার। এতে করে সে চমৎকার কিছু শিখতে পারবে এবং অযথা সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকবে।
সেক্ষেত্রে আপনি ইউটিউবে Science Max, OnnoRokom BigganBaksho কিংবা Ducksters, sciencekids এই ওয়েবসাইট গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
সায়েন্স কিট হতে পারে সেরা মাধ্যম-
বাচ্চাদের রসায়নে আগ্রহী করে তোলার জন্য অন্যতম সেরা মাধ্যম হতে পারে তার নিজস্ব রসায়ন সায়েন্স কিট বা সায়েন্স বক্স।
রসায়নের সায়েন্স কিটের মাধ্যমে সে যেমন তুমুল ভাবে খেলায় মেতে উঠবে ঠিক তেমনই রসায়ন নীতি ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া শিখতে পারবে একদম হাতে কলমে।
চিন্তার কথা হচ্ছে এর জন্য আপনাকে আলাদা কোন স্পেস ক্রিয়েট করতে হবে না কিংবা কোন রাসায়নিক ল্যাবরেটরিও তৈরি করতে হবে না। শুধু মাত্র আপনার সন্তানের পড়ার টেবিলই যথেষ্ট এই সায়েন্স কিটের এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য।
রসায়নের সায়েন্স কিটের ক্ষেত্রে আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত কিট হিসেবে তার হাতে তুলে দিতে পারেন বাংলাদেশের বাংলা ভাষার একমাত্র সায়েন্স কিট “অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্সের রসায়ন রহস্য” সায়েন্স কিট। অথবা ইংলিশ ভার্সনের ‘Mystery of Chemistry’ সায়েন্স কিটটিও হতে পারে তার বিশাল এক ল্যাবরেটরি।
ঘরে বসে মজাদার রসায়ন পরীক্ষাগুলি চেষ্টা করুন-
রসায়নের এমন কিছু এক্সপেরিমেন্ট রয়েছে যেগুলো আমাদের বাড়িতে আমাদের আশেপাশেই রয়েছে। এই এক্সপেরিমেন্ট গুলো করতে আমাদের আলাদা কোন উপাদান লাগবে না। আমাদের বাড়িতেই রয়েছে এর সমস্ত উপাদান ও উপকরণ।
যেমন ধরুন বিজ্ঞানবাক্সের রসায়ন রহস্যের একটি এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে লাভা ল্যাম্প। এই লাভা ল্যাম্প এক্সপেরিমেন্ট করতে উপকরন হিসেবে লাগবে একটি স্বচ্ছ কাঁচের পাত্র, পানি, সয়াবিন তেল এবং ফুড কালার ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট। এই কয়টা উপকরন থাকলেই কিন্তু লাভা ল্যাম্প এক্সপেরিমেন্টটি করে ফেলা যাবে।
এতে করে আপনার সন্তান রসায়নের বাস্তব উদাহরন নিজের আশে পাশেই খুঁজে পাবে এবং রসায়ন তার কাছে খুব মজার ও জীবন্ত হয়ে ধরা দিবে।
মজার মজার রসায়ন বইয়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করুন
বর্তমানে এমন অনেক রসায়নের বই আছে যেগুলো খুবই আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক। রসায়নের এই বই গুলো সাজানো থাকে গল্পাকারে ও আকর্ষণীয় ভাবে। তাই অন্যান্য বইয়ের মত এই বই গুলো পড়তে বাচ্চারা পড়তে বিরক্ত বোধ করে না।
এবং এই বই গুলোতে রসায়নের ব্যাখ্যা গুলো এমন ভাবে দেয়া হয়েছে যে বাচ্চারা বই পড়ে পড়েই এক্সপেরিমেন্টগুলো খেলার ছলে করে ফেলতে পারে খুবই চমৎকার ভাবে।
যেমন ধরুন বিজ্ঞানবাক্সের রসায়ন রহস্য সায়েন্স কিটে এক্সপেরিমেন্টের একটি বই রয়েছে। এই বইয়ে সবগুলো এক্সপেরিমেন্ট কিভাবে করতে হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া আছে। এবং বইয়ে দেয়া এক্সপেরিমেন্ট গুলোর জন্য যে উপাদান প্রয়োজন হবে সেগুলো দেয়া আছে এই বক্সে। এতে করে বাচ্চারা বই পড়ে পড়ে কারো সাহায্য ছাড়াই করে ফেলতে পারে সব গুলো এক্সপেরিমেন্ট।
রসায়নের জন্য তাদের কৌতূহল প্রসারিত করুন-
সর্বশেষ পয়েন্ট হিসেবে বলা যায় রসায়নে আগ্রহী করে তুলতে আপনার সন্তানকে কৌতূহলী করে তুলুন। শুধু স্কুল কিংবা ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাকে কৌতূহলী করে গড়ে তুলতে আপনি তাকে বিভিন্ন সায়েন্স মিউজিয়ামে নিয়ে যেতে পারেন।
যদি সম্ভব হয় তাকে বিভিন্ন ধরনের সায়েন্স বা রসায়ন রিলেটেড ইভেন্টে নিয়ে যেতে পারেন। কিংবা নিতে পারেন কোন সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে।
বিভিন্ন ধরনে সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল, ইভেন্ট কিংবা সায়েন্স মিউজিয়ামে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
- এতে করে বাচ্চারা রসায়নের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারনা পাবে যেটা সম্পর্কে সে এর আগে কিছুই জানতো না।
- এর মাধ্যমে বাচ্চারা জানতে পারবে যে রসায়ন শুধুমাত্র কোন তাত্ত্বিক বিজ্ঞান নয়। বাস্তব বিশ্বে এর বিশাল অবস্থান রয়েছে।
- বাচ্চারা সায়েন্স ফেয়ারের মাধ্যমে রসায়নের কোন এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে সরাসরি এর কোন গবেষকের মাধ্যমে বিস্তারিত ও বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
আশা করি আমাদের এই টিপস গুলো কাজে লাগবে রসায়নে আপনার সন্তানকে আগ্রহী করে তুলতে। তবে তাকে বেশি আগ্রহী করে তুলতে আপনি তাকে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে সহযোগিতা করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনি অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্সের রসায়ন রহস্য কিটের সাহায্য নিতে পারেন।
যেখানে অনেক গুলো এক্সপেরিমেন্টের জন্য দেয়া আছে গাইড বই, ভিডিও টিওটোরিয়াল এবং অনেক অনেক ইকুইপমেন্ট।
আরো পড়তে পারেন- সন্তানকে কৌতূহলী করে কেন গড়ে তুলবেন? জানুন কিছু টিপস।
আপনার সন্তানের ভেতর কৌতূহল জাগাতে এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে বিজ্ঞানবাক্সের এক্সপেরিমেন্টগুলি দারুণ কাজে লাগতে পারে।
এখান থেকে দেখুন সবগুলি বিজ্ঞানবাক্স।
998 total views, 1 views today